ভরসা দিয়েও লাভ হল না, নন্দীগ্রামে শুভেন্দুর সভায় অপ্রত্যাশিত ‘বিপর্যয়’

মাইক হাতে নিয়ে শুভেন্দু বলতে শোনা গেল, "আমি আছি তো, আমি শুভেন্দু। আমার ওপর ভরসা রাখুন। সব সামলে নেব।" কিন্তু বাগে আসল না পরিস্থিতি। সভাস্থল থেকে বেরিয়ে যেতে দেখা গেল বিক্ষুব্ধ প্রচুর কর্মী সমর্থককে।

ভরসা দিয়েও লাভ হল না, নন্দীগ্রামে শুভেন্দুর সভায় অপ্রত্যাশিত 'বিপর্যয়'
নিজস্ব চিত্র
Follow Us:
| Updated on: Jan 08, 2021 | 6:17 PM

পূর্ব মেদিনীপুর: বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর নন্দীগ্রামের (Nandigram) মাটিতে তাঁর প্রথম সভা ছিল। এই সভাতেই এক লক্ষ মানুষের ভিড় হবে বলে চ্যালেঞ্জ ছু়ড়েছিলেন শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari)। বিরাট মঞ্চ, চর্তুদিকে সবুজ-গেরুয়া-সাদা বেলুন, পদ্ম পতাকা, কয়েক হাজার মানুষের ভিড় – শুভেন্দুর এই সভা আক্ষরিক অর্থেই যেন ‘ঐতিহাসিক’ করার মরিয়া প্রচেষ্টা ছিল বিজেপির। । কিন্তু শুরুতেই তাল কাটল! এদিনের সভাতেই বিজেপিতে যোগদানের কথা ছিল এলাকার এককালের দাপুটে তৃণমূল নেতাদের। আর তা ঘিরেই বাধল গোল। সভায় উপস্থিত কর্মী সমর্থকরা বিরক্ত হলেন, হল চেঁচামেচি, তৈরি হল বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি। হেভিওয়েট নেতারা পরিস্থিতি সামলানোর চেষ্টা করলেন, মাইক হাতে নিয়ে শুভেন্দুকে বলতে শোনা গেল, “আমি আছি তো, আমি শুভেন্দু। আমার ওপর ভরসা রাখুন। সব সামলে নেব।” কিন্তু বাগে আসল না পরিস্থিতি। সভাস্থল থেকে বেরিয়ে যেতে দেখা গেল বিক্ষুব্ধ প্রচুর বিজেপি কর্মী সমর্থককে।

বেলা সওয়া তিনটে। মঞ্চে তখন বক্তৃতা রাখছিলেন কৈলাস বিজয়বর্গীয়। কর্মী সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক উদ্দীপনা। মঞ্চে হেভিওয়েট নেতারা। আর মাইক হাতে ‘পাচার’ ইস্যুকে হাতিয়ার করে কৈলাস চড়াচ্ছেন সুর। আচমকাই গোটা আবহে যেন ছন্দপতন! কৈলাস বলতে শুরু করলেন, “কী হয়েছে ওখানে? কী হয়েছে? আপনারা সবাই শান্ত হন। সব ঠিক হয়ে যাবে।” মঞ্চের বাঁ দিকে তখন ব্যাপক গোলমাল। চিত্র সাংবাদিকদের ক্যামেরার সঙ্গে সঙ্গে সভাস্থলে উপস্থিত সকল কর্মী সমর্থকদেরই ‘ফোকাস’ তখন সেদিকেই।

অনুষ্ঠানের সঞ্চালক হঠাৎ মাইক নিয়ে ‘জয় শ্রী রাম’ ধ্বনি দিতে থাকেন। আসলে সভাস্থলে উপস্থিত কর্মীদের দৃষ্টি ঘোরাতেই আপ্রাণ প্রয়াস চালাচ্ছিলেন তিনি। চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ান শুভেন্দু অধিকারী। সঞ্চালকের হাত থেকে মাইক নিয়ে বলেন, “আমি শুভেন্দু বলছি, আমার ওপর ভরসা রাখুন।” বিষয়টা তখনও আঁচ করা যায়নি। দ্রুত বক্তৃতা শেষ করেন কৈলাস। তারপর মিনিট পনেরো দিলীপ আর তারপরে মেরেকেটে পাঁচ-সাত মিনিট বক্তৃতা রেখেছেন শুভেন্দু। আশাহত কর্মী সমর্থকরাই। আসলে তখন মঞ্চের বাঁ দিকে যে ব্যাপক গোল!

