‘ছেলের গায়ের রং কালো হবে না তো?’, অবসাদে আত্মহত্যার কথাও ভেবেছিলেন মেগান

রাজ পরিবারেই সর্বসুখ নয়। এক সাক্ষাৎকারে এমনটাই দাবি হ্যারি-মেগানের (Meghan Markle)।। মানসিক চাপেই কার্যত প্রাসাদ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন বলেই দাবি করলেন তাঁরা। ওপরা উইনফ্রের (Oprah Winfrey) মুখোমুখি বসে সামনে আনলেন অনেক না বলা কথা।

'ছেলের গায়ের রং কালো হবে না তো?', অবসাদে আত্মহত্যার কথাও ভেবেছিলেন মেগান
সাক্ষাৎকারে একের পর এক বিস্ফোরক দাবি হ্যারি মেগানের
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Mar 08, 2021 | 2:42 PM

নিউ ইয়র্ক: বাকিংহাম প্যালেসের ভেতর চাপা কান্নার আওয়াজ শোনা গিয়েছে আগেও। রাজ পরিবারের মেয়ে হয়েও রাজপ্রাসাদ ছাড়তে হয়েছিল পুত্রবধূ প্রিন্সেস ডায়নাকে। বিশ্বের অন্যতম চর্চিত সেই রাজবধূ হাতের শিরা কেটে নিজেকে শেষ করে দিতে চেয়েছিলেন। তিন দশক পেরিয়ে যেন সেই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি। ‘আত্মহত্যা করতে গিয়েছিলাম’, চোখের জল ফেলতে ফেলতে সাক্ষাৎকারে এ কথাই বললেন সেই ডায়নার পুত্রবধূ মেগান মার্কলে (Meghan Markle)। ঘটনাক্রম আলাদা হলেও বিপুল ঐশ্বর্যে ভরা প্যালেসের অন্দর মহলে যেন আবার বিতর্কের দাগ।

মার্কিন অভিনেত্রী মেগানকে রাজ পরিবারের বউ করে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টা প্রগতিশীল চিন্তা ভাবনার গল্প তৈরি করেছিল। রানি এলিজাবেথের পাশে তাঁর ছবি সেকথাই বলে দিচ্ছিল। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই সেই রূপকথায় ছেদ। রাজবাড়ি ছাড়লেন হ্যারি ও মেগান। আর এ বার ওপরা উইনফ্রের জনপ্রিয় অনুষ্ঠানে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে হ্যারি-মেগান যা বললেন তা শুধু চমকপ্রদ বললেও কম বলা হবে।

ভেবেছিলেন আত্মহত্যার কথা

ওপরার প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে আবেগপ্রবণ মেগান বলেন, “একটা সময় আমি সত্যিই আর বাঁচতে চাইনি।” মানসিকভাবে এতটাই বিধবস্ত হয়ে পড়েছিলেন যা সাহায্য চাইতে বাকিংহাম প্যালেসের হিউম্যান রিসোর্স বিভাগের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। কোনও লাভ হয়নি। শুকনো সমবেদনা দেখিয়ে তাঁরা বলেছিলেন, “আমাদের কিছু করা নেই। কারণ আপনি প্যালেসের কোনও বেতনভুক কর্মী নন।” সাহায্য চেয়ে ই-মেলের পর ই-মেল করেছেন তিনি।

