Bangladesh: ঘরের পাশেই ‘ভারত বয়কটে’র ডাক, কিন্তু সাড়া মিলছে কই? চিনের ষড়যন্ত্র?

Bangladesh: বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। তারা এবং আরও কয়েকটি বিরোধী দল সরাসরি ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দিয়েছে। যদিও, এই ডাকে সাড়া খুব একটা মিলছে না। কিন্তু হঠাৎ, ভারত বয়কটের ডাক উঠল কেন? কারা রয়েছে এর পিছনে?

Bangladesh: ঘরের পাশেই 'ভারত বয়কটে'র ডাক, কিন্তু সাড়া মিলছে কই? চিনের ষড়যন্ত্র?
ছকটা চেনা হয়ে গিয়েছে সকলের, তাই আর চলছে নাImage Credit source: TV9 Bangla
Follow Us:
| Updated on: Apr 12, 2024 | 2:01 PM

কলকাতা ও ঢাকা: ঘরের পাশেই যেন আরেক মলদ্বীপ। সম্প্রতি, বাংলাদেশে ভারত বয়কটের ডাক দেওয়া হয়েছে। বেশ কিছুদিন ধরে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভারতীয় পণ্য বর্জন করার জন্য একটা প্রচার চলছিল। অজ্ঞাত পরিচয়-ভুয়ো সব অ্যাকাউন্ট থেকে এই প্রচার চালানো হচ্ছিল। এখন, তা রাজনৈতিক চেহারা পেয়েছে। ভোটে অংশ না নিলেও, শক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। তারা এবং আরও কয়েকটি বিরোধী দল সরাসরি ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দিয়েছে। যদিও, এই ডাকে সাড়া খুব একটা মিলছে না। ইদের আগে, বাংলাদেশের দোকানে দোকানে যেমন বিক্রি হচ্ছে ভারতীয় সামগ্রী, তেমনই ভারত থেকেও ব্যাগ ভর্তি করে ভারতীয় পণ্য কিনে দেশে ফিরছেন বাংলাদেশিরা। কিন্তু হঠাৎ, ভারত বয়কটের ডাক উঠল কেন? আসুন বিষয়টা বুঝে নেওয়া যাক –

বয়কট ভারত

বেশ কিছুদিন ধরে সুনির্দিষ্ট কিছু ভারতীয় পণ্য বর্জনের পক্ষে বাংলাদেশের সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার চলছিল। এই বিষয়ে বেশ কিছু গ্রুপও খোলা হয়। এই গ্রুপগুলিতে বহু মানুষ সদস্যও হন। এই গ্রুপগুলিতে অনেকেই দাবি করেন, তাঁরা ভারতীয় পণ্যের বদলে দেশিয় বা অন্য দেশের (বিশেষ করে চিনের) পণ্য ব্যবহার করা শুরু করেছেন। ভারত থেকে আমদানি করা নিত্য ব্যবহারের বিভিন্ন ভোগ্যপণ্যের ব্যবহার বন্ধ করে, সেগুলির বাংলাদেশি বিকল্প বা অন্য দেশের পণ্য ব্যবহারের ডাক দেওযা হয়। সাবান, শ্যাম্পু, ফেসওয়াশ, টুথপেস্ট, পানীয় জল, সফট ড্রিঙ্কস, গাড়ি, মোটরসাইকেল, শিশুখাদ্য, জীবাণুনাশক, মশানাশকের মতো বিভিন্ন পণ্যের তালিকা দেওয়া হয়। এখন রাজনৈতিক দলগুলি সরাসরি এই প্রচার চালাচ্ছে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় চলছে ভারত বিরোধী প্রচার

কেন ভারত বয়কট?

বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল, বাংলাদেশ ন্যাশনাল পার্টি বা বিএনপির দাবি, ভারত বয়কট আন্দোলন জনগণের মধ্য থেকে উঠে এসেছে। তারা এই আন্দোলনকে সমর্থন করছে মাত্র। তাদের অভিযোগ, বছরের শুরুতে বাংলাদেশের নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করেছে ভারত সরকার। নির্বাচনে সরকার পক্ষ, অর্থাৎ, শেখ হাসিনাকে সহযোগিতা করেছে নয়া দিল্লি। আর তাই, জনগণ ভারতীয় পণ্য বয়কটের ডাক দিয়েছে। বিএনপি তাতে সংহতি জানিয়েছে।

ভারত বিরোধী প্রচারের পিছনে চিনের ষড়যন্ত্র?

