“পুলিসের হাতে শটগান!” শিলিগুড়ির উলেন রায়ের মৃত্যু তবে কার গুলিতে? প্রশ্ন তুলল ভাইরাল ভিডিয়ো
সোমবার বিজেপির উত্তরকন্যা অভিযানের সময় বিজেপি কর্মী উলেন রায়ের মৃত্যু হয়। ওই দিন রাতেই পুলিস উলেনের দেহের ময়নাতদন্ত (Postmortem) করে। মঙ্গলবার সেই ময়না তদন্তের রিপোর্ট উদ্ধৃত করে রাজ্য পুলিসের তরফে টুইট করে জানানো হয়, শটগান থেকে ছোড়া পেলেট বা ছররার আঘাতেই মৃত্যু হয়েছে উলেনের।
সিজার মন্ডল, কলকাতা: শটগান থেকে ছোড়া ছররায় মৃত্যু হয়েছে জলপাইগুড়ির বিজেপি কর্মী উলেন রায় (Ulen Roy)-র। তবে সেই শটগান (Shotgun) পুলিসের নয়, বিক্ষোভকারীদের, এমনটাই দাবি করেছিল রাজ্য পুলিস। টুইটে তাদের আরও দাবি, পুলিস শটগান ব্যবহার করেন না।
বুধবার সকাল থেকে সোশ্যাল মিডিয়া (Social Media)-এ ১ মিনিট ৫৭ সেকেন্ডের একটি ভিডিয়ো ভাইরাল (Viral Video) হয়। সেই ভিডিয়োতে দেখা যাচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গ পুলিসের সশস্ত্র বাহিনী এবং র্যাফ (RAF)-র সদস্যদের হাতে রয়েছে শটগান। তাঁরা বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে সেই বন্দুক থেকে গুলি চালাচ্ছেন, দেখা যায় সেই দৃশ্য। আর তার পরেই নেটাগরিকদের একটা বড় অংশ প্রশ্ন তুলেছেন, তবে কি পুলিসের ছোড়া ছররাতেই মৃত্যু হয়েছে উলেনের? রাজ্য পুলিসের দাবি কি তাহলে অসত্য?
টিভি নাইনের পক্ষ থেকে ওই ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করা হয়নি। তবে সোশ্যাল মিডিয়ায় যাঁরা ওই ভিডিয়ো প্রকাশ করেছেন তাঁদের দাবি, সোমবার বিজেপির উত্তরকন্যা অভিযানের সময় বিজেপি কর্মীদের লক্ষ্য করেই রাজ্য পুলিস শটগান ব্যবহার করেছিল। বিজেপি নেতা কৈলাশ বিজয়বর্গীয় (Kailash Vijayvargiya)-ও ওই ভিডিয়ো টুইট করে সোমবার পুলিসের গুলিতেই উলেন রায়ের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করেন। ভিডিয়োটি নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি শিলিগুড়ি পুলিস কমিশনারেটের কর্তারা।
সোমবার বিজেপির উত্তরকন্যা অভিযানের সময় বিজেপি কর্মী উলেন রায়ের মৃত্যু হয়। ওই দিন রাতেই পুলিস উলেনের দেহের ময়নাতদন্ত (Postmortem) করে। মঙ্গলবার সেই ময়না তদন্তের রিপোর্ট উদ্ধৃত করে রাজ্য পুলিসের তরফে টুইট করে জানানো হয়, শটগান থেকে ছোড়া পেলেট বা ছররার আঘাতেই মৃত্যু হয়েছে উলেনের।
ওই টুইটে পুলিস দাবি করে, তাঁরা শটগান ব্যবহার করেন না। তবে অস্ত্র সম্পর্কে ওয়াকিবহাল পুলিস এবং সিআরপিএফ (CRPF) কর্তাদের দাবি, ভিডিয়োতে রাজ্য পুলিসের সদস্যদের হাতে যে বন্দুক দেখা গিয়েছে, সেই বন্দুকই কাশ্মীরে বিক্ষোভকারীদের উপর ব্যবহার করত সেনা এবং আধা সেনা। এই সেই পেলেট গান, যা পাথর ছোড়া বিক্ষোভকারীদের উপর ব্যবহার করা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে।
