Mohammed Deif: ‘তিনি অধরা, ছায়ামানব’, ছবিহীন এই ব্যক্তিই হামাস হামলার মাস্টারমাইন্ড
Who is Mohammed Deif: স্মার্ট ফোনের মতো কোনও আধুনিক ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করেন না তিনি। আসলে জমসমক্ষের আড়ালে থাকাটা দেইফের জন্য জীবন-মরণের বিষয়। সাত-সাতবার তাঁকে হত্যার চেষ্টা করেছে ইজরায়েল।
জেরুসালেম: কথায় কথায় সেলফি তোলার যুগে, সারা জীবনে কারও মাত্র তিনটি ছবি আছে বললে, অনেকেই হয়তো বিশ্বাস করবেন না। কিন্তু, হামাসের সামরিক বিভাগ, ‘আল কাশাম ব্রিগেডে’র প্রধান মহম্মদ দেইফ ঠিক এমনই। কথা বলেন খুবই কম, জনসমক্ষে কখনও দেখা যায় না। ২০ বছর বয়সের সময় তোলা একটি ছবি, মুখোশে পরা একচটি ছবি আর তাঁর ছায়ার একটি ছবি ছাড়া, তাঁর কোনও ছবি নেই। স্মার্ট ফোনের মতো কোনও আধুনিক ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করেন না তিনি। আসলে জমসমক্ষের আড়ালে থাকাটা দেইফের জন্য জীবন-মরণের বিষয়। সাত-সাতবার তাঁকে হত্যার চেষ্টা করেছে ইজরায়েল। প্রত্যেকবারই অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছেন। আর এই রহস্যে মোড়া ‘ছায়ামানব’ই ইজরায়েলে হামাস হামলার মাস্টারমাইন্ড, এমনটাই জানা গিয়েছে হামাস গোষ্ঠী সূত্রে।
হামাস সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০২১ সালের রমজান মাস, আল আকসা মসজিদে মুসলিমদের উপর যে অত্যাচার চালিয়েছিল ইজরায়েলিরা, তারই জবাবে সাম্প্রতিক এই হামলা চালানো হয়েছে। আর এর জন্য গত দুই বছর ধরে একটু একটু করে এগিয়েছিল হামাস। তবে, হামলার চূড়ান্ত পরিকল্পনার কথা জানতেন হামাস প্রধান , হামাসের গাজা ভূখণ্ডের নেতা ইয়াহা সিনওয়ারের মতো হাতে গোনা দু-তিন জন। তবে, এই হামলার স্থপতি যদি কাউকে বলতে হয়, মাস্টারমাইন্ড যদি কাউকে বলতে হয়, তিনি হলেন মহম্মদ দেইফ।
১৯৪৮ সালের আরব-ইজরায়েল যুদ্ধের পর, গাজার খান ইউনিস জেলায় এক প্যালেস্টাইনি উদ্বাস্তু শিবিরে তৈরি করা হয়েছিল। ১৯৬৫ সালে এই উদ্বাস্তু শিবিরেই জন্ম হয়েছিল দেইফের। তবে, বাবা-মা তাঁর নাম দিয়েছিলেন মহম্মদ মাসরি। ১৯৮৭ সালে, প্রথম ইন্তিফাদা বা প্যালেস্টাইনি বিদ্রোহের সময় তিনি হামাসে যোগ দিয়েছিলেন। সেই সময় থেকেই তাঁর নাম হয়, মহম্মদ দেইফ। ১৯৮৯-এ ইজরায়েল সরকার তাঁকে গ্রেফতার করেছিল। ১৬ মাস জেলে ছিলেন তিনি। প্যালেস্টাইনিদের মুক্তির আন্দোলনে যোগ দেওয়ার পাশাপাশি পড়াশোনাও চালিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। গাজার ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। শিল্পকলার প্রতিও তাঁর অনুরাগ ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদন কমিটির প্রধান ছিলেন তিনি। মঞ্চ নাটকে অভিনয়ও করতেন।
তবে বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়ার পর, দেইফ পুরোপুরি হামাসের আন্দোলনে নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন। একেবারে নীচু স্তর থেকে পুরোপুরি নিজের দক্ষতা ও ত্যাগের মধ্য দিয়ে হামাসের বড় নেতা হয়ে ওঠেন তিনি। ২০০২ সালে তিনি প্রথম আল কাশাম ব্রিগেডের প্রদান পদে বসেন। তারপর থেকে তিনি ওই পদেই আছেন। তাঁর উদ্যোগেই টানেল নেটওয়ার্ক এবং বোমা তৈরির ক্ষেত্রে বিশেষ দক্ষতা অর্জন করেছে হামাস। আত্মঘাতী বোমা হামলায় বেশ কয়েকজন ইজরায়েলির নাগরিকের মৃত্যুর জন্য ব্যক্তিগতভাবে তাঁকে দায়ী করেছে ইজরায়েল। গত কয়েক দশক ধরে ইজরায়েলের মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকার শীর্ষে রয়েছে তাঁর নাম। ইজরায়েলি হামলায় তাঁর একটা চোখ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। পায়ে গুরুতর আঘাত পেয়েছেন, যার জন্য তাঁকে হুইল চেয়ার ব্যবহার করতে হয়। ২০১৪ সালে ইজরায়েলি বিমান হামলায় তাঁর স্ত্রী, ৭ মাস বয়সী এক ছেলে এবং ৩ বছরের মেয়ের মৃত্যু হয়েছিল। বুধবার (১১ অক্টোবর, ২০২৩) একইভাবে মৃত্যু হয়েছে তাঁর বাবা-ভাইয়ের।
দেইফের বর্তমান হদিস কেউ জানে না। তবে, অনুমান করা হচ্ছে, তিনি এখন গাজা ভূখণ্ডেই আছেন। সম্ভবত, গাজায় মাটির নীচে যে সুড়ঙ্গের গোলকধাঁধা তৈরি করেছে হামাস, তারই মধ্যে কোথাও আত্মগোপন করে আছেন তিনি। সেখান থেকেই ইজরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনা করছেন। হামাস যতই ইজরায়েলে সশস্ত্র হামলা চালাক, গোটা বিশ্ব তার জন্য হামাসের যতই সমালোচনা করুক না কেন, প্যালেস্টাইনি নাগরিকদের কছে তিনি বীরের মর্যাদা পান। প্যালেস্টাইনি লোককথায় ঢুকে গিয়েছে তাঁর নাম। লোকে বলে, “তিনি অধরা। তিনি ছায়ামানব।”