গাজ়ায় আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের অফিস উড়িয়ে দিল ইজরায়েল
জালা টাওয়ারে অবস্থিত আল জাজিরা ও এপি সংবাদ সংস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ইজরায়েলের রকেটে।
গাজ়া: ক্রমশ জোরাল হচ্ছে ইজরায়েল (Israel) ও হামাসের সংঘর্ষ। রক্তনদী বইছে দুই প্রান্তেই। একের পর এক রকেট ছু়ড়ছে ইজরায়েল। পাল্টা ছুড়ছে হামাস। দুই পক্ষের সংঘর্ষে অন্তন ১০০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত সহস্রাধিক। মৃত্যু মিছিলে নাম রয়েছে ৩১ শিশুরও। এই সংঘর্ষ থেকে বাদ পড়ল না সংবাদ মাধ্যমও। ইজরায়েলের রকেট উড়িয়ে দিল আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের অফিস। জালা টাওয়ারে অবস্থিত আল জাজিরা ও এপি সংবাদ সংস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ইজরায়েলের রকেটে।
আল জাজিরার ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছে সেই ধ্বংসলীলার ছবি। জালা টাওয়ারের মালিক জাবাদ মেহদিকে হামলার বিষয়ে আগেই সতর্ক করেছিল ইজরায়েল। ১০ মিনিট বেশি সময় প্রার্থনা করেছিলেন জাবাদ, যাতে সাংবাদিকরা সরঞ্জাম নিয়ে বেরিয়ে যেতে পারেন। কিন্তু সেই সময় দেয়নি ইজরায়েল। আল জাজিরার গাজ়া অঞ্চলের প্রধান ওয়াইল আল দাহদৌহ এই ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন।
তিনি বলেন, “এটা অত্যন্ত দুঃখের যে আল জাজিরা ও অন্যান্য সংবাদ মাধ্যমকে টার্গেট হতে হচ্ছে।” ইজরায়েল অবশ্য জানিয়েছে হামাস সংগঠনের মিলিটারি সরঞ্জাম থাকা বিল্ডিংগুলিকেই টার্গেট করেছে তারা।
কোথায় সমস্যা ইজরায়েল ও হামাসের?
ইজরায়েল (Israel) ও প্যালেস্তাইনের বিবাদ দীর্ঘদিনের। বারবার স্বাধীন প্যালেস্তাইন রাষ্ট্রের দাবি করে এসেছে প্যালেস্তাইনের কট্টরপন্থী সংগঠন হামাস। অন্যদিকে সেই প্রথম থেকে ইজরায়েলের দাবিটাও সাফ ছিল, তারা জেরুজালেমকে রাজধানী হিসেবে চায়। এই নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে একাধিকবার পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়েছে। কিন্তু ২০১৪ সালের পর এই প্রথম এত পরিমাণে ধ্বংসলীলা দেখল গাজ়া ও তেল আভিভ। রাষ্ট্রসঙ্ঘ তড়িঘড়ি শান্তি স্থাপনের কথা বলেছে। কিন্তু কে শোনে কার কথা, হামাস ও ইজরায়েলের মধ্যে বিবাদ অব্যাহতই।
এ বারে সংঘর্ষের সূত্রপাত:
জেরুজালেম লাগোয়া শেখ জারাহ এলাকায় প্যালেস্তাইন পরিবারের উচ্ছেদ থেকে শুরু এ বারের ইজরায়েল-হামাস উত্তেজনা। ইজরায়েলের সুপ্রিম কোর্ট একাধিক প্যালেস্তাইন পরিবারকে উচ্ছেদ করার নির্দেশ দিতে যাচ্ছে, এই আশঙ্কা থেকেই আল আকসা মসজিদে অবস্থান বিক্ষোভ করছিল প্যালাস্তাইনিরা। শুক্রবার বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিতে তৎপর হয় ইজরায়েলের পুলিশ। সোমবার তা চরম আকার ধারণ করে। রাবার বুলেট, জলকামান ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে ইজরায়েলের পুলিশ। যার ফলে আহত হন অন্তন ১ হাজারের বেশি প্যালেস্তাইনিরা। এরপরই মসজিদ থেকে ইজরায়েলকে পুলিশ প্রত্যাহারের হুঁশিয়ারি দেয় প্যালেস্তাইনের কট্টরপন্থী সংগঠন হামাস। তারপরেও ইজরায়েল পুলিশ প্রত্যাহার না করলে রকেট ছোড়ে হামাস।
সেই রকেটের পাল্টা দিতে গিয়ে দফায় দফায় বিমানে হামলা চালায় ইজরায়েল। ওই হামলায় ১০ শিশু-সহ অগণিত প্যালাস্তাইনি প্রাণ হারিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম মারফত। ইজরায়েলের বিমান হামলার পর হামাসের সামরিক শাখা তেল আভিভ লক্ষ্য করে রকেট ছোড়ে। হামাসের পাল্টা হামলায় ইজরায়েলের একাধিক নাগরিক প্রাণ হারিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। হামাসের হামলার পর ফের ১৩০টি রকেট ছোড়ে ইজরায়েল।
গোটা ঘটনায় বিশ্বের অন্যান্য দেশ স্রেফ শান্তি ফেরানোর বার্তা দিয়েছে। প্রত্যক্ষ ভাবে মধ্যস্থতা করার কোনও প্রস্তাব আসেনি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নিরাপত্তা উপদেষ্টা ইজরায়েলের নিরাপত্তা উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলেছেন। ব্রিটেন ইজরায়েলের ওপর হামলার নিন্দা করেছে। রাশিয়া কোনও প্রতিক্রিয়া দেয়নি। জার্মানি দুই পক্ষের মধ্যে শান্তির আহ্বান করেছে।
আরও পড়ুন: করোনা আবহে বাতিল ট্রাম্পের ‘স্বপ্নের’ মনুমেন্ট, ঘোষণা বাইডেনের