‘বাংলা ভাগ করতে চাইছে বিজেপি’ প্রতিবাদ ঘাসফুলের
এদিনের এই সাংবাদিক সম্মেলনে হাজির ছিলেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি গৌতম দাস, তৃণমূলের জেলা চেয়ারম্যান তথা কৃষি বিপণন মন্ত্রী বিপ্লব মিত্র, রাজ্য তৃণমূলের সহ-সভাপতি শংকর চক্রবর্তী, দক্ষিণ দিনাজপুর মহিলা তৃণমূল কংগ্রেস কমিটির সাধারণ সম্পাদিকা প্রদীপ্তা চক্রবর্তী, জেলা কো-অর্ডিনেটর ললিতা টিগ্গা-সহ অন্যান্য তৃণমূল নেতৃত্বরা।
দক্ষিণ দিনাজপুর: উত্তরবঙ্গে বরাবরই নজর রাজনৈতিক দলগুলির। লোকসভা নির্বাচন হোক বা বিধানসভা নির্বাচন, সর্বদাই উত্তরবঙ্গে ক্ষমতায়নের রাস্তা মসৃণ করতে চেয়েছে শাসক ও বিরোধী শিবির। চৌত্রিশ বছরের বামশাসনের পতনের ‘পরিবর্তনের হাওয়ায়’ মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়ের সরকার উত্তরবঙ্গের উন্নয়নে সচেষ্ট হয়েছে এমন দাবী বারবার করে এসেছে ঘাসফুল শিবির। একুশের বঙ্গভোটেও পাহাড়কে ‘হাসি-খুশি’ বলেছিলেন খোদ তৃণমূল সু্প্রিমো। ২০১৯-এ লোকসভা নির্বাচনে ধীরে ধীরে পাহাড়ে আসর জমায় বিজেপি। পদ্ম শিবিরের ক্রমবর্ধমান ক্ষমতায়নে পাল্লা দিতে মাঠে নামে ঘাসফুলও। একুশের নির্বাচনেও পাহাড়ে রীতিমতো ভাল ফল করে গেরুয়া শিবির। এমনকী, বিজেপির সাতাত্তরটি আসনের মধ্যে বত্রিশটি আসনই এসেছে উত্তরবঙ্গ থেকে। ফলে, উত্তরবঙ্গকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করার জন্য ইতিমধ্যেই পার্লামেন্টে দাবী তুলেছে পদ্ম শিবির। বিজেপি সাংসদ জন বার্লা লোকসভা অধিবেশনে আগেই উত্তরবঙ্গকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করার দাবী তুলেছিলেন। সম্প্রতি, বিজেপির ভোট পরবর্তী সন্ত্রাসের ‘অ্যাজেন্ডা’ প্রস্তুত করে উত্তরবঙ্গকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ঘোষণা করার দাবীর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে পথে নামল ঘাসফুল।
শুক্রবার দুপুরে, বালুরঘাটের কাঁঠালপাড়ায় তৃণমূলের জেলা কার্যালয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করা হয় শাসক শিবিরের পক্ষ থেকে। এদিনের এই সাংবাদিক সম্মেলনে হাজির ছিলেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি গৌতম দাস, তৃণমূলের জেলা চেয়ারম্যান তথা কৃষি বিপণন মন্ত্রী বিপ্লব মিত্র, রাজ্য তৃণমূলের সহ-সভাপতি শংকর চক্রবর্তী, দক্ষিণ দিনাজপুর মহিলা তৃণমূল কংগ্রেস কমিটির সাধারণ সম্পাদিকা প্রদীপ্তা চক্রবর্তী, জেলা কো-অর্ডিনেটর ললিতা টিগ্গা-সহ অন্যান্য তৃণমূল নেতৃত্বরা।
এদিন, সাংবাদিক সম্মেলনে কৃষি বিপণন মন্ত্রী বিপ্লব মিত্র বলেন, “চৌত্রিশ বছরের বাম শাসনে উত্তরবঙ্গের দিকে কেউ ফিরেও তাকায়নি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় আসার পর থেরেই উত্তরবঙ্গের উন্নয়নে বিশেষ নজর দিয়েছেন। আলিপুরদুয়ারকে আলাদা জেলার মর্যাদা দেওয়া থেকে শুরু পাহাড়ের প্রান্তীয় জনজাতির জন্য একাধিক প্রকল্প ও কর্মসংস্থান করেছে রাজ্য সরকার। ‘উত্তরকন্যা’, ‘চা সুন্দরী প্রকল্প’, ‘ চোখের আলো পর্যটন হাব’ থেকে শুরু করে একাধিক প্রকল্প চালু হয়েছে। একটি