৭৬ শতাংশ নম্বর পেয়ে জেলায় ইতিহাসে প্রথম স্নাতক রমনিতা, দেখছেন শবর-সমাজ বদলের স্বপ্ন!

৭৬ শতাংশ নম্বর নিয়ে পাশ করেছেন তিনি। শিক্ষিকা হতে চান রমনিতা। চান, তাঁরই সমাজ অর্থাত্ শবরদের মধ্যে শিক্ষার আলো পৌঁছে দিতে।

৭৬ শতাংশ নম্বর পেয়ে জেলায় ইতিহাসে প্রথম স্নাতক রমনিতা, দেখছেন শবর-সমাজ বদলের স্বপ্ন!
বাবা-মায়ের সঙ্গে রমনিতা
Follow Us:
| Updated on: Dec 07, 2020 | 11:23 AM

পুরুলিয়া: ইটে গাঁথা টালির চাল চুঁইয়ে বৃষ্টির ছিটে ঢোকে ঘরে। রোদও এসে পড়ে চৌকির ওপর। আর সেই এক চিলতে ফাঁকা দিয়েই অন্তহীন গোটা আকাশ দেখেন রমনিতা। দেখেন, আকাশছোঁয়ার স্বপ্নও! সেই স্বপ্ন কিছুটা হলেও ছুঁয়ে ফেলেছেন তিনি। জেলার মধ্যে প্রথম ৭৬ শতাংশ নম্বর নিয়ে ইতিহাসে প্রথম স্নাতক হলেন শবরকন্যা রমনিতা শবর (Ramanita Sabar)।

বাবা মহাদেব শবর পেশায় চাষি। যা আয় করেন, তা ফুরিয়ে যায় সংসারের চাল নুন কেনার গার্হস্থ্য অনুশাসনেই। কিন্তু খাওয়া জুটুক আর না জুটুক, মেয়েকে পড়িয়ে গিয়েছেন সাধ্যমতন। মেয়ের মধ্যে প্রথম থেকেই একটা অদ্ভূত ব্যাপার লক্ষ্য করেছিলেন তিনি। অনান্য বাচ্চারা যখন খেলাধূলোর মত্ত থাকত, তখনও অন্যদের থেকে বই জোগাড় করে পড়াশোনা করত মেয়ে। বাবা বুঝেছিলেন কী চায় মেয়ে! রমনিতাও চেয়েছিলেন ‘বড়’ হতে। বড় অর্থাত্ পড়াশোনা করে খেটে খাওয়া বাবা-মায়ের মুখে হাসি ফোটানোর মধ্যেই যে তাঁর বড় হওয়ার স্বার্থকতা। আজ তিনি সফল।

মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিকে ভালো নম্বর নিয়ে পাশ করার পর পটমদা ডিগ্রি কলেজে ইতিহাসে অনার্স নিয়ে ভর্তি হন। ৭৬ শতাংশ নম্বর নিয়ে পাশ করেছেন তিনি। শিক্ষিকা হতে চান রমনিতা। চান, তাঁরই সমাজ অর্থাত্ শবরদের মধ্যে শিক্ষার আলো পৌঁছে দিতে। আজও যে তাঁদের সমাজে অনেকেই নিরক্ষর, তা কুঁড়ে খায় তাঁকে। পিছিয়ে পড়া জনজাতির হয়ে কাজ করতে চান রমনিতা। বলেন, “আজ কিছুটা হলেও স্বপ্নের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। তবে এখনও অনেক কাজ বাকি। এই তো সবে পথ চলা শুরু হল।”

আরও পড়ুন:  উত্তরকন্যা অভিযানের শুরুতেই অশান্তির আঁচ, নাগরাকাটায় যুব মোর্চা কর্মীদের আটকাল পুলিস!

মেয়ের সাফল্যে খুশি বৃদ্ধ দম্পতি। এতটাই খুশি যে কথা বলতে গিয়ে চিকচিক করে উঠছে চোখের কোণ। মা বেহুলা শুধু বললেন, “ও বড় হোক, আরও অনেক বড় হোক।” বলেই মেয়েকে বুকে টেনে নিলেন  ‘রত্নগর্ভা’।