জনগণের আন্দোলন?

রমজান মাসের মাঝামাঝি থেকে, সদর স্ট্রিটের মতো কলকাতার বাংলাদেশি পর্যটক অধ্যুষিত এলাকাগুলি ফাঁকা হতে থাকে। যারা বিভিন্ন কাজ নিয়ে বাংলাদেশ থেকে কলকাতায় আসেন, তাঁরা এই সময়টায় কলকাা থেকে প্রিয়জনের জন্য কেনাকাটা সেরে বাড়ি ফেরেন। শাড়ি, জামাকাপড়, মশলা, ড্রাইফ্রুট – আরও অনেক ধরনের পণ্য নিয়ে যান তাঁরা। এবারেও সেই সংখ্যাটায় কোনও কমতি দেখা যায়নি। বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমের রিপোর্টেই বলা হয়েছে, কলকাতা থেকে দেশে ফেরা লোকজন সাফ জানিয়েছেন, প্রতিবেশী দুই দেশের মানুষের মধ্যে বন্ধুত্ব ছিল এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। তাঁরা আরও বলেছেন, বয়কটের ডাক যারা দিচ্ছে, তারাও ভারতীয় পণ্যই ব্যবহার করে। বাংলাদেশে ভারতীয় পণ্য আমদানি বা খুচরা বিক্রির ক্ষেত্রেও এই প্রচারের কোনও প্রভাব পড়েনি। সবথেকে বড় কথা বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ভারত থেকে বাংলাদেশ সবথেকে বেশি  আমদানী করে শিল্পের কাঁচামাল। ভোগ্যপণ্য কমই যায়। তাই, এই প্রচার এক প্রকারে অর্থহীন। শিল্পের কাঁচামাল, আগের মতোই ভারত থেকে যাচ্ছে বাংলাদেসে। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকেও এই প্রচারের তীব্র নিন্দা করা হয়েছে। সরকার এই প্রচারকে উন্মাদনা তৈরির চেষ্টা বলেছে।

নেপথ্যে চিন?

আম বাংলাদেশিরা যখন এই প্রচারের সঙ্গে সহমত নন, তাহলে এই ডাক দিল কে? সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার নিঃসন্দেহে বিএনপির মতো বিরোধী দলগুলিই চালাচ্ছে। আর যে নকশায় এই প্রচর চলছে, তাও বেশ চেনা বলে মনে করছেন কুটনৈতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলছেন, এই একই ছক দেখা গিয়েছিল এক বছর আগে মলদ্বীপে, মহম্মদ মুইজ্জুর ‘ইন্ডিয়া আউট’ প্রচারে। একইভাবে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার চলেছিল। তারপর, তা নিয়েছিল রাজনৈতিক রূপ। বাংলাদেশে ভারতীয় পণ্য ব্যবহার বন্ধ করতে পারলে, দেশিয় পণ্যের দাম যে বাড়বে। এর জন্যই এই প্রচার চলছে, বাংলাদেশের মন্ত্রীরাই তা বলছেন। আর সেটা হলে, সস্তার চিনা পণ্যে বাংলাদেশের বাজার ভরানো অনেক সহজ হবে। তার থেকেও বড় বিষয় হল, বিরোধী দলগুলিকে দিয়ে ভারত বিরোধী প্রচার চালানো। যাতে, ভারতের আশপাশের প্রতিটি দেশ, তাদের বাজানো সুরে নাচে। নেপালেও এর আগে বিরোধী দলকে দিয়ে একই ধরণের চেষ্টা করা হয়েছিল। মুইজ্জুর উদাহরণ তো একেবারেই সাম্প্রতিক। বারবার ব্যবহারে, ছকটা বোধহয় কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলেছে। বাংলাদেশে চলছে না। বেজিংয়ের ফাঁদে পা দিচ্ছেন না বাংলাদেশি বন্ধুরা।