অতীতের বন্ধুই আজ শত্রু! কীভাবে ইজরায়েলের একটা ভুল চাল চাগিয়ে তুলল ৪৫ বছরের পুরনো শত্রুতা?

Iran-Israel Conflict: দীর্ঘ দশক ধরে দুই দেশ তেহরান ও তেল আভিভ একে অপরকে আক্রমণ করলেও, তার দায় কখনওই সরাসরি স্বীকার করেনি। বরাবরই তা 'ছায়াযুদ্ধ' হিসাবে রয়ে গিয়েছে। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হতে শুরু করে যে উভয় দেশই একে অপরের সঙ্গে সাক্ষাৎ নিষিদ্ধ করে। দূতাবাসও বন্ধ করে দেওয়া হয়।  

অতীতের বন্ধুই আজ শত্রু! কীভাবে ইজরায়েলের একটা ভুল চাল চাগিয়ে তুলল ৪৫ বছরের পুরনো শত্রুতা?
ইরান-ইজরায়েলের শত্রুতা।Image Credit source: TV9 বাংলা
Follow Us:
| Updated on: Apr 14, 2024 | 4:00 PM

জেরুজালেম: এক সময়ে বন্ধু ছিল দুই দেশ। যখন ইজরায়েলকে কেউ দেশ বলে স্বীকৃতি দিতে চায়নি, সেই সময়ে ইরানই স্বীকৃতি দিয়েছিল ইজরায়েলকে। সেখানে আজ ইরান ও ইজরায়েল আজ মুখোমুখি সংঘর্ষে লিপ্ত। শনিবার রাতেই ইজরায়েলের উপরে হামলা করে ইরান। একসঙ্গে ২০০ মিসাইল-ড্রোন দিয়ে হামলা করে ইজরায়েলের উপরে। পাল্টা জবাব দেওয়ার হুমকি দিয়েছে ইজরায়েলও।

যুদ্ধ হচ্ছিল ইজরায়েল-হামাসের মধ্যে। সেখানেই হঠাৎ ইরানের এন্ট্রি। আগে থেকেই ইজরায়েলকে সতর্কবার্তা দিলেও, গত ১ এপ্রিল সিরিয়ায় ইরানি দূতাবাসে হামলা চালায় ইজরায়েল। মারা পড়েন অনেকে। এর পাল্টা জবাবেই ইরান ইজরায়েলের উপরে হামলার ঘোষণা করে এবং সত্যি সত্যিই মিসাইল হামলা চালায় শনিবার। কিন্তু ইজরায়েল-ইরানের সম্পর্কটা সবসময় এমন ছিল না।

দুই দেশের শত্রুতা বুঝতে গেলে, প্রথমে এদোর ইতিহাস বুঝতে হবে। ১৯৪৮ সালে মধ্য প্রাচ্যে ফিলিস্তিনের জায়গায় ইজরায়েল নামে একটি ইহুদি রাষ্ট্র গঠিত হয়। এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু করে মুসলিম দেশগুলো। মধ্য প্রাচ্যের অধিকাংশ মুসলিম দেশ ইজরায়েলকে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করে। এই সময়ে পাশে এসে দাঁড়ায় ইরান। তুরস্কের পর ইরানই ছিল দ্বিতীয় মুসলিম দেশ ছিল, যারা ইজরায়েলকে দেশ হিসেবে মেনে নেয়। দুজনে যে বন্ধু , তা প্রাথমিক পর্যায়ে প্রকাশ করা না হলেও, একে অপরকে অভ্যন্তরীণভাবে সাহায্য করতে থাকে।

বন্ধু থেকে শত্রু-

১৯৭৯ সালে ইরানের ইসলামী বিপ্লবের পরই উভয়ের মধ্যে শত্রুতার ভিত্তি স্থাপিত হয়। এই বিপ্লবের পর ইরানকে ইসলামী প্রজাতন্ত্র হিসাবে ঘোষণা করা হয়। একে বলা হয় বিশ্বের ঐতিহাসিক বিপ্লব। পাহলভি রাজবংশের অবসান ঘটে, আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেইনিকে ইরানের সর্বোচ্চ নেতার সিংহাসনে বসানো হয়। খোমেইনি ক্ষমতায় বসতেই ইরানের অবস্থান ১৮০ ডিগ্রি বদলে যায়। আমেরিকা ও ইজরায়েলকে ‘শয়তানে’র তকমা দেওয়া হয়।

দীর্ঘ দশক ধরে দুই দেশ তেহরান ও তেল আভিভ একে অপরকে আক্রমণ করলেও, তার দায় কখনওই সরাসরি স্বীকার করেনি। বরাবরই তা ‘ছায়াযুদ্ধ’ হিসাবে রয়ে গিয়েছে। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হতে শুরু করে যে উভয় দেশই একে অপরের সঙ্গে সাক্ষাৎ নিষিদ্ধ করে। দূতাবাসও বন্ধ করে দেওয়া হয়।

দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা এমনভাবে বাড়তে থাকে যে এর প্রভাব পড়তে শুরু করে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশেও। একে অপরকে দুর্বল করার চেষ্টা শুরু করে এরা। ২০০৬ সালের লেবানন যুদ্ধে ইরান তাদের পাশে দাঁড়িয়েছিল। এই যুদ্ধ ছিল ইজরায়েলের বিরুদ্ধে।

ইরানে ইসলামিক বিপ্লবের পর ইজরায়েল যে বন্ধুত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করেনি, এমন নয়। প্রাথমিক পর্যায়ে ইজরায়েল ইরানকে অস্ত্র সরবরাহ করে বন্ধুত্ব ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছিল।  কিন্তু এর পিছনেও একটা কারণ ছিল। প্রকৃতপক্ষে, ইরাকে যখন অশান্তি চলছিল, সাদ্দাম হোসেনের নেতৃত্বে ইরাক পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করে। ইরাকের রোষ এড়াতেই ইজরায়েল ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করতে চেয়েছিল। কিন্তু এই প্রচেষ্টা বেশিদিন স্থায়ী হতে পারেনি।