Afghanistan: ‘কাঁটাতারের ওপার থেকে হাত বাড়িয়েছিল মার্কিন সেনা, সেই শেষ দেখা’, ২ মাস পেরিয়েও নিখোঁজ ছোট্ট সোহেল!

Missing Baby in Afghanistan: কোলে তখন দুই মাসের শিশু, ভিড়ের চাপে যাতে একরত্তির কোনও ক্ষতি না হয়, সেই কারণে তারা ওই মার্কিন সেনার হাতে নিজের সন্তানকে তুলে দেন।

Afghanistan: 'কাঁটাতারের ওপার থেকে হাত বাড়িয়েছিল মার্কিন সেনা, সেই শেষ দেখা', ২ মাস পেরিয়েও নিখোঁজ ছোট্ট সোহেল!
দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে খোঁজ মিলছে না সোহেলের।
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Nov 06, 2021 | 9:12 AM

কাবুল: তালিবানের (Taliban) ক্ষমতা দখলের খবর মিলতেই এক নিমেষে থমকে গিয়েছিল গোটা দুনিয়া। কোনও কিছু ভাবনা-চিন্তা না করেই, পরিবারের সুরক্ষার কথা ভেবে গত ১৯ অগস্ট স্ত্রী ও পাঁচ সন্তানকে নিয়ে হাজির হয়েছিলেন কাবুল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে (Kabul International Airport)। কোলের একরত্তিটিকে ভিড়ের চাপ থেকে বাঁচাতে এক মার্কিন সেনা(US Soldier)-র হাতে তুলে দিয়েছিলেন, সেটাই শেষ দেখা। দু’মাসেরও বেশি সময় কেটে গেলেও এখনও খোঁজ মেলেনি ছোট্ট সোহেলের। তাঁর খোঁজেই পাগলের মতো ঘুরে বেড়াচ্ছেন মির্জা আলি আহমাদি ও তাঁর স্ত্রী সুরায়া।

বিগত ১০ বছর ধরে কাবুলের মার্কিন দূতাবাসে (US Embassy) নিরাপত্তারক্ষী হিসাবেই কাজ করছিলেন মির্জা আলি। গত ১৫ অগস্ট তালিবানরা আফগানিস্তান(Afghanistan)-র রাজধানী কাবুল দখল করতেই প্রাণভয়ের আশঙ্কা করেন মির্জা। মার্কিন বাহিনীর উদ্ধারকার্যের খবর শুনতেই কোনও কিছু ভাবনা চিন্তা না করেই স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে বিমানবন্দরে উপস্থিত হন তিনি। প্রবেশপথ থেকে মাত্র ১৬ ফিট দূরে যখন, সেই সময়ই কাঁটাতারের ওপার থেকে এক মার্কিন সেনা জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে, তাদের কোনও সাহায্যের প্রয়োজন রয়েছে কিনা। কোলে তখন দুই মাসের শিশু, ভিড়ের চাপে যাতে একরত্তির কোনও ক্ষতি না হয়, সেই কারণে তারা ওই মার্কিন সেনার হাতে নিজের সন্তানকে তুলে দেন।

ভেবেছিলেন দুই থেকে পাঁচ মিনিটের মধ্যেই তাঁরা সকলে বিমানবন্দরের ভিতরে ঢুকে যাবেন। কিন্তু সেই সময়ই হাজির হয় তালিবান, তারা সকলকে প্রবেশপথ থেকে সরানোর চেষ্টা করে। ধাক্কাধাক্কি করে প্রায় আধ ঘণ্টা বাদে কোনওমতে বিমানবন্দরে প্রবেশ করে মির্জা পরিবার, কিন্ত সোহেল কোথায়? গোটা বিমানবন্দর খুঁজেও কোথাও খোঁজ মেলেনি ওই দুই মাসের শিশুর।

মির্জা আলি জানান, বিমানবন্দরে ঢুকতেই তিনি ছেলের খোঁজ শুরু করেন। কমপক্ষে ২০ জনের কাছে ছেলের খোঁজ করেন। এক মার্কিন কম্যান্ডার তাঁকে জানান, বিমানবন্দর নিরাপদ না হওয়ায় তাঁকে হয়তো শিশুদের জন্য তৈরি বিশেষ জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কিন্তু সেখানে গিয়েও খালি হাতেই ফিরতে হয় মির্জা আহমাদিকে, কারণ সেখানে কেউই ছিলেন না।

ইংরেজি বলতে না পারায় ওই কম্যান্ডারের নাম না জানতে পারলেও তিনি যে গোটা বিমানবন্দর জুড়ে তাঁর সন্তানের খোঁজে ঘুরেছিলেন, তা জানাতে ভোলেননি মির্জা আলি। এক আধিকারিক তাঁকে জানান, বিমানবন্দরে শিশুদের রাখার ব্যবস্থা না থাকায়,  সোহেলকে হয়তো কোনও বিমানে করে আমেরিকা পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এরপরই মির্জা আলি, তাঁর স্ত্রী ও চার সন্তানকে প্রথমে বিমানে করে কাতার, সেখান থেকে জার্মানি হয়ে অবশেষে আমেরিকায় নিয়ে আসা হয়। বর্তমানে তারা বাকি আফগান রিফিউজিদের মতোই টেক্সাসের ফোর্ট ব্লিস সেন্টারে রয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।

নিজের সন্তানকে মার্কিন সেনার হাতে তুলে দেওয়ার কারণ হিসাবে মির্জা আলি জানান, বাকি পরিবারগুলিকেও ছোট ছোট শিশুদের ভিড়ের চাপ থেকে সুরক্ষিত রাখার জন্য মার্কিন সেনার হাতে তুলে দিতে দেখেই তিনিও একই কাজ করেন। বাকি শিশুরা মা-বাবার কোলে ফিরলেও তাঁদের সোহেলেরই কোনও খোঁজ মিলছে না বলে তিনি জানান।

আমেরিকায় আসার পরও তিনি মার্কিন আধিকারিক থেকে শুরু করে সাহায্যকারী, সকলের কাছেই ছেলের খোঁজ করেছেন বলে জানান। সকলেই সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিলেও এখনও অবধি কেউই তাঁর সন্তানকে খুঁজে দিতে পারেননি বলে আক্ষেপ প্রকাশ করেন। তবে ইতিমধ্যেই আফগান রিফিউজি গ্রুপের তরফে সোহেলের ছবি দিয়ে নিখোঁজ শিশু হিসাবে সমস্ত জায়গায় পাঠানো হয়েছে এবং খোঁজ চালানো হচ্ছে। মার্কিন প্রশাসনের তরফেও জানানো হয়েছে শিশুটিকে খুঁজে বের করার যথাসাধ্য চেষ্টা করা হচ্ছে।