ব্ল্যাক থার্স ডে! বিজেপির ‘চক্রব্যূহে’ আটকা পড়ল কি তৃণমূল?

ভাঙন আগেও হয়েছে তৃণমূলে। লোকসভা নির্বাচনের আগে মুকুল রায়, অর্জুন সিংয়ের মতো স্তম্ভ চলে গিয়েছে। কিন্তু সহজেই ধাক্কা সামলে নিতে পারেছে তৃণমূল

ব্ল্যাক থার্স ডে! বিজেপির 'চক্রব্যূহে' আটকা পড়ল কি তৃণমূল?
ফাইল চিত্র
Follow Us:
| Updated on: Dec 18, 2020 | 11:38 AM

কলকাতা: দিনের শেষে তৃণমূল কি চক্রব্যূহে আটকে পড়ল! রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজা যে অহেতুক নয়, বৃহস্পতিবার দিনভর রাজনৈতিক টানাপোড়েনের টানটান চিত্রনাট্যই তা বলে দিচ্ছে। একুশের নির্বাচনের আগে এক অভূতপূর্ব পরিস্থিতির মুখে দাঁড়িয়ে তৃণমূল। বিশেষ করে আজকের দিনটি আরও তাৎপর্যপূর্ণ। একদিকে শুভেন্দু অধিকারীর দল ছাড়া, অন্যদিকে ৩ আইপিএস-কে তলব করে কেন্দ্রের ‘চপেটাঘাত’।

জল্পনা অনেক দিন ধরে চললেও বৃহস্পতিবার দলের সঙ্গে প্রায় দু’দশকের সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন শুভেন্দু অধিকারী। মনে করা হচ্ছে, দু’দিন পরে অমিত শাহের মঞ্চেই গেরুয়া বসনে দেখা যেতে পারে তাঁকে। শুভেন্দুর দল ছাড়ার খবর মিলতেই ইতিউতি আরও ‘বেসুরো’ কণ্ঠ শোনা গিয়েছে। আজই আসানসোলের পুর-প্রশাসক জিতেন্দ্র তিওয়ারি দল ছেড়েছেন। সরকারি পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন দীপ্তাংশু চৌধুরী। আরও বেসুরো হয়েছেন বিক্ষুব্ধ সুনীল মণ্ডল। শিলিগুড়ি থেকে কাঁথি ‘দলে দলে’ দল ছাড়ার খবর মিলেছে তৃণমূল থেকে। সম্প্রতি অতীতকালে এমন দিন তৃণমূলের এসেছে কিনা মনে করতে পারছেন না দুঁদে রাজনীতিবিদরাও।

এ তো গেল অন্দরের খবর। কিন্তু বাইরেও, যে সাঁড়াশির চাপ এ দিন কাকতালীয় ভাবে কেন্দ্র দিয়ে রাখল, তা রাজনৈতিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। এ দিন দুপুরে তিন আইপিএস অফিসার রাজীব মিশ্র, ভোলানাথ পাণ্ডে এবং প্রবীণ ত্রিপাঠিকে ভিন রাজ্যের বদলির নির্দেশ আসে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের থেকে। নড্ডার কনভয় হামলার পর মুখ্যসচিব এবং আইপিএস অফিসারদের তলব এলেও রাজ্য সরকার কৌশলগতভাবে এড়িয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সংবিধানের নিয়ম দেখিয়ে আইপিএস বদলি করেছে কেন্দ্র। টুইটে কেন্দ্রের এই পদেক্ষেপের তীব্র সমালোচনা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

ভাঙন আগেও হয়েছে তৃণমূলে। লোকসভা নির্বাচনের আগে মুকুল রায়, অর্জুন সিংয়ের মতো স্তম্ভ চলে গিয়েছে। কিন্তু সহজেই ধাক্কা সামলে নিতে পেরেছে তৃণমূল। গত নির্বাচনে ভোট ব্যাঙ্ক সেভাবে হাতছাড়া হয়নি তাদের। বিজেপির যত ভোট এসেছে বাম ও কংগ্রেসের ঘর থেকেই। কিন্তু একুশে নির্বাচনের সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে তৃণমূলের ‘তাসের ঘরের’ মতো ভেঙে পড়া অন্তত এক দশকের ক্ষমতায় এমন ঘটনা নজিরবিহীন। এ প্রসঙ্গে কংগ্রেসের কটাক্ষ, অন্যের ঘর পুড়িয়ে এতদিন নিজের ঘর গুছিয়েছে তৃণমূল। আজ সেই আঁচেই তাদের ঘর পুড়ছে।

আরও পড়ুন- শুভেন্দু জিতেনের ইস্তফা, কালীঘাটে তড়িঘড়ি বৈঠক মমতার!

একুশের আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চৌষট্টি খোপে কোণঠাসা করতে বিজেপির যে রোডম্যাপ তৈরি, তাদের এক একটি চালেই স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাই, শীতের চাদরে মাথা ঢাকতে গিয়ে পা বেরিয়ে যাচ্ছে তৃণমূলের। বিমল গুরুংকে প্রচ্ছন্ন প্রশয় দিয়ে পাহাড়ে ভোটব্যাঙ্ক এককাট্টা করার চেষ্টা করে তৃণমূল। অন্যদিকে হাতে থাকা অনিলপন্থীদের সমর্থন হাতছাড়া হওয়ার জোগাড়। অধিকারী দুর্গকে টলাতে মাঠে নামানো হয়েছে অখিল গিরিকে। কতটা সম্ভব প্রশ্ন রয়েছেই। দলের ভাঙনের সঙ্গে রয়েছে কয়লা পাচার কাণ্ডে সিবিআইয়ের তৎপরতা, রাজ্যপালের নিয়ম করে সমালোচনা। এ সব কিছু নিয়েই চক্রব্যূহে দাঁড়িয়ে শাসক দল। সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কি ব্যূহ ভেদ দলকে বার করতে পারবেন, তার উত্তর হয়তো মিলবে একুশের নির্বাচনে।