সত্যি হলে তিন দশকে প্রথম! বঙ্গ ছাপিয়ে নীতীশ ও যোগীর রাজ্যে উঠতে পারে পদ্মার ইলিশ
বর্তমানে ফরাক্কা বাঁধের স্লুইস গেটটির জলস্তর যেখানে রয়েছে, এ বার তার চেয়ে বাড়িয়ে দেওয়া হবে জলস্তর। এর ফলে পদ্মা নদীর নোনতা জল থেকে গঙ্গা নদীর মিষ্টি জলে সাঁতার কেটে আরও বেশি সংখ্যক ইলিশের চলে আসার সম্ভাবনা বাড়বে।
মুর্শিদাবাদ: প্রায় তিন দশক পার। ৩২ বছর পর ফের উত্তর প্রদেশ ও বিহারের বাজারেও মিলতে পারে পদ্মাপারের ইলিশ। মাছে-ভাতে বাঙালিই কেবল নয়, বিহারবাসী বা যোগীরাজ্যের মানুষের পাতও এবার ভরে উঠবে খাঁটি ইলিশের স্বাদ ও গন্ধে। সৌজন্য়ে ফরাক্কার নয়া ‘নেভিগেশন লক’।
ইলিশের জোগান বাড়াতে ফরাক্কাতে নতুন ‘নেভিগেশন লক’ (‘Lock’) তৈরির প্রকল্পটি চলতি বছরে কার্যকর হতে পারে। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে, সরকার ইলিশের জন্য ‘ফিশ পাস’ তৈরি করতে ফরাক্কা ব্যারেজে নেভিগেশন লকটি নতুন করে ডিজাইনের একটি প্রকল্প উন্মোচন করেছিল। ইলিশ প্রবাহের সুবিধার্থে এই প্রকল্পটি চালু হচ্ছে বলেই জানা গিয়েছে।
এই নেভিগেশনাল লক (‘Lock’) তৈরি হয়ে গেলে ফরাক্কা থেকে উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজ অবধি ইলিশের জোগান বাড়বে। বাংলাদেশ থেকে ইলিশ মাছ গঙ্গার উজান বেয়ে চলে আসবে ভারতের দিকে। ইতিহাস বলছে, ১৯৭৫ সালে গঙ্গায় চালু হওয়া ফারাক্কা ব্যারাজ ইলিশের পশ্চিমমুখী চলাচলকে ব্যাহত করেছিল।ব্যারাজের একটি নেভিগেশন লক ছিল যা ইলিশের ফারাক্কার ওপারে প্রবাহিত হওয়া থেকে থামিয়েছিল। বিহার এবং উত্তরপ্রদেশের সীমান্তের বক্সারে, সর্বশেষ রেকর্ড অনুযায়ী, ৩২ বছর আগে ইলিশ ধরা পড়েছিল।
আরও পড়ুন: মাত্রাতিরিক্ত ফলন, দাম নেই আলুর, মাথায় হাত আলুচাষিদের
ইলিশের যাত্রা ব্যাহত করতে ফারাক্কা ব্যারেজের ভূমিকা যথাযথভাবে নথিভুক্ত, এবং সংসদেও এটি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ৪ আগস্ট, ২০১৬ সালে তৎকালীন জলসম্পদ মন্ত্রী উমা ভারতী লোকসভায় মাছের বেড়িবাঁধে যে বাধা সৃষ্টি করেছিল তাতে মাছটিকে সহায়তা করতে ‘মৎস্য মই’ তৈরির পরিকল্পনা সম্পর্কে লোকসভায় জানিয়েছিলেন।
মৎস্য মই বা ফিশ পাস কী?
ফিশ পাস বা মৎস্য মই মাছের পথ হিসাবেও পরিচিত। এটি বাঁধ ও ব্যারেজ দ্বারা তৈরি বাধাকে অতিক্রম করে মাছের প্রবাহে সাহায্য করে। এগুলিতে সাধারণত ছোট ধাপ থাকে যা মাছগুলিকে বাধা অতিক্রম করতে দেয় এবং অন্যদিকে খোলা জলে পৌঁছতে সাহায্য করে।
১৮৩৭ সালে রিচার্ড ম্যাকফারলান তাঁর জলচালিত মিলে একটি বাঁধকে বাইপাসে সহায়তা করার জন্য ডিজাইন করা একটি ফিশ পাসকে পেটেন্ট করেছিলেন। উনিশ শতকের শেষের দিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডায় মাছের পাসগুলি প্রচলিত হয়।
প্রায় একই সময়ে, ঔপনিবেশিক ভারতের অগ্রণী মৎস্য বিজ্ঞানী ফ্রান্সিস ডে কাবেরীর উত্তর শাখানদীতে মৎস্য মই জুড়ে ইলিশের নিরবচ্ছিন্ন চলাচল সক্ষম কি না তা পরীক্ষা প্রায় ৪০ বছরের দীর্ঘমেয়াদি পরীক্ষার পর উত্তর ভারতে মাছের পাসগুলিও অকার্যকর প্রমাণিত হয়েছিল।
বর্তমানে, যে ফরাক্কা নেভিগেশনাল লকটি তৈরি হচ্ছে, তাতে কলকাতা বন্দর প্রভূত লাভ করবে বলে মনে করছেন সরকারি আধিকারিকরা। ফরাক্কায় নতুন নেভিগেশনাল লক (‘Lock’) চলতি বছর জুন থেকে খুলে দেওয়ার কথা। এই কাজের বরাত কেন্দ্রীয় সরকারের ইনল্যান্ড ওয়াটার ওয়েজ অথরিটি ওই বেসরকারি সংস্থাকে দিয়েছে। সংস্থা সূত্রের খবর, ফরাক্কা বাঁধের ফিডার খালের উপর নেভিগেশনাল লকটি এখন তৈরি হচ্ছে।
আরও পড়ুন: লাভের গুড় খেল ‘খেয়ালি শীত’, খেজুর গাছে হাঁড়ি বেঁধেও টান চাহিদায়
বর্তমানে ফরাক্কা বাঁধের স্লুইস গেটটির জলস্তর যেখানে রয়েছে, এ বার তার চেয়ে বাড়িয়ে দেওয়া হবে জলস্তর। এর ফলে পদ্মা নদীর নোনতা জল থেকে গঙ্গা নদীর মিষ্টি জলে সাঁতার কেটে আরও বেশি সংখ্যক ইলিশের চলে আসার সম্ভাবনা বাড়বে। এই পরিস্থিতিতে গঙ্গায় ইলিশ মাছের ডিম পাড়ার সম্ভাবনাও বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করছেন আধিকারিকরা।
নতুন পরিকল্পনামাফিক যে লক (‘Lock’) তৈরি হচ্ছে তাতে কতটা মাছের জোগান বাড়বে তা নিয়ে রীতিমতো সংশয়ী মৎস্যবিজ্ঞানীরা। তাঁদের দাবি, যে ২৫০ মিটার দৈর্ঘ্য়ের ও ২৫ মিটার উচ্চের লক টি তৈরি হচ্ছে, তা গঙ্গার অত্যন্ত অল্প এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। ফলে, জোগান আদৌ বাড়বে কি না তা নিয়ে রীতিমতো ধন্দে বিজ্ঞানীরা।