সর্বহারা দলের ‘শখের’ প্রার্থী, সম্পত্তির পরিমাণ কয়েকশো কোটি!

গনি খান চৌধুরী থেকে প্রিয়রঞ্জন দাসমুন্সী, এমনকি গত লোকসভায় দেবশ্রী চৌধুরীর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন বিনয়কুমার দাস (Binay Kumar Das)।

সর্বহারা দলের 'শখের' প্রার্থী, সম্পত্তির পরিমাণ কয়েকশো কোটি!
নিজস্ব চিত্র
Follow Us:
| Updated on: Apr 02, 2021 | 8:21 PM

উত্তর দিনাজপুর: ভোটে জিততে কী না করেন প্রার্থীরা। কিন্তু এই প্রার্থী অন্যরকম। তিনি জেতার প্রত্যাশা রাখেন না। নেই কোনও দাবিদাওয়া। কিন্তু এমসিপিআই এবং সিপিআইএমএল দুই দলের হয়ে উত্তর দিনাজপুরের করনদিঘি ও রায়গঞ্জ বিধানসভার তিনি প্রার্থী। নাম বিনয়কুমার দাস (Binay Kumar Das)। আবার সর্বহারা দলের এই শখের প্রার্থীর সম্পত্তির পরিমাণ শুনলে চোখ কপালে উঠতে পারে অনেকের। কিন্তু সর্বহারা দলের বিনয়ী বিনয়কুমারের তা নিয়ে কোনও দম্ভ নেই। পাড়ার চায়ের দোকানে রাজনীতি চর্চার প্রধান বক্তা তিনিই।

বিনয়কুমার দাসের নির্বাচনী হলফনামা থেকে জানা যাচ্ছে, তাঁর সম্পত্তির পরিমান দেখিয়েছেন প্রায় সাড়ে ছশো কোটি টাকারও বেশি। তাছাড়া এ রাজ্যের মালদহ, রায়গঞ্জ, করণদিঘী থেকে ভিন রাজ্যের মধ্যে অসম, উত্তরপ্রদেশ-সহ বেশ কয়েকটি রাজ্যেও বাড়ি ও সম্পত্তি রয়েছে বিনয়বাবুর। যার পরিমাণ প্রায় ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা। যা শুধু উত্তর দিনাজপুরেই নয়, উত্তরবঙ্গের মধ্যে তিনিই বিত্তশালী প্রার্থী বলে অভিমত রাজনৈতিক মহলের। আর প্রার্থীপদে বিনয়বাবুর দাঁড়ানো একটা শৌখিনতা।

ভোটযুদ্ধে সরগরম বাংলায় আলাদাভাবে নজর কেড়েছেন এমসিপিআই এবং সিপিআইএমএল দলের এই প্রার্থী। প্রচারবিমুখ বিনয়বাবুর ভোটে দাড়ানোটা অনেকের কাছেই বিস্ময়ের এবং মজারও বটে। ভোটে জিততে কী না করেন নেতারা। আবার ভোটে লড়ার ইপ্সিত টিকিট না পেলে গোঁসা করে দলত্যাগও আকছার ঘটছে। তবে এই প্রার্থীর কাছে নির্বাচনে জয় পাওয়া কোনও বড় বিষয় নয়, তিনি স্রেফ শখে ভোট লড়েন। সেই শখের বশে তিনি আবার যার তার বিরুদ্ধে প্রার্থী হন না। গনি খান চৌধুরী থেকেপ্রিয়রঞ্জন দাসমুন্সী, এমনকি গত লোকসভায় দেবশ্রী চৌধুরীর বিপরীতেও নির্দল প্রার্থী হয়েছেন বিনয়বাবু।

হাজারো কোটি টাকার মালিক হলেও জীবনে যাপনে তার কোনও ছাপ নেই। নেই বিলাসবহুল গাড়ি বা মোটর সাইকেল। বছর কুড়ি আগে স্ত্রী গত হয়েছেন। তারপর থেকে রায়গঞ্জের কর্নজোড়া কালিবাড়ি এলাকায় ভাড়া বাড়িতেই থাকেন নিঃসন্তান বিনয় দাস। এলাকায় ভদ্র ও মিশুকে মানুষ বলে পরিচিত বিনয় দাস যে এবারেও প্রার্থী হয়েছেন, সে ব্যাপারে জানেন না তার প্রতিবেশীরাও! আর জানবেই বা কী করে, বিনয় বাবুরই সাফ বক্তব্য, “প্রচার কিসের? ভোটে আমি জিতব এটা অসম্ভব। ভোটে জিততে তো দাঁড়াইনি, এটা আমার শখ। তাই প্রচারেরও কোনও প্রশ্ন আসে না।” শুধু তাইই নয়, তাঁর বিরুদ্ধে দাঁড়ানো প্রার্থীদের মধ্যে কার জেতা উচিত সে কথাও নিঃশংশয়ে বলে দেন বিনয়বাবু। তাঁর কথায়, “যাঁরা রায়গঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্র থেকে এবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তাঁদের মধ্যে যোগ্যতম প্রার্থী কংগ্রেসের মোহিত সেনগুপ্ত।” আবার নিজে কমিউনিস্ট হলেও বিনয়বাবু চান রাজ্যে আবার ক্ষমতায় আসুক তৃণমূল।

আরও পড়ুন: তৃণমূলের দেওয়াল লিখনের সামনে বিজেপির ব্যানার, সংঘর্ষে মাথা ফাটল প্রাক্তন কাউন্সিলরের

তবে এলাকার চায়ের দোকানে যখন তৃণমূল, বিজেপি বা অন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে আলোচনা চলছে, সে সময়ও নিজের প্রচার না করে মানুষের ভাল-মন্দের চিন্তাই তাঁর কাছে মুখ্য বলে জানান বিনয়বাবু। তাঁর কথায়, “আমি জানি হেরে যাব, তবুও দাঁড়িয়েছি। এটাই আমার বরাবরের শখ।” তাই প্রত্যেকবারই যখন ভোট আসে তখনই আমি দাঁড়িয়ে পড়ি প্রার্থী হিসেবে।” চৈত্রের এই ভোট যুদ্ধের মাঝে বিনয়ের বিনয়াবনত নির্ভেজাল নিরুত্তাপের নির্বাচনী লড়াই স্থানীয়দের কাছে মজার বিষয়।