Queen Elizabeth II: লিলিবেথ থেকে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ: ভাগ্য়ের জোরে জুটেছিল সিংহাসন, রানি হয়েছিলেন নিজগুণে

Queen Elizabeth II: রাজপরিবারের সকলের খুব স্নেহের ছিল লিলিবেথ। কিন্তু, সে যে আবার কোনওদিন ব্রিটিশ রানি হবে, তা কেউ কোনওদিন ভাবতেও পারেনি। ভাগ্যের জোরে সিংহাসনে বসলেও, নিজগুণেই রানি হয়ে উঠেছিলেন দ্বিতীয় এলিজাবেথ।

Queen Elizabeth II: লিলিবেথ থেকে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ: ভাগ্য়ের জোরে জুটেছিল সিংহাসন, রানি হয়েছিলেন নিজগুণে
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ (ফাইল চিত্র)
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Sep 09, 2022 | 2:24 AM

লন্ডন: রাজপরিবারের সকলের খুব স্নেহের ছিল লিলিবেথ। কিন্তু, সে যে আবার কোনওদিন ব্রিটিশ রানি হবে, তা কেউ কোনওদিন ভাবতেও পারেনি। ১৯২৬ সালের ২১ এপ্রিল লন্ডনে তৎকালীন ইয়র্কের ডিউক এবং ডাচেসের কোলে এসেছিলেন লিলিবেথ। সিংহাসনের দৌড়ে সে ছিল একেবারেই পিছনের সারিতে, রাজা পঞ্চম জর্জের দ্বিতীয় পুত্রের কন্যা। ফলে তাঁর রানি হওয়ার কোনও সম্ভাবনাই ছিল না। কিন্তু, ভাগ্যের জোরে শুধু ছোট্ট লিলিবেথ কালক্রমে শুধু রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথই হননি, ব্রিটেনের সবথেকে দীর্ঘসময় রাজত্বকারী শাসক হয়েছেন। আর তাঁর সবথেকে বড় কৃতিত্ব হল এই একুশ শতকেও তিনি সফলভাবে রাজতন্ত্রকে টিকিয়ে রেখেছেন।

তবে, সিংহাসনের দৌড়ে প্রথম সারিতে না থাকার কারণেই তাঁর উপর শৈশব-কৈশোরের বছরগুলিতে প্রত্যাশার চাপ ছিল না। তাই রাজপরিবারের সদস্যা হয়েও কিছুটা স্বাধীনতার অভিজ্ঞতা লাভ করেছিলেন তিনি। সেই সময় তাঁরা পিকাডিলির একটি টাউন হাউসে থাকতেন। সেখান থেকে দেখা যেত বাকিংহাম প্যালেসের গ্রিন পার্ক। যা তাঁর পরবর্তী জীবনে বড় প্রভাব ফেলেছিল বলে মনে করা হয়। ঠাকুর্দা পঞ্চম জর্জের অবস্থান অর্থাৎ ব্রিটিশ সিংহাসনের প্রতি সেই সময় থেকেই তাঁর একটা বিস্ময় মাখানো শ্রদ্ধা জন্মেছিল। যা তিনি আমৃত্যু বহন করেছেন।

১৯৩৬ সালে পঞ্চম জর্জের মৃত্যু হয়েছিল। এরপর সিংহাসনে বসেছিলেন এলিজাবেথের জেঠু প্রিন্স এডওয়ার্ড। কিন্তু তিনি এক মার্কিন বিবাহবিচ্ছেদী মহিলার সঙ্গে কলঙ্কজনক সম্পর্কেজড়িয়ে পড়েছিলেন। গণরোষের মুখে এক বছরের মধ্যেই তাঁকে সিংহাসন ত্যাগ করতে হয়েছিল। এলিজাবেথের বাবা রাজা ষষ্ঠ জর্জ হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। আর সেই সময় থেকেই সিংহাসনের জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করে দিয়েছিলেন এলিজাবেথ। বুঝেছিলেন লিলিবেথ হয়ে থাকার দিন শেষ, তাঁকে একদিন না একদিন রানি হতে হবে। তৈরি হয়েছিল এক কঠোর কর্তব্যবোধ। তবে, দোটানাও ছিল। কয়েক বছর পরে তাঁর অশ্বারোহণ শিক্ষকের কাছে তিনি স্বীকার করেছিলেন, অন্য কোনও জীবনে, তিনি প্রচুর ঘোড়া এবং কুকুর নিয়ে এক স্বাধীন মহিলা হিসেবে বসবাস করতে চান।

