মাত্রাতিরিক্ত ফলন, দাম নেই আলুর, মাথায় হাত আলুচাষিদের

শুধু ফলনের আধিক্য নয়, শীতের খামখেয়ালীপনায় আলুতে নাবি ধসারও আক্রমণ ঘটেছে। ফলে গাছের আলু শুকিয়ে যাচ্ছে গাছেই। অন্যদিকে, পুরনো আলু মজুত থাকায় মার খাচ্ছে নতুন আলুর ব্যবসাও।

মাত্রাতিরিক্ত ফলন, দাম নেই আলুর, মাথায় হাত আলুচাষিদের
নিজস্ব চিত্র
Follow Us:
| Updated on: Jan 28, 2021 | 6:51 PM

TV9 এক্সক্লুসিভ: মাঠ ভর্তি নতুন আলু(Potato)। তবু মুখে হাসি নেই চাষিদের। চড়া দামে কিনতে হয়েছে বীজ। স্বাভাবিক ভাবেই এবারে খরচ বেড়েছে চাষের। কিন্তু পোখরাজ আলুর(Potato) যা দাম মিলছে তাতে চাষের খরচটুকুও না ওঠায় মাথায় হাত চাষিদের। রাজ্যের এই সামগ্রিক চিত্র ফুটে উঠেছে শীতের মাঝামাঝিতে।

পশ্চিম মেদেনীপুরের গড়বেড়তায় প্রায় কুইন্টাল প্রতি আট থেকে দশ হাজার টাকায় কিনতে হচ্ছে আলু। বিঘা প্রতি চাষে খরচ হয়েছে প্রায় চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা। এদিকে, কুইন্টাল প্রতি আলুর(Potato) দাম দাঁড়িয়েছে চারশো থেকে পাঁচশো টাকা। প্রায় একই অভিযোগ হুগলি ও বর্ধমানের আলু চাষিদের।

হুগলিতে, বিঘা প্রতি আলুচাষে খরচ প্রায় ত্রিশ হাজার টাকা। অথচ, উৎপন্ন আলু  বিক্রি করতে হচ্ছে ১৪ হাজার টাকায়। অর্থাৎ,প্রায় ১৬ হাজার টাকা কেবল খরচের খাতাতেই দেখছেন কৃষকরা। গত বছর পর্যন্ত যেখানে ১২০০ থেকে ১৮০০ টাকায় বীজ কিনেছেন চাষিরা সেখানে এবছর বীজ কিনতে হয়েছে ৪৫০০-৫০০০ টকায়। এই ছবির খুব একটা বদল ঘটেনি।

আরও পড়ুন : ‘আর ১৫ দিন রাজনীতি করতে পারবেন অনুব্রত’, সৌমিত্রর কণ্ঠে কিসের ইঙ্গিত?

বর্ধমানে, মরসুমের গোড়া থেকে আলু(potato) বীজের দাম চড়া ছিল। পোখরাজ বা জ্যোতি আলুর ‘পঞ্জাবের সার্টিফায়েড’ বীজের দাম উঠেছিল বস্তা প্রতি প্রায় পাঁচ হাজার টাকা। কৃষি দফতর জানাচ্ছে, আলু চাষের এলাকা গত মরসুমের চেয়ে প্রায় সাড়ে তিন হাজার হেক্টর বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৭৩,৬৭৬ হেক্টরে।কিন্তু, সেই আলু বিক্রি করতে রীতিমতো লোকসানের মুখ দেখেছেন চাষিরা।

আরও পড়ুন : হাসপাতাল থেকে ফিরেই অরূপ রায় ‘সেবক’এর ভূমিকায়! পুরনো ফ্লেক্স সাদা তাপ্তিতে নয়া সমীকরণ

শুধু ফলনের আধিক্য নয়, শীতের খামখেয়ালীপনায় আলুতে নাবি ধসারও আক্রমণ ঘটেছে। ফলে গাছের আলু শুকিয়ে যাচ্ছে গাছেই। অন্যদিকে, পুরনো আলু মজুত থাকায় মার খাচ্ছে নতুন আলুর ব্যবসাও। কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বছর গোটা রাজ্যে মোট চার লক্ষ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। কিন্তু, এই চাষে সিঁদুরে মেঘ দেখছেন কৃষি বিশেষজ্ঞরা। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির শিক্ষক ভাস্কর গোস্বামী বলেন, ‘‘চাষিরা লোভে পড়ে ঝুঁকি নিচ্ছেন। এই ফাটকা খেলার প্রবণতা ভয়ঙ্কর। কোনও কারণে বাজারে অতিরিক্ত জোগান হয়ে গেলে বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখে উৎপাদন কমে গেলে, চাষিরা সমস্যায় পড়তে পারেন।’’

প্রসঙ্গত, অধিকাংশই চাষিরাই ‘সুফল বাংলা’, ‘কৃষকবন্ধু প্রকল্প’-এর মতো রাজ্য বা কেন্দ্র সরকারের প্রকল্প গুলি থেকে বঞ্চিত। গ্রামের প্রান্তিক চাষীরা কেউ বা সমিতি থেকে লোন, কেউ বা মহাজনের কাছ থেকে লোন নতুবা বাড়ির মহিলাদের গয়না বন্ধক রেখে চাষ করে।

আলুচাষিদের সমস্যা নিয়ে চলতি বছরেই ৫ জেলার প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন রাজ্যের মুখ্য কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদার। আলু(Potato) চাষ ও ফলন নিয়ে একদফা আলোচনাও হয়েছিল বৈঠকে। বাঁকুড়া, হুগলি, পশ্চিম মেদিনীপুর, বীরভূম ও পূর্ব বর্ধমানের কৃষি আধিকারিকরা সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।