কেন প্রয়োজন হয়েছিল G20-র? কীভাবে কাজ করে এই আন্তর্জাতিক গোষ্ঠী?
G20 History: বর্তমানে গোটা বিশ্বের জি়ডিপির প্রায় ৮৫ শতাংশ, বিশ্ব বাণিজ্যের ৭৫ শতাংশের বেশি এবং বিশ্বের জনসংখ্যার ৬০ শতাংশেরও বেশি রয়েছে জি২০ গোষ্ঠীর দেশগুলির হাতে। কেন এই ২০ দেশের গোষ্ঠী তৈরি করা হয়েছিল, কীভাবে কাজ করে এই গোষ্ঠী?
নয়া দিল্লি: ৯-১০ সেপ্টেম্বর নয়া দিল্লিতে হবে জি২০ শীর্ষ সম্মেলন। এই প্রথম ভারতে এত বড় মাপের আন্তর্জাতিক সম্মেলন হতে চলেছে। রাশিয়া ও চিনের প্রেসিডেন্টরা না আসলেও, আসছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনক, দক্ষিণ কোরিয় প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওল, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো-সহ বহু বিশিষ্ট জন। এর জন্য প্রায় প্রস্তুত প্রগতি ময়দান কমপ্লেক্সে সদ্য উদ্বোধন হওয়া আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী তথা সম্মেলন কেন্দ্র, ভারত মণ্ডপম। এই অবসরে জেনে নেওয়া যাক, কেন এই ২০ দেশের গোষ্ঠী তৈরি করা হয়েছিল, কীভাবে কাজ করে এই গোষ্ঠী?
বর্তমানে গোটা বিশ্বের জি়ডিপির প্রায় ৮৫ শতাংশ, বিশ্ব বাণিজ্যের ৭৫ শতাংশের বেশি এবং বিশ্বের জনসংখ্যার ৬০ শতাংশেরও বেশি রয়েছে এই গোষ্ঠীর দেশগুলির হাতে। ১৯৯৭ সালে পূর্ব এশিয়ার আর্থিক সংকট দেখা দেওয়ার পর, সেই সংকট মোকাবিলায় এই গোষ্ঠী প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। ১৯৯৯-এর জুনে এক বৈঠক করেছিলেন কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, জাপান, ব্রিটেন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিয়ে গঠিত জি৭ গোষ্ঠীর অর্থমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের গভর্নররা। সেই বৈঠকে অর্থনৈতিক বিষয়ে আন্তর্জাতিক আলোচনা এবং সমন্বয়ের ক্ষেত্রে আরও বেশ কয়েকটি দেশকে অন্তর্ভুক্ত করা উটিত বলে সিদ্ধান্ত হয়। সেই লক্ষ্য অর্জনের জন্যই ওই বছরের সেপ্টেম্বরে জি২০ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
প্রথম কয়েক বছর, জি২০ দেশগুলির অর্থমন্ত্রীরা এবং দেশগুলির কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের গভর্নররাই বার্ষিক বৈঠকে মিলিত হতেন। তবে, ২০০৮ সালে বিশ্বব্যাপী আর্থিক সংকট দেখা দেওয়ার পর, ফোরামটি রাষ্ট্রপ্রধানদের মধ্যে বৈঠকের স্তরে উন্নীত হয়েছিল। অর্থাৎ, জি২০ গোষ্ছীর রাষ্ট্রপ্রধানদের মধ্যে বৈঠক শুরু হয়। আর অর্থমন্ত্রীরা বছরে দুবার করে বৈঠক করা শুরু করেন। প্রথম জি২০ শীর্ষ সম্মেলন হয়েছিল ২০০৮ সালের নভেম্বরে, আমেরিকারর রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে। সম্মেলনের ফোকাসে ছিল আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে আর্থিক স্থিতিশীলতা। গত কয়েক বছরে ধরে, এই ফোরামে বিশ্ব বাণিজ্য, জ্বালানি সংকট, জলবায়ু পরিবর্তন, সন্ত্রাসবাদের পাশাপাশি ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণ নিয়েও আলোচনা হয়েছে।
কীভাবে কাজ করে জি২০?
জি২০ মূলত দুটি পথে কাজ করে। প্রথমটি হল অর্থনৈতিক পথ, যেটি আর্থিক এবং অর্থনৈতিক বিষয়গুলির উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। দ্বিতীয়টি হল শেরপা পথ। ‘শেরপা’, অর্থাৎ, সদস্য দেশগুলির কূটনৈতিক প্রতিনিধিদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়। প্রতিটি পথ নির্দিষ্ট বিষয়ভিত্তিক ওয়ার্কিং গ্রুপ নিয়ে গঠিত। এর মধ্যে সদস্য দেশগুলির প্রাসঙ্গিক মন্ত্রক এবং আমন্ত্রিত/অতিথি দেশগুলির প্রতিনিধিরা থাকেন। এছাড়া, রাষ্ট্রপুঞ্জ, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল, অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থার মতো বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরাও ওয়ার্কিং গ্রুপের অংশ হন।
অর্থনৈতিক পথের নেতৃত্বে থাকেন সদস্য দেশগুলির অর্থমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের গভর্নররা। বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক ঝুঁকি, আন্তর্জাতিক কর, স্থিতিস্থাপক আর্থিক পরিকাঠামো গঠনের জন্য সংস্কার এবং এই রকম আরও বেশ কিছু অর্থনৈতিক বিষয়ে আলোচনা হয় এই পথে। এর ওয়ার্কিং গ্রুপগুলির মধ্যে রয়েছে ফ্রেমওয়ার্ক ওয়ার্কিং গ্রুপ, ইন্টারন্যাশনাল ফিনান্সিয়াল আর্কিটেকচার ওয়ার্কিং গ্রুপ, জয়েন্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড হেলথ টাস্ক ফোর্স এবং গ্লোবাল পার্টনারশিপ ফর ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন।
শেরপা পথে কৃষি, সংস্কৃতি, ডিজিটাল অর্থনীতি, শিক্ষা, শক্তি এবং পর্যটনের মতো বিষয়ে আলোচনা হয়। শেরপারা সারা বছর ধরে শীর্ষ সম্মেলনের অ্য়াজেন্ডা নিয়েও আলোচনা করেন। জি২০ সদস্য দেশগুলির বেসরকারী সংস্থাগুলির অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে বিজনেস২০, থিঙ্ক২০, উইমেন২০-র মতো আরও বেশ কয়েকটি ওয়ার্কিং গ্রুপ রয়েছে। এই গ্রুপগুলি বিভিন্ন বিষয়ে নীতি নির্ধারণে অবদান রাখে।