১৯৩৯ সালে, ব্রিটেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিল। নাৎসিদের লাগাতার বিমান হানার মুখেও রাজ পরিবারের সদস্যদের কানাডায় নিয়ে যাওয়ার আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছিল ব্রিটিশ রাজ পরিবার। যা এডওয়ার্ড কাণ্ডের পর রাজতন্ত্রের প্রতি ব্রিটিশদের বিশ্বাস পুনরুদ্ধারে অনেকাংশে সহায়ক হয়েছিল বলে মনে করা হয়। আর সেই সময়ই ভবিষ্যতের রানির পরিচয় পাওয়া গিয়েছিল। সামরিক ইউনিফর্মের জন্য পশম কেনার জন্য তহবিল সংগ্রহ করার পাশাপাশি, মাত্র ১৪ বছর বয়সে, বিবিসির “চিলড্রেন আওয়ার”-এ তিনি তাঁর প্রথম রেডিও সম্প্রচার করেছিলেন। যুদ্ধের কারণে বাড়ি থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া শিশুদের উদ্দেশ্যে যে ভাষণ তিনি দিয়েছিলেন, তা দারুণ জনপ্রিয় হয়েছিল।

এই সময়েই তাঁর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়েছিল তাঁর ভবিষ্যতের স্বামী ফিলিপ মাউন্টব্যাটেনের। গ্রীক এবং ড্যানিশ রাজ পরিবারে জন্মগ্রহণকারী ফিলিপ ছিলেন এলিজাবেথের দূর সম্পর্কের তুতো ভাই। ১৯৩৯ রয়্যাল নাভাল কলেজে দুজনে একসঙ্গে সময় কাটিয়েছিলেন। সেই সময় এলিজাবেথ ছিলেন ১৩ বছর বয়সী, ফিলিপ ১৮। ১৯৪৭ সালে এলিজাবেথের বয়স যখন ২১, সেই সময় তাঁরা বিবাহ করেছিলেন। এক বছরেরও কম সময়ে জন্মেছিলেন প্রিন্স চার্লস। এরপর ১৯৫০-এ প্রিন্সেস অ্যান, ১৯৬০-এ প্রিন্স অ্যান্ড্রু এবং ১৯৬৪ সালে প্রিন্স এডওয়ার্ডের জন্ম হয়েছিল।

১৯৫২ সালে, এলিজাবেথের যখন মাত্র ২৫ বছর বয়স, সেই সময় তিনি কেনিয়া বেড়াতে গিয়েছিলেন। আচমকা জানতে পেরেছিলেন, তাঁর বাবার ঘুমের মধ্যেই মৃত্যু হয়েছে। এরপর ১৯৫৩ সালের ২ জুন, ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে তাঁর রাজ্যাভিষেক ঘটেছিল। রাজ্যাভিষেকের পর, রানি এলিজাবেথ এবং প্রিন্স ফিলিপ সাত মাসের বিশ্ব সফরে গিয়েছিলেন। ১৩টি দেশে ৪০,০০০ মাইলেরও বেশি পথ ভ্রমণ করেছিলেন। এরপর থেকে আজীবন তিনি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রাক্তন উপনিবেশগুলিকে তিনি কমনওয়েলথের আওতায় অনুগত এবং ঐক্যবদ্ধ রাখার চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন।

