তৃণমূলে থেকেই ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়েছেন শাহর সঙ্গে, নিজে মুখে স্বীকার শুভেন্দুর
'বড় ভাই' থেকে 'দেশের আন বান শান'-একের পর এক উপমায় শাহকে ভূষিত করলেন তিনি। শোনালেন, তাঁর কোভিড-কালে দলের কেউ খোঁজ নেয়নি, অমিত শাহ দু'বার খবর নিয়েছেন।
কথায় আছে, কারও পৌষমাস কারও সর্বনাশ। ৪ঠা পৌষ, শনিবার মেদিনীপুরের কলেজ মাঠে বিজেপির জনসভা থেকে তেমন কোনও অঙ্কুর রোপণ করা হল কি না তা সময় বলবে। তবে শুভেন্দুর বিজেপিতে যোগদান নিঃসন্দেহে অতিরিক্ত অক্সিজেন জোগাবে বিজেপিকে। বাংলার গণ আন্দোলনের মুখ শুভেন্দুকে একুশের আগে দলে পেয়ে দিলীপ ঘোষ, মুকুল রায়রা যে ভালই ওজনে বাড়বেন তার নমুনা এদিনই খানিকটা দেখা গিয়েছে। একসঙ্গে শাসকদলের ৬ জন বিধায়কের দল ছাড়াকে যথেষ্ট ইঙ্গিতবাহী বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
সেসব তো ঠিক আছে। কিন্তু শুভেন্দু যে অমিত শাহর সঙ্গে বহুদিন ধরেই যোগাযোগ রাখছেন সে কথা এদিনের সভার পর স্পষ্ট হয়ে গেল। শুভেন্দু নিজেই এদিন বলেছেন, “অমিত শাহজির সঙ্গে আমার সম্পর্ক কতদিনের। তিনি তখন সর্বভারতীয় বিজেপির সাধারণ সম্পাদক। পূর্ব উত্তরপ্রদেশের ভোটের দায়িত্বে। ২০১৪ সালে লোকসভা ভোটে তিনি দলকে জিতিয়েছেন। ইউপিতে ঝড় বইয়ে দিয়েছেন। তখন অশোক রোডের পুরনো পার্টি অফিসে একটা ছোট্ট ঘরে অমিতজি আমাকে দর্শন দিয়েছিলেন। আর সেই দর্শনের সুযোগ করে দিয়েছিলেন সিদ্ধার্থ নাথ সিং।”
এর আগে তৃণমূলের তরফেও একাধিকবার অভিযোগ তোলা হয়েছিল, দিল্লিতে তলে তলে বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াচ্ছেন শুভেন্দু। তিনি অবশ্য এসব অভিযোগকে তখন আমল দেননি। তবে বিজেপির সদস্যপদ পাওয়ার পরই পুরোপুরি ঘুরে গেলেন। অমিত শাহ যে তাঁকে বহুদিন ধরেই ‘ভাইয়ের’ মতো ভালবাসেন তা নিজের মুখেই বললেন শুভেন্দু। এমনকী সম্প্রতি করোনা আক্রান্ত হওয়ার পরও অমিত শাহ ফোনে দু’বার তাঁর খোঁজ নেন বলে জানান।
শুভেন্দুর ক্ষোভ, “আমি যখন কোভিডে আক্রান্ত হই আমার দলের লোকেরা, ২১ বছর যাদের জন্য করেছি, যাদের জন্য অকৃতদার থেকে গ্রামে গ্রামে ঘুরেছি তারা আমার খোঁজ নেয়নি। অমিতজি দু’বার খোঁজ নিয়েছেন। তাঁকে আমি কোটি কোটি নমন জানাই।” বিজেপিতে শুভেন্দুর যোগদানে এই ‘বড় ভাইয়ের’ ভূমিকা যে অনেকখানি তা ভালই বুঝিয়ে দিয়েছেন ঠারেঠোরে।
গলা চড়িয়ে কলেজ মাঠের সভা থেকে তাই এক শ্বাসে শুভেন্দু বলে গিয়েছেন,”ভারতীয় জনতা পার্টি পরিবারে আমাকে একজন প্রাথমিক সদস্য হিসাবে গ্রহণ করলেন যিনি, তিনি আমার বড় ভাই, আমার দাদা, দেশের আন বান শান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। যিনি ঊনিশের লোকসভা ভোটে জেতার পর আটমাসের মধ্যে যশস্বী প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে যা যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন পালন করেছেন, তিনি আর কেউ নন, অমিত শাহজী।”
দলের সঙ্গে দূরত্ব, অমিত শাহর সঙ্গে আরও গভীর করেছে শুভেন্দুর সম্পর্ক। তাই এদিন বিজেপির পতাকা হাতে নিয়েই পা ছুঁয়ে প্রণাম করেছেন শাহকে। ‘অমিতজি’ও পাল্টা পিঠ চাপড়ে বুকের কাছে ধরেছেন শুভেন্দুর মাথা। শুভেন্দুর হাতে তখন শক্ত করে বিজেপির পতাকাখানা ধরা।