বিজেপি সূত্রেই জানা যায়, এদিন শুভেন্দুর এই সভায় যোগ দেওয়ার কথা ছিল নন্দীগ্রামের এককালের দাপুটে তিন তৃণমূল নেতার। নন্দীগ্রাম ১ নম্বর ব্লকের অঞ্চল সভাপতি মেঘনাথ পাল, খেজুরির বিধায়ক রণজিৎ মণ্ডল, আরেক অঞ্চল সভাপতি অশোক করণ। কৈলাস যে সময় মঞ্চে বক্তৃতা রাখছিলেন, তাঁরা সভাস্থলে প্রবেশ করেছিলেন। অভিযোগ, তখনই বিজেপির বেশ কয়েকজন কর্মী সমর্থক বাধা দেন। গোলমাল বাধে সেখানেই। শেষ পর্যন্ত যা জিইয়ে থাকে। আসলে এই তিন নেতার বিরুদ্ধে বিজেপির একাংশের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ। অভিযোগ, তৃণমূলে থাকাকালীন তাঁরা বিজেপি কর্মীদের ওপর ব্যাপক অত্যাচার চালিয়েছেন। আর তাঁদেরকেই আজ নেতাকে হিসাবে মেনে নিতে পারছেন না পুরনো বিজেপি কর্মীদের একাংশ।

আরও পড়ুন: কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে সর্বদলীয় প্রস্তাব, বিধানসভায় বিশেষ অধিবেশন

শুভেন্দু ড্র্যামেজ কন্ট্রোলের চেষ্টা করেছিলেন। বলেছেন, “অনেকে সভা ভণ্ডুল করার চেষ্টা করছে।” আসলে গোল যে তাঁর দলের অন্দরেই, তাই ঢাকতে চেয়েছেন তিনি, মত রাজনৈতিক মহলের।  যেদিন শুভেন্দু অধিকারী মেদিনীপুরের সভায় বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন, সেদিনও রাজ্যের একাধিক জায়গায় বিক্ষোভ হতে দেখা গিয়েছিল। রাজনৈতিক মহলের ব্যাখ্যা, শুভেন্দুর বিজেপি-আগমন নিয়ে দলেরই অন্দরে চাপা ক্ষোভ ছিল। শুভেন্দুকে মাইক হাতে আশ্বস্ত করতে হয়েছিল, “আমি কর্মী হয়েই থাকব, নেতারা বললে পতাকাও লাগাব।” ‘একনায়কতন্ত্র’ ছাপ গা থেকে ঝেড়ে ফেলতেই শুভেন্দু একথা বলেছিলেন বলে মনে করেন রাজনীতির কুশীলবরা। তারপর একের পর এক তৃণমূল নেতা, বিধায়কদের বিজেপি-যোগ যে আদি বিজেপির মনে অভিমান তৈরি করছে, তা অনেকেই মনে করতেন। এদিন তারই যেন বহিঃপ্রকাশ ঘটল।

মনে করা হয়েছিল, এই মঞ্চ থেকেই প্রাক্তন নেত্রীকে একের পর এক বাণে বিদ্ধ করবেন কাঁথির ভূমিপুত্র। নন্দীগ্রামের এই মঞ্চ থেকে উঠে আসবে বিজেপি নতুন স্লোগান। কিন্তু তেমনটা হল না! বরং যে ‘ঐতিহাসিক’ সভার আহ্বায়ক শুভেন্দুই পেলেন না বলবার সুযোগ। রাজনৈতিক মহলের ব্যাখ্যা, নন্দীগ্রামের সভামঞ্চকে শাসকদলের কাছে একটি চ্যালেঞ্জ হিসাবে তুলে ধরতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তা যে এইভাবে ‘ফ্লপ’ হবে আঁচও করতে পারেননি শুভেন্দু।