লাভের গুড় খেল ‘খেয়ালি শীত’, খেজুর গাছে হাঁড়ি বেঁধেও টান চাহিদায়

শীত না থাকলে জমবে না খেজুর গুড়ও। যত শীত পড়বে ততই জমবে গুড়। কিন্তু, বিধি বাম! শীত সেভাবে না পড়ায় না জমেছে গুড়, না উঠেছে গুড় তৈরির খরচ। মাথায় হাত জঙ্গলমহলের গুড়চাষিদের তথা ‘শিউলিদের’।

লাভের গুড় খেল ‘খেয়ালি শীত’, খেজুর গাছে হাঁড়ি বেঁধেও টান চাহিদায়
প্রতীকী ছবি
Follow Us:
| Updated on: Jan 16, 2021 | 12:46 PM

পশ্চিম মেদিনীপুর : শীত পড়েছে। সদ্যই গিয়েছে মকর সংক্রান্তি। কিন্তু, বাজারে দেখা নেই শীতের চিরকালীন সঙ্গী নলেন গুড়ের। এরজন্য খামখেয়ালি শীতকেই দুষছেন ‘শিউলিরা’।

কার্যত, জানুয়ারি পড়তে না পড়তেই বিদায় নিয়েছে শীত। উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে তাপমাত্রা। পারদের এমন টানাপোড়েন আর পশ্চিমী ঝঞ্ঝার দাপটে জাঁকিয়ে শীতের মেজাজ এবার ভোগ করেনি বাংলা। আর শীত না থাকলে জমবে না খেজুর গুড়ও (Date)। যত শীত পড়বে ততই জমবে গুড়। কিন্তু, বিধি বাম! শীত সেভাবে না পড়ায় না জমেছে গুড়, না উঠেছে গুড় তৈরির খরচ। মাথায় হাত জঙ্গলমহলের গুড়চাষিদের তথা ‘শিউলিদের’।

আরও পড়ুন : শুভেন্দুর সভার আগেই মেদিনীপুরে তৃণমূলে ভাঙন!

বাঁকুড়ার বৈতল গ্রামের এগরামূল মল্লিক দীর্ঘ ১২ বছর ধরে শালবনী সহ তিন জায়গায় মহল বানিয়ে গুড় তৈরি করেন। প্রতিবছরই লাভ হয় ভালই। কিন্তু এ বছর গুড় বিক্রি তো দূর, মহল তৈরির টাকাটাও ওঠেনি।কারণ, নতুন হাড়ি কেনা, হাতিয়ার বানানো মিলিয়ে এক সিজনে প্রায় ৩০-৩৫ হাজার টাকার মতো খরচ হয়। তার উপর গাছ মালিকদের গাছ পিছু ৪ কেজি করে গুড় দিতে হয়। ফলে লোকসান বৈ লাভ হয়নি তাঁর। প্রায় একই অভিযোগ করেছেন ‘শিউলি’ অনীল বাস্কে, গুলজার আলি খানেরা।

গোয়ালতোড়ে বছর তিনেক ধরে ভাগে গুড়(Date) তৈরি করেন বছর চল্লিশের অনিল বাস্কে। এবছর ১৩০ টি গাছ ভাড়া নিয়ে গুড় তৈরি করেছেন। কিন্তু শীতের জাঁকের অভাবে গুড়ের জোগান দিতে পারেননি। গুড় কিনতে এসে খালি হাতেই ফিরতে হয়েছে দীপেন সাহা, সজল মন্ডলদের। সজল বাবুর বক্তব্য, “প্রতি বছরই আত্মীয় বাড়ি পাঠানোর জন্য আমার প্রায় ২০ কেজি গুড়ের প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু এবার পাঠাতে পারলাম না।”

আরও পড়ুন : তৃণমূল কর্মীদের বাড়ির সামনে বোমাবাজি, উত্তপ্ত সবং

অন্যান্য বছর যেখানে ২০ থেকে ৩০ কেজি গুড় তৈরি হয় সেখানে এ’বছর সেই পরিমাণ টাই হয়েছে ১০ থেকে ১২ কেজি। মিষ্টির দোকান গুলি থেকেও গুড়ের চাহিদা থাকে ব্যাপক। এক একজন ক্রেতা গুড় নিয়ে যান প্রায় ৫ থেকে ১০ কেজি। গুড় ব্যবসায়ী উত্তম মাহাতো জানিয়েছেন গত বছরও ৫ থেকে ৬ কুইন্টাল গুড় তৈরি হয়েছিল। কিন্তু, এবছর ২ কুইন্টাল গুড়ও বিক্রি করে উঠতে পারেননি তিনি। ফলে, স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি দামেই গুড় বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন তিনি।

আরও পড়ুন : ‘জয় শ্রীরাম’ না বলে, বলেছিলেন ‘জয় বাংলা’, বন্দুকের বাট দিয়ে তৃণমূল কর্মীর মাথা ফাটাল দুষ্কৃতীরা

বছরভর চাষবাস ছাড়াও শীতে খানিক বাড়তি লাভের আশাতেই গুড়ের দিকে পাখির চোখ করে থাকেন এই শিউলিরা। শীতের অভাবে সেই বাড়তি লাভকে জলাঞ্জলি দিতে হয়েছে তাঁদের। উল্লেখ্য, গত আটবছরে উষ্ণতম মকরসংক্রান্তি গিয়েছে রাজ্যে। পশ্চিমী ঝঞ্ঝা আর পুবালী হাওয়ার দাপটে রীতিমতো ঘাম ঝরেছে রাজ্যে। যদিও হাওয়া অফিস জানিয়েছে কিছুদিনের মধ্যেই বদল হবে তাপমাত্রার।