বিরোধী শক্তি বরাবর সেই উন্নয়নকেই অবনতি বলে তুলে ধরেছে। বিধানসভা নির্বাচনের হার বিজেপি মেনে নিতে পারছে না। তাই বাংলা ভাগের চক্রান্ত করে উত্তরবঙ্গকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করতে চাইছে। যেহেতু কেন্দ্রে বিজেপি সরকার রয়েছে তাই এই অনায্য় দাবীটি স্থান পেয়েছে। তৃণমূল কখনও এই দাবী সমর্থন করে না। কোনও অবস্থাতেই বাংলা ভাগ করা যাবে না। ভবিষ্যতে এ নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলনে সামিল হবে তৃণমূল।” যদিও, তৃণমূলের এই মন্তব্যের প্রতিক্রিয়াস্বরূপ বিজেপির তরফে কোনও উত্তর মেলেনি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, ২০১৯-এ লোকসভা নির্বাচনে উত্তরবঙ্গে প্রায় ৩৭ টি আসনে জয়লাভ করে বিজেপি। ২০১৬-এর বিধানসভা নির্বাচনে, উত্তর দিনাজপুরে ৪টি, কোচবিহারে ৮টি, আলিপুরদুয়ারে ৪টি, জলপাইগুড়িতে ৬টি এবং দক্ষিণ দিনাজপুরে ২টি আসন পায় তৃণমূল। অন্যদিকে, মোট ওই পাঁচটি জেলায় বিজেপির প্রাপ্ত আসন সংখ্যা ছিল তিন। সেখান থেকে ২০১৯-এ লোকসভা নির্বাচনে সম্পূর্ণ বদলে যায় ছবিটি। প্রায় সবকটি জেলাতেই এগিয়ে ছিল বিজেপি। ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে, উত্তরবঙ্গ বিজেপি এগিয়ে থাকলেও চেনা ঘরে থাবা বসিয়েছে তৃণমূল। উত্তরবঙ্গের ৮ জেলার মোট ৫৪টি আসনের মধ্যে ২১টি আসন দখল করে তৃণমূল। এর মধ্যে দার্জিলিং, কার্শিয়াং, ও কালিম্পং-এ প্রার্থী দেয়নি তৃণমূল বরং, ‘পাহাড় বন্ধুদের’ ভরসা করেছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনুমান,দক্ষিণবঙ্গের সবুজ ঝড়ের ‘আঁচ’ এসে পড়েছে উত্তরেও। ভোটের পরে পরেই তাই উত্তরবঙ্গে পাড়ি দিয়েছেন বিজেপির কর্মকর্তারা। একই সঙ্গে ভোট পরবর্তী সন্ত্রাসের অভিযোগও তুলেছেন তাঁরা। রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ থেকে শুরু করে পাচারকাণ্ড প্রতিরোধ করতে বঙ্গভোটে উত্তরবঙ্গকে হাতিয়ার করেছিল বিজেপি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করছেন, উত্তরবঙ্গকে পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল দাবী করার পেছনে কেবল বিজেপির দলীয় স্বার্থ পূরণই নয়, বরং, বাংলার শাসনক্ষমতার একটি অংশীদার হওয়ার প্রয়াসও লুকিয়ে রয়েছে, যা মূলত বর্তমান রাজ্য সরকারকে চাপে রাখবে। শুধু তাই নয়, আসন্ন নির্বাচনগুলিতেও এর সুদূরপ্রসারী ফল ভোগ করবে পদ্ম শিবির এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। যদিও, সোমবার নবান্নতে সাংবাদিক বৈঠক করে মুখ্যমন্ত্রী বিজেপির পরিকল্পনার বিরুদ্ধে কড়া বার্তা দিয়ে বলেন, “কোনওরকম ডিভাইড অ্যান্ড রুল আমরা করতে দেব না। এগুলো রাজ্য সরকারের অনুমতি ছাড়া করাও যায় না। বিজেপির এই দাবীকে ধিক্কার জানাই।” রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে রাজ্য় সরকারকে পুরোদস্তুর চাপে রাখতে ও রাজ্যের একমাত্র বিরোধী দল হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতেই তৎপর বিজেপি।
আরও পড়ুন: নয়া রণকৌশলের প্রস্তুতি পদ্ম শিবিরের, নদিয়ায় সাংগঠনিক বৈঠকে দিলীপ