বেসরকারি হাসপাতালকে আর টিকা দেবে না রাজ্য, নতুন নির্দেশিকা ধন্দ বাড়াচ্ছে প্রাপকদের

প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলির কাছে বরাত দেওয়া হলেও তা সঙ্গে সঙ্গে এসে পৌঁছনর আশা নেই। ফলে যাদের এই সময়ের মধ্যে টিকা নেওয়ার কথা, তাঁরা কোথায় যাবেন?

বেসরকারি হাসপাতালকে আর টিকা দেবে না রাজ্য, নতুন নির্দেশিকা ধন্দ বাড়াচ্ছে প্রাপকদের
ফাইল চিত্র। ছবি:PTI
Follow Us:
| Updated on: Apr 26, 2021 | 9:40 PM

কলকাতা: অপেক্ষা আর কয়েকদিনের। ১ মে থেকেই দেশ জুড়ে প্রাপ্তবয়স্কদের টিকাকরণ শুরু হতে চলেছে। এরই মধ্যে প্রকাশ্যে এসেছে দেশের দুই করোনা টিকার ক্রয়মূল্যও। তবে দেশে তৃতীয় পর্যায়ের টিকাকরণ কর্মসূচি শুরু হওয়ার আগেই এ দিন বেসরকারি হাসপাতালগুলির উদ্দেশ্যে নতুন নির্দেশিকা জারি করল রাজ্য সরকার। সোমবার রাজ্যের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, আগামী ৩০ এপ্রিলের পর থেকে আর বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে টিকা দেবে না রাজ্য সরকার। সরাসরি প্রস্তুতকারী সংস্থার থেকেই তাদের ভ্যাকসিন কিনতে হবে।

কিন্তু রাজ্য সরকারের এই নতুন নির্দেশ ঘিরে ধন্দ তৈরি হয়েছে নানা মহলে। প্রশ্ন উঠছে, এর মধ্যে যারা কোভিশিল্ড বা কোভ্যাক্সিনের প্রথম ডোজ নিয়েছেন এবং দ্বিতীয় ডোজের জন্য মে মাসের যে কোনও দিন ধার্য করা হয়েছে, তাঁরা কী করবেন? এতদিন কেন্দ্রের কাছে থেকে রাজ্য সরকার যে পরিমাণ টিকা পেয়েছে, তা বেসরকারি হাসপাতালগুলির মধ্যে বণ্টন করা হয়েছে। ফলে কোউইন বা আরোগ্য সেতু অ্যাপের মাধ্যমে নাম নথিভুক্ত করিয়েই বিনামূল্যে টিকা পেয়েছেন প্রাপকরা। এখন রাজ্য যদি বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে টিকা সরবরাহ না করে, তবে তারা জরুরি ভিত্তিতে কোথা থেকে টিকা পাবে? প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলির কাছে বরাত দেওয়া হলেও তা সঙ্গে সঙ্গে এসে পৌঁছনর আশা নেই। ফলে যাদের এই সময়ের মধ্যে টিকা নেওয়ার কথা, তাঁরা কোথায় যাবেন?

বিষয়টি নিয়ে রাজ্য সরকারেরও নিজস্ব যুক্তি রয়েছে। একেই বিগত কয়েক সপ্তাহ ধরে ভ্যাকসিন সঙ্কট নিয়ে একাধিকবার সরব হতে শোনা গিয়েছিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার মধ্যে আবার কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারকে বিক্রির দামে ব্যাপক ফারাক রেখেছে টিকা উৎপাদনকারী সংস্থাগুলি। কেন্দ্রের জন্য সেরাম ও ভারত বায়োটেক উভয়েই ১৫০ টাকা দাম ধার্য করেছে। কিন্তু, রাজ্য সরকারগুলিকে ৪০০ এবং ৬০০ টাকা দামে সেই একই ভ্যাকসিন বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যা নিয়ে বিতর্কের জল ঘোলা শুরু হয়ে গিয়েছে। প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, এক দেশে একই টিকার কেন ভিন্ন ভিন্ন দাম।

আরও পড়ুন: টিকার দাম কমানো হোক আমজনতার স্বার্থে, দুই প্রস্তুতকারী সংস্থাকে আর্জি কেন্দ্রের

বিশেষত বেসরকারি হাসপাতালগুলি যে দামে টিকা বিক্রির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তা পরোক্ষে আমজনতার পকেটেই চাপ ফেলতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। কেন্দ্রকে ১৫০ টাকায় ভ্যাকসিনের ডোজ বিক্রি করলেও কোভিশিল্ডের ক্ষেত্রে ৬০০ এবং কোভ্যাক্সিনের ক্ষেত্রে ১২০০ টাকায় বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যদিও কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করা হয়েছে, তারা যে ডোজ পাবে তা রাজ্য সরকারগুলিকে বিনামূল্যেই সরবরাহ করা হবে। যদিও কবে থেকে তা হবে এবং কত পরিমাণ ভ্যাকসিন রাজ্যকে কেন্দ্র দেবে, সেই নিয়ে কোনও স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয়নি। এই অবস্থায় সোমবার আবার কেন্দ্রের পক্ষ থেকে দুই প্রস্তুতকারী সংস্থাকে আর্জি জানানো হয়েছে, তারা যেন ভ্যাকসিনের দাম কমানোর কথা ভাবে।

কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, এই অবস্থায় কেউ বেসরকারি হাসপাতালে দ্বিতীয় ডোজ নিতে গেলে তাঁকে কত টাকা দিতে হবে? টাকা দেওয়ার মতো আর্থিক সামর্থ্য থাকলেও সময়মতো টিকা পাওয়া যাবে কি? বেসরকারি হাসপাতালগুলিও কি অবিলম্বে কাঙ্খিত ডোজ পাবে? আপাতত এই সব প্রশ্নের উত্তরই ধোঁয়াশায়।

আরও পড়ুন: একদিনে রেকর্ড ৬৮ মৃত্যু, পজিটিভিটির হারে দিল্লির চেয়েও বিপজ্জনক অবস্থায় বাংলা