Durga Puja in Bangladesh: ‘উৎসবের আনন্দ সবার মধ্যে ছড়িয়ে পড়ুক’, মহালয়ার সকালে মঙ্গলদ্বীপ জ্বালিয়ে বার্তা হাসিনার মন্ত্রীর
Durga Puja in Bangladesh: এ বছর অত্যন্ত আনন্দঘন পরিবেশে সমগ্র দেশে পূজা উদযাপন এবং প্রতিমা বিসর্জন হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের মন্ত্রী হাছান মাহমুদ। দুর্গা উৎসবের আনন্দ সবার মধ্যে ছড়িয়ে পড়ুক, সেই আনন্দ সারাবছর ছড়িয়ে থাকুক এবং বাংলাদেশ আনন্দময় হোক, শান্তিময় হোক, সেই আশাপ্রকাশ করেন তিনি।
ঢাকা: শুভ মহালয়া আজ। শারদীয় দুর্গোৎসবের পূণ্যলগ্ন। রবিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) শুরু দেবীপক্ষের আগমন বার্তা। আর তাই বাংলাদেশ জুড়েই শারদীয় দুর্গোৎসবের শুরু হয়েছে রঙিন আবহে। চণ্ডীপাঠের মধ্য দিয়ে দেবী দুর্গার আবাহনই মহালয়া। আর এই ‘চণ্ডী’তেই আছে দেবী দুর্গার সৃষ্টির বর্ণনা এবং দেবীর প্রশস্তি। শারদীয় দুর্গাপূজার গুরুত্বপূর্ণ একটি অনুষঙ্গ হল এই মহালয়া। ধর্মগ্রন্থ ও পুরাণমতে, এদিন দেবী দুর্গার আবির্ভাব ঘটে। এই দিনই দুর্গাপূজার দিন গণনা শুরু হয়। মহালয়া মানেই মায়ের পূজার জন্য প্রতীক্ষা। আর এই দিনেই দেবীর চক্ষুদান করা হয়।
বাংলাদেশে ১ অক্টোবর থেকে ষষ্ঠীপূজার মাধ্যমে দুর্গাপূজা শুরু হলেও মূলত আজ থেকেই দুর্গাপূজার আগমনধ্বনি শুনতে পাওয়া যাবে। দুর্গাপূজার এই সূচনার দিনটি সারা বাংলাদেশে বেশ আড়ম্বরের সঙ্গে উদযাপিত হবে। এখন চলছে শেষ মুহুর্তের প্রস্তুতি। মহিষাসুরমর্দিনী দেবী দুর্গা সমস্ত অশুভ শক্তি বিনাশের প্রতীক রূপে পূজিত। মহামায়া অসীম শক্তির উৎস। মহালয়ার আর একটি দিক হচ্ছে, এই মহালয়া তিথিতে যারা পিতৃ-মাতৃহীন তারা তাদের পূর্বপুরুষের স্মরণ করে তাদের আত্মার শান্তি কামনা করে অঞ্জলি প্রদান করেন।
হিন্দু সনাতন ধর্ম অনুসারে, এই দিনে প্রয়াতদের আত্মা মর্ত্যে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। প্রয়াতদের আত্মার এই সমাবেশকেই মহালয়া বলা হয়। মহালয় থেকে মহালয়া। পিতৃপক্ষেরও শেষদিন এটি। এই উপলক্ষে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার ঢাকেশ্বরী মন্দিরে আয়োজন করা হয় বড় ধরনের এক অনুষ্ঠানের। এতে হিন্দু সম্প্রদায়ের বিভিন্ন মানুষদের পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রীরাও অংশ নেন। এই সময় সবাই শারদীয় দুর্গাপুজা উপলক্ষে সব আয়োজন এবং প্রয়োজণীয় ব্যবস্থায় সন্তোষ প্রকাশ করেন।
তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী মহালয়ার এই অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে বলেন, “বাংলাদেশ সব ধর্মের মানুষের। ধর্ম আলাদা হতে পারে, কিন্তু উৎসব সবার।” এতে কেউ বিঘ্ন ঘটাতে আসলে তাদের পরিণতি ভয়াবহ হবে বলেও স্পষ্ট জানিয়ে দেন মন্ত্রী। তিনি আরও জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহ বর্তমান সরকার যে কোনও ধরনের সাম্প্রদায়িক কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছে। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, “যে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বাংলাদেশ রাষ্ট্র রচিত হয়েছে, সেই ভিত্তি মজবুত করতে সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে রুখে দিতে হবে।” রবিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর পূজা মণ্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজার সূচনাপর্ব শুভ মহালয়া অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এই আহ্বান জানান।