কিন্তু কেন এত মানসিক কষ্ট? বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ রাজ পরিবারের পুত্রবধূ হওয়াটা কি জীবনের সব পাওয়া নয়? সাক্ষাৎকারে মেগান যা জানিয়েছেন তা যেন রূপকথার এক আধুনিক ‘দুয়োরানি’র গল্প। মেগান জানিয়েছেন, একটা উবের ডাকারও স্বাধীনতা ছিল না তাঁর। বিয়ের পর এই পরিবারে সদস্য হওয়ার আগে শেষবার তিনি তাঁর পাসপোর্টটা দেখেছিলেন। নিয়ে নেওয়া হয়েছিল তাঁর ড্রাইভিং লাইসেন্স, তাঁর ব্যক্তিগত চাবি। ওপরা উইনফ্রে একথা শুনে বলেন, শুনে মনে হচ্ছে যেন কেউ তোমাকে ট্র্যাপে ফেলেছিল, আর সাহায্য করার কেউ ছিল না। “সেটাই সত্যি”, মেনে নেন মেগান। সাক্ষাৎকারে যোগ দিয়ে একই কথা বলেন রাজ পরিবারে সন্তান হ্যারি। তিনি বলেন, “আমার পরিবারের জন্য আমি লজ্জিত।”

ছেলের গায়ের রং কি কালো হবে?

বর্ণবিদ্বেষ নাকি শুধুই পিছিয়ে পড়া মানুষের গল্প? মেগানের দাবি কিন্তু বলছে অন্য কথা। যে পরিবারের কাহিনি ইতিহাসের পাতায় লেখা, যে পরিবারের হাতে এখনও ব্রিটেনের বেশ কিছুটা ক্ষমতা। সেই পরিবারেও নাকি পুত্রবধূকে শুনতে হয়েছে, কেমন হবে সন্তানের গায়ের রং।

অন্যতম সফল অভিনেত্রী মেগান তথাকথিত কালো চামড়ার। তাই তাঁর সন্তানকে নিয়ে বিশেষ চিন্তা ছিল রাজ পরিবারের। মেগান জানিয়েছেন সরাসরি তাঁকে বলা হয়েছিল সেই উদ্বেগের কথা। তাঁর গর্ভে যখন তাঁর প্রথম সন্তান, তখনই সেকথা বলা হয় তাঁকে। মেগানের কথায় সম্ভবত সেই জন্যই বলা হয়েছিল যে তাঁর সন্তানের জন্মের পর তাঁকে রাজপুত্রের স্বীকৃতি দেওয়া হবে না। দেওয়া হবে না কোনও নিরাপত্তাও। এ কথা শুনে চমকে যান সঞ্চালক ওপরা। বলে ফেলেন, “সত্যিই এ কথা বলা হয়েছে তোমাকে? বলা হয়েছে তোমার সন্তান কতটা কালো হবে? কে বলল এমন কথা?” মেগান বলেন, “নাম নেওয়াটা ঠিক হবে না।” হ্যারি বলেন, “আমরা সে কথা কোনওদিন মুখে আনতে পারব না।”

মিডিয়ায় বানানো গল্প?

হ্যারি-মেগানের বিয়ের পর থেকে তাঁদের নিয়ে একাধিকবার চর্চা হয়েছে সংবাদমাধ্যমে। ট্যাবলয়েডে লেখা হয়েছে, কেট মিডলটনকে কাঁদিয়েছেন মেগান। কিন্তু সাক্ষাৎকারে মেগান বলেন, গল্পটা আলাদা। আসলে কেটের জন্য কাঁদতে হয়েছে তাঁকে। সেটা বিয়ের কিছুদিন আগের ঘটনা।

চার বছরে নাকি এমন ঘটনা বারবার ঘটেছে। তিনি বলেন, বিয়ের পোশাক নিয়ে মনোমালিন্য হয়েছিল। আর তার জন্য কেঁদেছিলেন মেগান। পরে দেখেন, সংবাদমাধ্যমে অন্য গল্প লেখা হয়। তাঁর বিস্ফোরক অভিযোগ, রাজ পরিবারের সম্মান বাঁচাতে দিনের পর দিন মিডিয়ায় মিথ্যা গল্প লিখতেই পিছপা হয়নি রাজ পরিবার।

উল্লেখ্য, বিয়ের বছর খানেক বাদেই প্যালেস ছেড়ে চলে যান এই দম্পতি। ছাড়েন রাজপুত্র ও পুত্রবধূর তকমা। আপাতত রাজ পরিবার ছেড়ে স্বাধীনভাবে কাজ করেন দু’জনেই।