আরও পড়ুন:অসুস্থ বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, ভর্তি আইসিইউ-তে, দ্রুত আরোগ্য কামনায় টুইট মুখ্য়মন্ত্রীর
রাজ্য পুলিসের এক কর্তা বলেন, সম্প্রতি রাজ্য পুলিস মব ভায়োলেন্স (Mob Violence) বা হিংসাত্মক বিক্ষোভকারীদের সামলাতে এই ধরনের বন্দুক কিনেছে। পুলিসি পরিভাষায় এই বন্দুকের নাম “পাম্প অ্যাকশন গান” (Pump Action Gun)। এক পুলিস কর্তার কথায়, এই বন্দুকের যে বুলেট তাতে একসঙ্গে অনেক ছররা বা পেলেট ভরা থাকে। আপাতভাবে এই বন্দুক প্রাণঘাতী নয়। তবে যাঁরা এই বন্দুক সম্পর্কে ওয়াকিবহাল তাঁদের কথায়, “সময় বিশেষে নন-লিথাল ছররাও প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে।”
সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)-র দক্ষিণ বঙ্গ ফ্রন্টিয়ারের ডিআইজি এসএস গুলারিয়া ভিডিয়োতে রাজ্য পুলিসের হাতে থাকা বন্দুক দেখে বলেন, ”এগুলো পাম্প অ্যাকশন গান। বিএসএফও ব্যবহার করে। এই বন্দুক থেকে ছররা ছোড়া হয়। ”
মঙ্গলবার উলেন রায়ের মৃত্যু প্রসঙ্গে রাজ্য পুলিস টুইট করে জানিয়েছে, খুব কাছ থেকে শটগান থেকে ছোড়া পেলেটের আঘাতেই মৃত্যু হয়েছে উলেনের। পুলিসের দাবি, বিক্ষোভকারীদের মধ্যেই কারোর হাতে ছিল ওই বন্দুক, যা থেকে বেরনো ছররায় মৃত্যু হয়েছে উলেনের।
সম্প্রতি আমেরিকার একটি প্রথম সারির দৈনিক কাশ্মীরের পেলেট গান সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের মতামত উদ্ধৃত করে জানিয়েছিল, “সাধারণ ভাবে পেলেট গান বলতে যা বোঝায়, তা কাশ্মীরে ব্যবহার করা হয় না। সেখানে যে বন্দুক ব্যবহার করা হয় সেখানে ১২ বোরের শেল থাকে। সেই শেলে এক ডজনের মতো পেলেট থাকে। সঙ্গে থাকে বারুদ। বারুদ দিয়ে ওই শেল থেকে তীব্র বেগে ছররা ছুটে যায় লক্ষ্যবস্তুর দিকে।” পুলিস কর্তাদের একাংশ স্বীকার করে নেন, সেই বন্দুকই দেখা যাচ্ছে রাজ্য পুলিসের কর্মীদের হাতে।
শিলিগুড়ি পুলিস কমিশনারেট সূত্রে খবর, সোমবারের ঘটনায় পুলিস দুটি মামলা দায়ের করেছে। একটি মামলায় দিলীপ ঘোষ, কৈলাশ বিজয়বর্গীয় সহ প্রায় ৫০ জন বিজেপি নেতাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে বেআইনি জমায়েত, ভাঙচুর, পুলিসের উপর হামলা চালানোর অভিযোগে। অন্য একটি মামলা করা হয়েছে উলেনের মৃত্যুকে নিয়ে। অজ্ঞাতপরিচয়ের বিরুদ্ধে খুনের মামলা করা হয়েছে উলেনের মৃত্যুতে।