এ দিন ভোর ৬টা ২ মিনিটে মঙ্গলপ্রদীপ প্রজ্বলন করা হয়। শিল্পী মানস সেনগুপ্তের সঞ্চালনায় ফাউন্ডেশনের সভাপতি পান্না লাল দত্ত, সাধারণ সম্পাদক প্রাণকৃষ্ণ ঘোষ, শিল্পী লাল দত্ত প্রমুখ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। নিরবচ্ছিন্নভাবে বনানীতে পূজা আয়োজনের জন্য আয়োজকদের ধন্যবাদ জানিয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, “হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, ইসলাম সব ধর্মের মূল মর্মবাণী মানুষে মানুষে ভ্রাতৃত্ব ও সম্প্রীতি স্থাপন এবং মানুষের কল্যাণকে চেতনায় ধারণ ও অনুশীলন করলে দেশ, সমাজ, পৃথিবী অনেক শান্তিময় হত, ধর্মের ভিত্তিতে হানাহানি থাকত না। আমাদের দেশে যে অপশক্তি সাম্প্রদায়িকতা ছড়াতে চায়, মাঝে মধ্যে ফণা তুলে দাঁড়াতে চায়, ছোবল মারতে চায় সেই অপশক্তিকে সবাই মিলে দমন করতে হবে। তাহলেই যে চেতনার ভিত্তিতে রাষ্ট্র রচিত হয়েছে সেই রাষ্ট্র ব্যবস্থার ভিত আমরা আরও মজবুত করতে পারব।”
তথ্যমন্ত্রী বলেন, “আমাদের দেশ রচিত হয়েছে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সবার মিলিত সংগ্রাম এবং মিলিত রক্তের স্রোতের বিনিময়ে। সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র ব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে এসে একটি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র রচনার জন্যই আমরা হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সবাই একযোগে লড়াই করেছি। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যার নেতৃত্বে এই দেশ রচিত হয়েছে সেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ’৭৫ সালে হত্যা করার পর যে চেতনার ভিত্তিতে দেশ রচিত হয়েছিল সেই চেতনায় আঘাত হানা হয়েছে, ভূলুণ্ঠিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। রাষ্ট্রকে আবার সাম্প্রদায়িক বানানোর অপচেষ্টা চালানো হয়েছে।”
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার রাষ্ট্রের যে মূল চেতনার ওপর যে আঘাত হানা হয়েছিল, সেটিকে পুনরুদ্ধার করে মূল চেতনায় ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে কাজ করছে উল্লেখ করে সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, “যারা এই রাষ্ট্রকে সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে রূপান্তরিত করতে চেয়েছে তারা এখনও সাম্প্রদায়িক হানাহানি ছড়ায়, সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প ছড়ায় এবং তাদের বিরুদ্ধে আমাদের সরকার কঠোর ব্যবস্থা সবসময় গ্রহণ করেছে। দেশে একটি রাজনৈতিক পক্ষ আছে যারা সাম্প্রদায়িকতাকে নিয়ে অপরাজনীতি করে। তাদের ব্যাপারে আমাদের সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।”
মন্ত্রী হাছান বলেন, “আপনারা লক্ষ্য করুন, আমাদের দেশে প্রতিবছর পূজামণ্ডপের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। এটির কারণ হচ্ছে, মানুষের মধ্যে উৎসাহ উদ্দীপনা আছে, মানুষের সামর্থ্য আছে এবং একইসাথে সরকার আপনাদের পাশে আছে। এই তিনটি কারণে প্রতিবছর পূজামণ্ডপের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। গতবছর বিভিন্ন জায়গায় পূজার সময় গণ্ডগোল করার চেষ্টা করা হয়েছিল এরপরও গত বছরের তুলনায় এ বছর পূজামণ্ডপের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। এটা অত্যন্ত উৎসাহব্যঞ্জক।” এ বছর অত্যন্ত আনন্দঘন পরিবেশে সমগ্র দেশে পূজা উদযাপন এবং প্রতিমা বিসর্জন হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। দুর্গা উৎসবের আনন্দ সবার মধ্যে ছড়িয়ে পড়ুক, সেই আনন্দ সারাবছর ছড়িয়ে থাকুক এবং বাংলাদেশ আনন্দময় হোক, শান্তিময় হোক, সেই আশাপ্রকাশ করেন তথ্যমন্ত্রী।