কালী পুজোর উদ্বোধনে থাকায় ক্ষমাভিক্ষা সাকিবের! অক্সিজেন পেল কট্টরপন্থীরা
TV9 বাংলা ডিজিটাল: সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করলেন সাকিব। হতে পারতেন ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী ও সংস্কৃতির মেল বন্ধনের সর্বোচ্চতম দূত, সোনালি সুযোগ অপচয় করলেন বাংলাদেশের তারকা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান (Shakib Al Hasan)। একই সঙ্গে নিজের অজান্তেই উৎসাহ জোগালেন কট্টরপন্থীদের। কলকাতায় (Kolkata) এসে কালী পুজোর (Kali Puja) উদ্বোধনে থাকা কি অন্যায়? যদি অন্যায় না-ই হয়ে থাকে, তাহলে […]
ঘটনার সূত্রপাত
কাকুরগাছিতে নিজের পুজো উদ্বোধনে বিশ্ব ক্রিকেটের তারকা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানকে নিমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক পরেশ পাল (Paresh Paul)। আমন্ত্রণ পত্রে বড় বড় করে লেখা হয়, প্রধান অতিথি বাংলাদেশি ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। পরেশের আমন্ত্রণ গ্রহণ করে ১২ নভেম্বর অনু্ষ্ঠানে আসেন সাকিব। ১৩ তারিখ ফিরে যান নিজের দেশে।
এই অনুষ্ঠানের ভিডিয়ো সোশাল মিডিয়া পোস্ট হওয়ার পরই সাকিবের সমালোচনায় সরব হয় সেদেশের কট্টরপন্থীরা। সাকিবের সমালোচনা করে বলা হয়, তিনি আর মুসলিম নেই। তিনি এখন থেকে ‘শ্রী শ্রী সাকিব’।
সিলেট নিবাসী এক ব্যক্তি সাকিবের মুণ্ডচ্ছেদের পোস্ট করে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত করে তোলে। ওই ব্যক্তি সোশাল মিডিয়ায় লাইভে এস বলে – ‘প্রয়োজেনে সাকিবের মাথা কাটতে ঢাকা পর্যন্ত একশো কিলোমিটার হেঁটে যেতে হলেও যাব।’
সাকিবের ক্ষমাভিক্ষা
১৬ নভেম্বর নিজের ইউটিউব চ্যানেলে ক্ষমা চাইলেন সাকিব আল হাসান। ‘ভুল হয়েছে’। ‘আমি একজন গর্বিত মুসলিম’। সাকিব আরও বললেন, “আমি পরেশ দা-র নিমন্ত্রণে কলকাতায় এক অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। আমি যে পথ দিয়ে যাচ্ছিলাম সেখানে অনেক মানুষ পুজোয় সামিল হয়েছিল। পরেশ দা আমাকে সেখানে প্রদীপ জ্বালানোর জন্য অনুরোধ করেছিল, আমি সেটাই করেছি। এরপর অনেকে এসে ছবি তুলেছে। আমি পুজো উদ্বোধন করিনি। পুজো উদ্বোধনের জন্য সেখানে যাইনি।”
সাকিবের নিরাপত্তা বাড়াল বাংলাদেশ সরকার
এই পরিস্থিতি সাকিবের নিরপত্তায় বন্ধুকধারী নিরাপত্তারক্ষী নিয়োগ করেছে প্রশাসন। ভাবার বিষয় এটাই – যে সাকিবের জন্য ঢাকার বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম এক সঙ্গে উদ্বেল হয়ে ওঠে, স্লোগানে জোয়ার আনে, সেই সাকিবের জন্যই কিনা তাঁর নিজের দেশেই নিরাপত্তা রক্ষীর প্রয়োজন হল। এই ঘটনা বর্তমান বাংলাদেশের অসহিষ্ণুতার (Intolerance) কদর্য ছবির জ্বলজ্যান্ত প্রমাণ ।
বিপদ কি আরও বাড়ল?
ভারত-বাংলাদেশ দুই দেশই এখনও পর্যন্ত একে অপরের প্রতি উষ্ণ সম্পর্কই রেখে চলেছে। আর সেটা ঘটছে, ভাষা, সংস্কৃতির মেলবন্ধনে। কূটনৈতিকভাবে সাকিবের কাছে সুযোগ ছিল দুই দেশের সম্পর্ককে আরও সুদৃঢ় করার, নিজেকে সেতু করে তোলার। সেই সোনালি সুযোগই হাতছাড়া হল বলে মনে করছে ওয়াকিবহল মহল।
বাংলাদেশের সাংবাদিক মহলেরই প্রশ্ন, “এখানে মুললিম নেতানেত্রীরা তো হিন্দু অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেই থাকেন। সেদিক থেকে দেখতে গেলে, সাকিব কোনও অন্যায় করেনি। সাকিবের সেখানে যাওয়া নিয়ে কারোর ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত লাগার কথাই নয়। এই ঘটনা আরও একবার চোখে আঙুল দিয়ে প্রমাণ করে দিল বাংলাদেশে অসহিষ্ণুতা মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। সাকিবের মতো তারকাকে যেখানে পুজোয় অংশগ্রহণ করার জন্য ক্ষমা চাইতে হচ্ছে, সেখান সাধারণের কথা ভাবলেই ভয় হচ্ছে।”