Taliban: ১৫ অগস্ট ‘স্বাধীনতা’ দিবসের ছুটি দিল তালিবান, কেমন কাটল এক বছর?

Taliban Afghanistan: ১৫ অগস্ট জাতীয় ছুটি ঘোষণা করে আফগানিস্তানে তাদের ক্ষমতা পুনর্দখলের প্রথম বার্ষিকী পালন করল তালিবান।

Taliban: ১৫ অগস্ট 'স্বাধীনতা' দিবসের ছুটি দিল তালিবান, কেমন কাটল এক বছর?
আফগান মহিলারাই তালিবানদের সবথেকে বড় ভয়
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Aug 15, 2022 | 10:09 PM

কাবুল: ১৫ অগস্ট যখন ভারতের সঙ্গে সঙ্গে সারা বিশ্ব বিশ্বের সবথেকে বড় গণতন্ত্রের ৭৫তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করছে, সেই একই দিনে আফগানিস্তানে তাদের ক্ষমতা পুনর্দখলের প্রথম বার্ষিকী পালন করল তালিবানরা। গত এক বছরে সেই দেশে মহিলাদের প্রায় সব অধিকারই কেড়ে নেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে মানবিক বিপর্যয় আরও গভীরতর হয়েছে। সংবাদ সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, এর মধ্যেই সোমবার ক্ষমতা পুনর্দখলের এক বছর উপলক্ষে জাতীয় ছুটি ঘোষণা করেছিল তালিবান সরকার।

তালিবান যোদ্ধা নিয়ামতুল্লাহ হেকমত এখন রাষ্ট্রপতির প্রাসাদ রক্ষাকারী এক বিশেষ বাহিনীর সদস্য। সংবাদ সংস্থা এএফপিকে তিনি বলেছেন, “আমরা জিহাদের বাধ্যবাধকতা পূরণ করেছি এবং আমাদের দেশকে স্বাধীন করেছি। যে সময় আমরা কাবুলে প্রবেশ করেছিলাম এবং আমেরিকানরা এই দেশ ছেড়ে চলে গিয়েছিল, সেই সময়টি ছিল অত্যন্ত আনন্দের মুহূর্ত।” আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলের প্রথম বার্ষিকীতে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে এক বিশেষ অনুষ্ঠানও সম্প্রচারিত হয়। তালিবানদের পক্ষ থেকে নাগরিকদের মধ্যে উপহার বিলি করতেও দেখা গিয়েছে।

তালিবান যোদ্ধারা আফগানিস্তান পূনর্দখলের এক বছর পূর্তিতে ব্যাপক ফুর্তিতে থাকলেও, তাদের শাসনে নাজেহাল দশা সাধারণ আফগান নাগরিকদের। মানবাধিকার সংস্থাগুলির অনুমান, দেশের অন্তত ৩ কোট ৮০ লক্ষ বাসিন্দার অর্ধেকই এখন ভয়ানক দারিদ্র্যের সঙ্গে যুঝছে। কাবুলের এক বাসিন্দার কথায় “যেদিন থেকে ওরা এসেছে, জীবনের আর কোনও অর্থই নেই। আমাদের সবকিছু ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। এমনকি, ওরা আমাদের ব্যক্তিগত পরিসরেও প্রবেশ করেছে।” মূল্যবৃদ্ধি এমন স্তরে পৌঁছেছে যে, তালিবানদের মূল ঘাঁটি কান্দাহারের দোকানদাররাই বলছেন, মাল বেচতে গিয়ে তাদের নিজেদের প্রতিই ঘৃণা হচ্ছে।

তবে তালিবানদের প্রত্যাবর্তনে সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছে আফগান মহিলাদের। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তাদের প্রথম শাসনামলে সাধারণ আফগানদের উপর, বিশেষ করে মহিলাদের উপর নৃশংস ইসলামি শাসন কায়েম করেছিল তালিবানরা। গত বছর ক্ষমতা পুনর্দখলের সময়ে তারা অনেক বেশি নরমপন্থী হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। তবে, কার্যক্ষেত্রে তাদের কঠোর ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মহিলাদের উপর বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। মেয়েদের প্রাথমিক শিক্ষার পর পড়াশোনা করা কার্যত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কর্মক্ষেত্রে ফিরতে বাধা পেয়েছেন বহু মহিলা। তাঁদের আপাদ মস্তক ঢেকে বাইরে বের হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এমনকি, শনিবারই কাবুলে আফগান মহিলাদের এক প্রতিবাদ সমাবেশে চড়াও হয় তালিবান যোদ্ধারা। বিক্ষোভকারী মহিলাদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিপেটা করা এবং রাইফেল থেকে বাতাসে গুলি ছোড়া হয়।

এর এক বছর আগে, কট্টরপন্থী ইসলামী গোষ্ঠিটি কাবুল দখল করেছিল। ঠিক তার আগে মার্কিন নেতৃত্বাধীন পশ্চিমী শক্তির আফগানিস্তানে ২০ বছরের সামরিক অভিযানের অবসান ঘটেছিল। চোখের নিমেষে আফগান সরকারি বাহিনীকে পরাস্ত করে গোটা দেশ পুনর্দখল করেছিল তালিবান। তৎকালীন আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন। তার কয়েক ঘন্টা পরই তালিবানরা আফগানিস্তানের ‘স্বাধীনতার’ ঘোষণা করেছিল।

পশ্চিমী শক্তি আগেই সেনা প্রত্যাহারের কথা ঘোষণা করলেও, সব বিদেশী সৈনিক এবং কর্মীদের সরিয়ে নিয়ে যেতে যেতে ৩১ অগস্ট হয়ে গিয়েছিল। সেই সময় পর্যন্ত কোনও একটি উড়ান ধরে যে কোনও উপায়ে আফগানিস্তান থেকে পালাবার জন্য হাজার হাজার আফগান নাগরিক ভিড় জমিয়েছিলেন কাবুল বিমানবন্দরে। এমনকি বেশ কিছু লোককে মার্কিন সামরিক কার্গো জেটবিমানের চাকা আঁকড়ে দেশ ছাড়া চেষ্টা করতেও দেখা গিয়েছিল। অনেকর উচ্চতা থেকে তাদের পড়ে যাওয়ার ভিডিয়ো বিশ্বব্যাপী টেলিভিশনে প্রচারিত হয়েছিল।