Purulia: সরস্বতী পুজোর জন্য ৮০০০ টাকা চাঁদা! দিতে না পারায় ক্লাবের ছেলেরা উঠিয়ে দিল স্কুল
Purulia School: সেখানেই গত পাঁচ বছর ধরে নিচের তলায় স্কুলটি চলতে থাকে। সেই কমিউনিটি হলে একটি ঘরে স্থানীয় একটি ক্লাবকে ঘর দেওয়া হয়। সেই ক্লাবের সঙ্গেই প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষকের চাঁদা নিয়ে সমস্যা শুরু হয় বলে অভিযোগ।

পুরুলিয়া: শাসক বদলেছে। প্রথমে ছিল লাল। পরে হয়েছে সবুজ। কিন্তু যাযাবরের মতো ঘুরে বেড়াচ্ছে একটা স্কুল। বাম আমলে গাছের তলায় কখনও রাজবাড়ির খামারে পড়াশোনা হলেও, তৃণমূল আমলে জুটেছিল পাকা ছাদ। কিন্তু তাও পাকাপাকি হল না। কেন? আসলে প্রধান শিক্ষক দিতে পারেনি সরস্বতী পুজোর চাঁদা। অভিযোগ, তারপরই ধেয়ে এল হুমকি ক্লাবের তরফে। কিন্তু কত টাকা চেয়েছিল ক্লাব? প্রধান শিক্ষকের দাবি, আট হাজার টাকা ক্লাবের ছেলেরা চায়। যা দেওয়া তাঁর কাছে অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তার ফলস্বরূপ উঠে যেতে হল গোটা স্কুলকে।
তৃণমূল কাউন্সিলর শীলা চট্টোপাধ্যায় শনিবার জানিয়েছিলেন, “এর আগে কখনো স্কুলের শিক্ষকদের সঙ্গে কোনও সমস্যা হয়নি। এই শিক্ষক আসার পরেই ঝামেলা শুরু হয়।” তারপর আবার বলেন, “আমি ক্লাবের ছেলেদের মোটা টাকা চাঁদা দিয়ে থাকি। আমার পাড়ার পুজো,টিচার শুধু আইন নিয়েই পড়ে আছে,আইন দেখাচ্ছে,পাড়ার লোককে বাদ দিলে হয়? ছেলেদের রাগ স্বাভাবিক,আমিতো টিচারকে দেখিনি এবারে দেখতে হবে…।” তা বলে আট হাজার টাকা? একজন শিক্ষকের পক্ষে কি সম্ভব এত টাকা দেওয়া? এই উত্তরে যদিও রবিবার সুর নরম কাউন্সিলরের। তিনি বলেন, “না এটা তো শুনিনি। আমি পরে শুনলাম এত টাকা চাঁদা চাইছে। দেখছি আলোচনা করে…।” যদিও, প্রধান শিক্ষক ফুলচাঁদ মাহাতো দাবি করেছেন, তিনি চার হাজার টাকা দিয়েছেন। কিন্তু বাকি চার হাজার টাকা দিতে না পারায় উঠে যেতে হয়েছে পড়ুয়াদের নিয়ে।
জেলা বিজেপি সহ-সভাপতি গৌতম রায় বলেন, “এটা দুঃখজনক ঘটনা। সরস্বতীর পুজোর নামে একটা স্কুল বন্ধ হবে আমরা চাইছি প্রশাসন হস্তক্ষেপ করুন।” ঝালদা পৌরসভার পৌরপ্রধান বলেন, “আমি পরশু দিন দু’পক্ষকে ডেকেছি। আর মাস্টার কিছু বললে তাঁকে জিজ্ঞাসা করুন উনি স্কুলে আদৌ পুজো করেন?”
কোন স্কুলে এত কাণ্ড?
পুরুলিয়ার ঝালদা পৌরসভার ৩নম্বর ওয়ার্ডের ‘গড়কুলি প্রাথমিক বিদ্যালয়’। বর্তমানে এই স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ৪১। স্কুলে একজন শিক্ষিক ও একজন শিক্ষিকা রয়েছেন। বিদ্যালয়ের নিজস্ব কোনও ভবন নেই। দীর্ঘদিন ধরেই কখনো গাছের তলায়,কখনো বা রাজবাড়ির খামারবাড়িতে চলতো স্কুল। এরপর ২০০০ সাল থেকে পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের দ্বিতল কমিউনিটি হলের উদ্বোধন হয়।
সেখানেই গত পাঁচ বছর ধরে নিচের তলায় স্কুলটি চলতে থাকে। সেই কমিউনিটি হলে একটি ঘরে স্থানীয় একটি ক্লাবকে ঘর দেওয়া হয়। সেই ক্লাবের সঙ্গেই প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষকের চাঁদা নিয়ে সমস্যা শুরু হয় বলে অভিযোগ। শেষে বাধ্য হয়ে ঠিকানা বদল করে ঝালদা ৩নং চক্রের অবর প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শকের দফতরে এখন স্কুলটি চলছে। সেখানেই রান্না হচ্ছে মিড ডে মিল।
গতকাল প্রধান শিক্ষক ফুলচাঁদ মাহাতো বলেন, “দীর্ঘদিন স্কুল চলছে। এখন ক্লাবের ছেলেরা বলছে স্কুল চলতে দেবে না। প্রচুর চাঁদা চাইছে। বলছে চাঁদা দিতে না পারলে খালি করে দেন।” আবার ক্লাব সদস্য উত্তম কয়েল বলেন, “এখানে ক্লাব আছে। স্কুল নয় কোনও। আগে তো মাঠেই হত। আমরাই বলেছিলাম কমিউনিটি হলে এসে স্কুল চলুক। আর সরস্বতী পুজোর চাঁদা চেয়েছি। কিন্তু জোর-জবরদস্তি করা হয়নি। আগের মাস্টারের সঙ্গে কোনও ঝামেলা হয়নি। অথচ এই মাস্টারের সঙ্গে যতগণ্ডগোল।”





