Bangladesh Fire: বাংলাদেশের বিস্ফোরণ-অগ্নিকাণ্ড একনজরে: বেড়েই চলেছে মৃত্যুর মিছিল
Bangladesh Fire Update: বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ডের এক কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণ এবং অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মৃত্যু মিছিল বেড়েই চলেছে। এক নজরে জেনে নিন সব আপডেট।
ঢাকা: বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ডের এক কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণ এবং অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মৃত্যু মিছিল বেড়েই চলেছে। শনিবার রাত ৭টা নাগাদই ওই ডিপোতে আগুন লেগেছিল বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ। এরপর রাত ১১টা নাগাদ সেখানে একটি প্রচণ্ড বিস্ফোরণ হয়েছিল। আশপাশের অন্তত চার বর্গকিলোমিটার পর্যন্ত এলাকা কেঁপে উঠেছিল। ভেঙে যায় বহু বাড়িঘরের জানালার কাচ। বিস্ফোরণের পর এখনও সেখানে আগুন জ্বলছে। আগুন নেভানোর নিরন্তর চেষ্টা করছেন দমকল কর্মীরা।
নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৪৯
রবিবার রাত পর্যন্ত আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৯ জন। আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ নিযুক্ত রয়েছে দমকলের ২৫টি ইঞ্জিন। তবে নিরন্তর কাজ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন কর্মীরা।
বিস্ফোরণে আহত পুলিশ, দমকল কর্মীরা
জানা গিয়েছে, শনিবার রাত ৯টা নাগাদ ওই কনটেইনার ডিপোতে আগুন লাগার খবর পেয়েই পৌঁছেছিল পুলিশ ও দমকল। জড়ো হয়েছিলেন সাংবাদিকরাও। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার কাজ করার সময়ই একটি কনটেইনারে প্রচণ্ড শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। বহু দমকল কর্মী, পুলিশকর্মী, সাংবাদিক আহত হন। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, আচমকা আগুনে ঝলসে যান অনেকে।
একের পর এক বিস্ফোরণ
প্রথম বিস্ফোরণের পর, শনিবার গোটা রাত একের পর এক ছোট ছোট বিস্ফোরণ হয়েছে। রবিবার দুপুর ১টা পর্যন্ত ডিপো থেকে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গিয়েছে। ফলে, তার আগে পর্যন্ত মূল এলাকায় ঢুকতেই পারেনি দমকল।
বিষাক্ত ধোঁয়া
এদিকে, আগুন নেভানোর জন্য রীতিমতো যুদ্ধ করতে হচ্ছে দমকল কর্মীদের। কারণ, রাসায়নিক বিস্ফোরণের পর একটা বিরাট এলাকা জুড়ে বিষাক্ত ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়েছে। সেই ধোঁয়ায় কাজ করতে গিয়ে চোখ লাল হয়ে গিয়ে জল পড়ছে, নিশ্বাসের কষ্ট হচ্ছে, অনেকের বমিও হয়েছে। ধোঁয়ার কারণে অসুস্থ হয়ে পড়ায় দমকল বাহিনীর কয়েকজনকে হাসপাতালে ভর্তি করতেও হয়েছে।
সমস্যায় বাসিন্দারা
জানা গিয়েছে কনটেইনার ডিপোটি সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি শহরের মধ্যে হলেও, এলাকাটি মূল শহরাঞ্চলের বাইরে। বহুতল ভবন কম থাকলেও, আশপাশে জনবসতি কম নেই। বিস্ফোরণের অভিঘাতে অনেকেরই ঘরের জানালার কাচ, দরজা ভেঙে যাওয়ার পাশাপাশি অনেকের বাড়ির টিভি, ফ্রিজ ও ফ্যান খারাপ হয়ে গিয়েছে। তবে, সেখানকার বাসিন্দারা আরও সমস্য়ায় পড়েছেন বিষাক্ত রাসায়নিক ধোঁয়ার কারণে। ঘরে টেকাই দায় হয়ে পড়েছে। বাধ্য হয়ে মুখে কাপড় বেঁধে রয়েছেন তাঁরা।
ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী
উদ্ধার অভিযানে সহায়তা করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীও। জানা গিয়েছে ২৫০ জন জওয়ানকে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে। আগুন নিয়ন্ত্রণ সহায়তা করছে সেনাবাহিনীর একটি রাসায়নিক বিশেষজ্ঞ দলও। এছাড়া, আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত রাসায়নিক সামগ্রী সমুদ্রে যাতে ছড়িয়ে না পড়ে, তা দেখার জন্য রয়েছেন সেনার ইঞ্জিনিয়াররাও। আহতদের চিকিৎসায় নিয়োজিত রয়েছে সেনার একটি মেডিকেল টিমও।
কীভাবে ঘটল বিস্ফোরণ?
রবিবার ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসেছিলেন চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান। তিনি বলেন, ডিপোতে হাইড্রোজেন পারক্সাইড ভর্তি মোট ২৬টি কনটেইনার ছিল। সেই সঙ্গে প্লাস্টিকের জারেও ওই রাসায়নিক ভরা ছিল। আগুন লাগার পর সম্ভবত কনটেইনারে থাকা রাসায়নিকভর্তি জার ফেটে যায়। ফলে, হাইড্রোজেন পারক্সাইড বের হয়ে কনটেইনারের সংস্পর্শে আসে। এদিকে আগুনের সংস্পর্শে কনটেইনারের তাপমাত্রা গিয়েছিল। ফলে অক্সিজেন নির্গত হয়ে চাপ বেড়ে গিয়ে কনটেইনারটিতে বিস্ফোরণ ঘটে এবং সেটি স্প্রিন্টারের মতো ছড়িয়ে পড়ে। সেই সঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে আগুন।
উধাও মালিকপক্ষ
এদিকে এখনও পর্যন্ত ঘটনাস্থলে দেখা নেই ডিপোর মালিক বা কোনও কর্মকর্তার। ফলে, সেখানে হাইড্রোজেন পারক্সাইড ছাড়া অন্য কোনও রাসায়নিক রয়েছে কিনা, তা বুঝতে পারছে না উদ্ধারকারীরা। জল দিয়ে সব ধরনের রাসানিক আগুন নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। কী ধরণের রাসায়নিকের মোকাবিলা তারা করছে, বুঝতে না পারায় আগুন নিয়ন্ত্রণে সময় বেশি লাগছে।
নিহতদের পরিবারকে ২ লক্ষ টাকার এক্স গ্রাসিয়া
বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডে নিহত শ্রমিকদের প্রত্যেকের পরিবারের জন্য দুই লক্ষ টাকা করে এক্স গ্রাসিয়া দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ সরকার। পাশাপাশি, আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন তহবিল থেকে ৫০ হাজার টাকা করে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন বাংলাদেশের শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান। প্রয়োজনে চিকিৎসার জন্য আরও অর্থ সহায়তা করার কথাও জানানো হয়েছে।
এত বড় দুর্ঘটনা আর ঘটেনি
বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ২৪ বছর আগে প্রথম কনটেইনার শিল্প শুরু হয়েছিল। তারপর থেকে কোনও কোনও ডিপোতে ছোটখাটো অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছিল। এটি বাংলাদেশে এই শিল্পের ইতিহাসে সবথেকে বড় দুর্ঘটনা।