ইংল্যান্ডে এবং ইংল্যান্ডের বাইরে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ রাষ্ট্রপ্রধানের দূরত্ব ঘুঁচিয়ে ব্যক্তিগত স্তরে সম্পর্ক তৈরির জন্য জনপ্রিয় ছিলেন। পাশাপাশি সারা বিশ্বেই তিনি স্বাক্ষর রেখেছিলেন সাহসী রঙের পোশাক এবং বাহারি টুপির দৌলতে। তাঁর পোশাকের উজ্জ্বল রঙই তাঁর ব্যক্তিত্বের পরিচায়ক ছিল। দেশ ও প্রজাদের মন জয় করতে পারলেও, ব্যক্তিগত জীবনে মা ঠাকুমা হিসেবে তিনি ততটা সফল নন বলেই মনে করা হয়। বিশেষ করে ১৯৮০ এবং ৯০-এর দশকের বেশিরভাগ সময়ই ব্রিচিশ রাজ পরিবারের কেলেঙ্কারি ট্যাবলয়েডগুলির মুখরোচক খাদ্য ছিল।

আর্থিক উপদেষ্টার সঙ্গে প্রিন্স অ্যান্ড্রুর স্ত্রী সারা ফার্গুসনের অনাবৃত বক্ষে সূর্যস্নানের ছবি, প্রিন্সেস ডায়ানার সঙ্গে প্রিন্স চার্লসের বিষাক্ত বিবাহ, ১৯৯২ সালে একই বছরে প্রিন্স চার্লস, ফিলিপ এবং প্রিন্সেস অ্যানের নিজ নিজ অংশীদারদের থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া, প্রিন্সেস ডায়ানার প্যারিসে গাড়ি দুর্ঘটনায় মৃত্যু – ধাক্কা কম ছিল না। এই অশান্ত সময়কালে রাজতন্ত্রের জনপ্রিয়তা হ্রাস পেয়েছিল, কিন্তু রানি এলিজাবেথের অবিচল উপস্থিতি অবশেষে জনগণের আস্থা ফিরিয়েছিল। ২০১৬ সালে, ৯০তম জন্মদিনে ব্রিটিশ জনগণের মধ্যে তাঁর ৮৬ শতাংশ অনুমোদনের রেটিংই তার প্রমাণ।

২০২১ সালের গোড়ায়, যখন তাঁর স্বামী প্রিন্স ফিলিপ হাসপাতালে ভর্তি, সেই সময়ও রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথকে রাজ পরিবারের আরও একটি কেলেঙ্কারি মোকাবিলা করতে হয়েছিল। প্রিয় নাতি প্রিন্স হ্যারি এবং তাঁর স্ত্রী মেগান মর্কেল রাজতন্ত্র ছেড়ে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে একটি বিস্ফোরক সাক্ষাত্কার দিয়েছিলেন। তাঁরা অভিযোগ করেছিলেন রাজপরিবার থেকে মর্কেলের গায়ের রঙ নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল। এমনকি মর্কেল আত্মহত্যা করার কথাও ভেবেছিলেন। রানি বলেছিলেন, “এর জন্য পুরো রাজ পরিবার দুঃখিত এবং উত্থাপিত সমস্যাগুলি, বিশেষ করে বর্ণ সম্পর্কিত সমস্যাগুলির পরিবারের মধ্যে ব্যক্তিগতভাবে সমাধান করা হবে।” এরপর ২০২২ সালের জানুয়ারিতে, তাঁর ছেলে অ্যান্ড্রুর যৌন কেলেঙ্কারি ফাঁস হওয়ার পর, দ্বিতীয় এলিজাবেথ তাঁর সামরিক এবং রাজ পরিবারের সমস্ত পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছিলেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেন, রাজতন্ত্রকে রক্ষার ক্ষেত্রে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের একমাত্র কৌশল ছিল নিজের মতো থাকা। তিনি পুরনোপন্থী ছিলেন, কিন্তু, সেটাই ছিল তাঁর সাফল্যের চাবিকাঠি। পরিবর্তিত বিশ্বে তাঁর বিনয় এবং সংযম প্রয়োজনীয় গুণাবলী হিসাবে প্রমাণিত হয়েছে।