Galwan Clash : লুকোনো হয়েছে মৃত সেনার সংখ্যা, গালোয়ান সংঘর্ষে চিনের বোল খুলল অস্ট্রেলিয়ান সাংবাদিক
Galwan Clash : অস্ট্রেলিয়ার সংবাদপত্র 'দ্য় ক্ল্যাক্সন'এর একটি তদন্তমূলক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে ২০২০ সালের গালওয়ান সংঘর্ষে চিনের তরফে অনেকটাই ক্ষতি হয়েছে।
সিডনি : প্রায় দেড় বছর আগে গালোয়ান উপত্যকায় ভারতীয় সেনা ও চিনের পিপলস লিবারেশন আর্মি সংঘর্ষ জড়িয়েছিল। সেই সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছিলেন চিনা সৈনিক। শহিদ হয়েছিলেন বহু ভারতীয় সেনা জওয়ান। এই সংঘর্ষে চিনা সৈনিকের মৃত্য়ুর সংখ্যা নিয়ে চাঞ্চল্যকর দাবি করলেন অস্ট্রেলিয়ার এক সংবাদপত্রের সাংবাদিক। হিন্দুস্তান টাইমসের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, অস্ট্রেলিয়ার সংবাদপত্র ‘দ্য় ক্ল্যাক্সন’এর একটি তদন্তমূলক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে ২০২০ সালের গালোয়ান সংঘর্ষে চিনের তরফে অনেকটাই ক্ষতি হয়েছে। এই প্রতিবেদন বলা হয়েছে, গালোয়ান সংঘর্ষে চিনের সরকারের তরফে যে সংখ্যক চিনা সেনার প্রাণ হারানোর তথ্য দেওয়া হয়েছিল তা মিথ্যে। চিনের সরকারের তরফে প্রকাশিত মৃতের সংখ্যার থেকে আরও বেশি সংখ্যক চিনা সেনা প্রাণ হারিয়েছিলেন সেই সংঘর্ষে।
প্রসঙ্গত, গালোয়ান সংঘর্ষে চিন মৃতদের সঠিক সংখ্যা প্রকাশ না করলেও চারজন চিনা সেনাকে মরণোত্তর মেডেল দিয়েছে। তবে অস্ট্রেলিয়ার সেই সংবাদপত্রের দাবি, চিনের ৩৮ জন সেনা গালোয়ান উপত্যকায় প্রাণ হারিয়েছিলেন। এই তদন্তের জন্য ‘দ্য় ক্ল্যাক্সন’ নিজেদের একটি সোশ্যাল মিডিয়া টিম গঠন করেছিল। সেই সোশ্যাল মিডিয়া গবেষকরা খুঁজে বের করেছেন যে ৪ জনের বেশি চিনা সেনা প্রাণ হারিয়েছেন। বেজিংয়ের তরফে কেবলমাত্র চারজন সেনাকেই সংঘর্ষে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়েছিল। এই গবেষণার ফলাফলের উপর ভর করেই অস্ট্রেলিয়ার সংবাদপত্রে “গালোয়ান ডিকোডেড” শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ পেয়েছে। এই প্রতিবেদন লেখার জন্য এক বছরেরও বেশি সময় ধরে তথ্য় সংগ্রহ করা হয়েছে। চিনের কিছু ব্লগারের, নাগরিক এবং সংবাদ মাধ্যমের বিভিন্ন প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। তবে বেজিংয়ের তরফে এই প্রতিবেদনগুলো মুছে দেওয়া হয়েছিল।
এই তদন্তে দাবি করা হয়েছে, জুনের প্রথম দিকে, ১৫-১৬ জুন নাগাদ অনেক চিনা সেনা দ্রুত প্রবাহিত গালোয়ান নদীতে সাঁতার কাটতে গিয়ে মারা গিয়েছিলেন।
এই তদন্ত থেকে কী কী উঠে এসেছে?
- প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ১৫ জুন একটি অস্থায়ী সেতু নির্মাণ নিয়ে যুদ্ধ শুরু হয়েছিল। ২০২০ সালের মে মাসে গালোয়ান নদীর উপর ভারত সেই সেতুটি তৈরি করে। অন্যদিকে এপ্রিলে পিএলএ এর পাল্টা হিসেবে চিন ‘বাফার জ়োনে’ নির্মাণ কাজ শুরু করে।
- ৬ জুন ৮০ জন পিএলএ সেনা ভারতের দিকে তৈরি করা সেতুটি ভেঙে ফেলতে আস। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১০০ জন ভারতীয় সেনা তা তাঁদের রুখতে সেখানে যান।
- তারপর ঠিক হয়, বাফার জ়োন যাঁরা অতিক্রম করে গিয়েছেন তাঁরা সবাই ফিরে যাবেন। তদন্তমূলক এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “পিএলএ তাঁদের প্রতিশ্রুতি রাখেনি…চুক্তি মতো নিজেদের কাঠামো বিনষ্ট না করে পিএলএ চুপিচুপি ভারতীয় সেনার তৈরি করা সেতুটি নষ্ট করে দেয়। “
- ১৫ জুন কর্নেল সন্তোষ বাবু তাঁর ট্রুপ নিয়ে সেই বিতর্কিত এলাকা পরিদর্শনে আসেন। সেখানে কর্নেল কি ফ্যাবাওয়ের নেতৃত্বে উপস্থিত ছিল চিনা সেনাও।
- এই প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই বিষয়টি নিয়ে কথা বলার পরিবর্তে কর্নেল ফ্যাবাও তাঁর সেনাদের প্রস্তুত হতে বলেন।
- কর্নেল ফ্যাবাও আক্রমণ করার সঙ্গে সঙ্গে ভারতীয় সেনা তাঁকে আটক করে নেয়। কর্নেলকে বাঁচাতে পিএলএ ব্যাটালিয়ন কমান্ডার চেন হংজুন এবং পিএলএ সেনা চেন জিয়াংরং ভারতীয় সেনাদের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়েন। তখনই স্টিলের পাইপ, কাঁটা লাগানো লাঠি দিয়ে ভারতীয় জওয়ানদের বিরুদ্ধে হামলা চালায় চিনা সেনা। এই সময় পিএলএ-র জিয়াও সিউয়ান নামক এক সেনা পুরো ঘটনা ক্যামেরাবন্দি করছিলেন। তবে সংঘাত বাড়তে থাকায় তিনিও ক্যামেরা রেখে লড়াই করতে নামেন। পরে ভারতীয় জওয়ানের আঘাতে সে গুরুতর ভাবে জখম হয়। পরে তাঁর মৃত্যু হয়।
- এরপরই চিনা সেনারা পালাতে শুরু করে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “পিএলএ সেনাদের ওয়াটার প্যান্ট পরার সময়টুকুও ছিল না। রাতের অন্ধকারে নদীর ঠান্ডা বরফ জলে ওয়াং ঝুয়োরানের নেতৃত্বে পারাপার শুরু করেন।”
- প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হঠাৎ করেই নদী ফুলে ফেঁপে ওঠে। জখম সেনারা সেই স্রোতে ভেসে যায়। ওয়াংয়ের সঙ্গে ৩৮ জন সেনা ভেসে যায়। তবে চিনের তরফে ঘোষিত চারজন নিহত সেনার মধ্যে ওয়াংয়ের নাম ছিল। কিন্তু বাকি ৩৮ জনের কোনও হিসেব ছিল না।