Turkey Eathquakes: ৩৯-র বিভীষিকাকে ছাপিয়ে গেল ২৩-র ভূমিকম্প, তুরস্কের রাস্তায় হাহাকারের ছবি
Turkey Eathquakes: ১৯৩৯ সালে তুরস্কে ভয়াবহ ভূমিকম্পে ৩০ হাজার জনের প্রাণ গিয়েছিল। সেই ভূমিকম্পের থেকেও শক্তিশালী ছিল তুরস্কে সোমবারের ভূমিকম্প।
ইস্তানবুল: ভোররাতেই দুলে উঠেছিল দক্ষিণ তুরস্কের বিস্তীর্ণ এলাকা। সোমবার স্থানীয় সময় ৪টে ১৭ মিনিট নাগাদ প্রথম ভূমিকম্প হয় তুরস্কে। এর পাশাপাশি কম্পন অনুভূত হয় সিরিয়াতেও। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৭.৮। প্রথম ভূমিকম্পের ১১ মিনিটের মধ্যেই আফটারশক অনূভূত হয়। তার তীব্রতা ছিল ৬.৭। ৯ ঘণ্টায় এখনও পর্যন্ত মোট ২৯ টি আফটারশকের খবর পাওয়া গিয়েছে তুরস্ক ও সিরিয়াতেও। এখনও পর্যন্ত তুরস্ক, সিরিয়া মিলিয়ে ভূমিকম্পে মোট ১৩০০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। এর মধ্যে ৯০০ জনের বেশি তুরস্কের বাসিন্দা। আর সিরিয়ায় মৃত্যু হয়েছে ৪০০ জনের।
ভোররাতে সকলে যখন নিদ্রাচ্ছন্ন সেই সময় আঘাত হেনেছে এই প্রাণঘাতী ভূমিকম্প। ভেঙে পড়েছে একের পর এক বহুতল। চোখের নিমেষে কার্যত ধূলিসাৎ হয়ে গিয়েছে একাধিক আবাসন। হাইওয়েতে দেখা গিয়েছে চওড়া ফাটল। যাতায়াতের অযোগ্য হয়ে পড়ে রয়েছে হাইওয়ে। উপরের পিচের রাস্তা সরে গিয়ে কঙ্কালসার চেহারা বেরিয়ে এসেছে। এক মুহূর্তের মধ্যে বহুতল আবাসন ধসে পড়ার ভয় ধরানো ছবি, ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। রীতিমত শিহরণ জাগার মতো দৃশ্য সেসব। তবে সকালের এই কম্পনেই এই ভূমিকম্পের পর্ব শেষ হয়নি। এই ১২ ঘণ্টায় বারে বারে কেঁপে কেঁপে উঠেছে তুরস্ক, সিরিয়া। আর বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। বাড়ছে ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণও। ধ্বংসস্তূপের নীচে এখনও অনেকে আটকে পড়েছেন বলে জানা যাচ্ছে। মৃতের সংখ্যা বাড়ার রয়েছে আশঙ্কা। এখনও চলছে উদ্ধারকাজ। এদিকে উদ্ধারকাজে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে ভারতও। উদ্ধারকাজের জন্য NDRF-এর ১০০ জন সদস্য, প্রশিক্ষিত কুকুর সহ ত্রাণ সামগ্রী পাঠানো হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে।
ইস্তানবুল টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটির ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ওকান তুইসুজকে উদ্ধৃত করে একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ১৯৩৯ সালে তুরস্কের পূর্বাঞ্চলীয় শহর এরজিনকানে একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প হয়েছিল। সেই ভূমিকম্পে প্রায় ৩৩ হাজার জন মারা গিয়েছিলেন। অধ্যাপকের মতে সেই ভূমিকম্পের থেকেও অনেক বেশি শক্তিশালী ছিল সোমবারের এই কম্পন। সিরিয়ার সংবাদ সংস্থা সানা জানিয়েছে, পশ্চিমের উপকূল লাটাকিয়া থেকে ড্যামাসকাস পর্যন্ত এই কম্পন অনুভূত হয়েছে। জাতীয় ভূমিকম্পন কেন্দ্রের প্রধান রইদ আহমেদ জানিয়েছেন, ১৯৯৫ সালে এই কেন্দ্র স্থাপন হওয়ার পর থেকে এখনও পর্যন্ত আজকের এই ভূমিকম্প সবথেকে ভয়াবহ ছিল। প্রসঙ্গত, তুরস্ক এমনিতেই সবথেকে বেশি ভূকম্পন প্রবণ এলাকার মধ্যে পড়ে। তাই এখানে ভূমিকম্পের প্রবণতাও বেশি থাকে। এর আগেও একাধিকবার ভূমিকম্পে তছনছ হয়ে গিয়েছে তুরস্ক। ১৯৯৯ সালে তুরস্কের উত্তর-পশ্চিমে ১৯৯৯ সালে একটি ভূমিকম্প হয়। সেই ভূমিকম্পে প্রায় ১৮ হাজার জন মারা গিয়েছিলেন। সেই সময় ভূকম্পের তীব্রতা ছিল ৭.৪। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে ইলাজিগে ৬.৮ তীব্রতার ভূমিকম্প হয়। সেই প্রাকৃতিক দুর্যোগে মৃত্যু হয় ৪০ জনের। সে বছরই অক্টোবরে আবার এইগিয়ান সি-তে ৭ তীব্রতার ভূমিকম্প হয়। সেই ঘটনায় মারা গিয়েছিলেন ১১৪ জন। আহত হয়েছিলেন ১ হাজারেরও বেশি মানুষ। এত ভূমিকম্প কাটিয়ে সোমবার ফের কেঁপে উঠল তুরস্ক। ক্ষয়ক্ষতির নিরিখে আগের ভূমিকম্পের তুলনায় এই ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতি কম হলেও শক্তি বা তীব্রতার দিক থেকে অনেক বেশি মাত্রা ছিল এই ভূমিকম্পের।