‘২০১৬-তেই বলেছিলাম…’, রোববারে বিস্ফোরণ ঘটালেন অভিষেক

উঠে এল তৃণমূলের উচ্চস্তরীয় মহলে আস্থা-অনাস্থার নানা কথা।

'২০১৬-তেই বলেছিলাম...', রোববারে বিস্ফোরণ ঘটালেন অভিষেক
ফাইল চিত্র
Follow Us:
| Updated on: Jan 24, 2021 | 4:21 PM

দক্ষিণ ২৪ পরগনা: কাতারে কাতারে মানুষ, কালো মাথার ভিড়ে ছেয়ে গিয়েছে গোটা সভাস্থল। কুলতলি, জয়নগর দুই বিধানসভা এলাকার মানুষ ভিড় করেছেন মাঠে। সকলেই প্রত্যাশা করেছিলেন সভামঞ্চ থেকে বিজেপির বিরুদ্ধে সুর চড়াবেন তৃণমূল যুব নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি তা করলেনও বটে, তবে তার কথাতে প্রকাশ্যে চলে এল তৃণমূলের তৎকালীন প্রথম সারির নেতাদের ওপরই তাঁর আস্থা হারানোর বিষয়টিই! আঁচ তিনি করেছিলেন ২০১৬-র বিধানসভা নির্বাচনের সময়ই, সে কথাও বললেন তিনি। কী ঘটেছিল দলের অন্দরে? অভিষেকের কথায়, “আমি বলেছিলাম ২০১৬ সালেই। যারা পার্টির ভাব মূর্তি নষ্ট করেছে তাদের সরিয়ে দিতে বলেছিলাম।”

কাদের কথা বলেছিলেন অভিষেক? কী ঘটেছিল তৃণমূল অন্দরে? শুভেন্দু অধিকারী, শোভন চট্টোপাধ্যায়ের বিজেপিতে যোগদান, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্ত্রিত্ব থেকে ইস্তফার পর সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে অভিষেকের এই মন্তব্য অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে।  রাজনীতির অন্দরমহলে কান পাতলে শোনা যায়, ২০১৬ সালে শোভন চট্টোপাধ্যায়, শুভেন্দু অধিকারীদের অতিরিক্ত গুরুত্ব দেওয়ার ব্যাপারে আপত্তি তুলেছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তা নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর মতবিরোধ তৈরি হয়।

বিষয়টি এমন পর্যায়ে পৌঁছয়, যে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত থাকেন অভিষেক। বিবাদ এতটাই চরমে ওঠে, যে রেড রোড থেকে অভিষেকের সব কাটআউট খুলে দেওয়ার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজনীতির দুনিয়া থেকে কার্যত অন্তরালে চলে যান অভিষেক। প্রায় ৬ মাস চলে মান অভিমানের পালা। পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অনেক চেষ্টায় অভিষেককে ধীরে ধীরে সক্রিয় করে তোলেন ফের।

আজ যখন, সেই শুভেন্দু, শোভনই যুযুধান প্রতিপক্ষ, তখন একেবারে প্রকাশ্যেই সে প্রসঙ্গ উত্থাপিত করেন অভিষেক। শুভেন্দুকে বিঁধেই বলেন, “যারা পরিবারতন্ত্র নিয়ে কথা বলছে, তার নিজের পরিবারের লোকেরা ক্ষমতা ভোগ করছে। চ্যালেঞ্জ দিচ্ছি, এটা সুনিশ্চিত করা উচিত তোমাদের পরিবার থেকে এক জনই রাজনীতি করবে। তা হলে কালই আমি রাজনীতি ছেড়ে দেব।”

সুর চড়ান শোভন চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধেও। বলেন, “এতদিন বাদে ওঁর ঘুম ভেঙেছে। ওঁ নাকি আমায় জিতিয়েছিল। তোয়ালের তলায় টাকা নিয়েছিলে। আবার আমার সঙ্গেই দেখা করাবে বলেছিলে। আমার তো মানহানির মামলা করা দরকার।” বিজেপিকে বিঁধতে স্লোগান তোলেন অভিষেক, “ওদের বুকে সভারকার- নাথুরাম। আমাদের বুকে সুভাষ চন্দ্র আর ক্ষুদিরাম।”

‘ভাইপো তোলাবাজ’ স্লোগানের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়ে এদিন অভিষেক বলেন, “ভাইপো তোলাবাজ, নাকি ভাইপোর জন্য তোলাবাজি বন্ধ হয়ে গেছিল?” এক্ষেত্রে যে শুভেন্দুকেই নিশানা করেছেন তিনি, তা এক্কেবারে অরাজনৈতিক ব্যত্ত্বিত্বের কাছেও স্পষ্ট।

প্রসঙ্গত, এদিন সভামঞ্চে সুদীপ্ত সেনের চিঠি উল্লেখ করে বলেন, “সুদীপ্ত লিখেছে শুভেন্দু কে 6কোটি টাকা দিয়েছি। তাহলে তোলাবাজ আর ঘুষখোর কে? মীরজাফর কে?” এদিন অভিষেকের গোটা নিশানা জুড়েই ছিল শুভেন্দু-প্রসঙ্গ। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের কথায়, যাকে বলে সেয়ানে সেয়ানে টক্কর।

অভিষেক বললেন, “কথায় কথায় তো চ্যালেঞ্জ দিস, হোক চ্যালেঞ্জ জনতার দরবারে দাঁড়িয়ে বলছি। আয় লড়বি? পারবি?” অভিষেক এদিন বিজেপি নেতাদের নাম উচ্চারণ করে তোপ দাগেন। সঙ্গে দেন চ্যালেঞ্জও। বলেন, “আমি নাম নিয়ে বলছি, ভাব বাচ্যে কথা বলি না। দিলীপ ঘোষ গুন্ডা, অমিত শাহ বহিরাগত, কৈলাস বিজয়বর্গীয় বহিরাগত, ঘুষ খোর শুভেন্দু অধিকারী। ক্ষমতা থাকলে মামলা করে যা।”

আরও পড়ুন: মধ্যরাতে প্রতিবেশীর বাড়িতে হাজির তৃণমূল নেতা, তারপরই গণধোলাইয়ের শিকার!

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের কথায়, এদিনের অভিষেক ছিলেন অনেক বেশি আক্রমণাত্মক। বিজেপিকে বিঁধতে বেরিয়ে গিয়েছে কিছুটা মনের ক্ষোভও। একসময়ে দলে যে তাঁর কথাকে সেভাবে গুরুত্ব দেননি নেত্রী, তাও প্রকাশ পেয়েছে তাঁর কথাতেই।