কানাডার তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি, মরুভূমির থেকেও উষ্ণ ওরেগন! সপ্তাহজুড়ে মৃত্যুমিছিলের কারণ কী?

Heat Wave in Canada & US: কানাডা প্রশাসন সূত্রের খবর, গত শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া এই তাপপ্রবাহে মঙ্গলবার অবধিই কমপক্ষে ২৩০ জনের মৃত্য়ু হয়েছে।

কানাডার তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি, মরুভূমির থেকেও উষ্ণ ওরেগন! সপ্তাহজুড়ে মৃত্যুমিছিলের কারণ কী?
তাপপ্রবাহে শুকিয়ে যাচ্ছে গাছপালাও।
Follow Us:
| Updated on: Jul 01, 2021 | 2:59 PM

কানাডা: প্রায় সারা বছরই যে শহর বরফে ঢাকা থাকে, সেখানের তাপমাত্রা পৌঁছেছে ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অবাক লাগলেও বর্তমানে এটাই বাস্তব চিত্র কানাডা(Canada)-এ। সেখানে তাপপ্রবাহে (Heat Wave) কমপক্ষে ২৩০ জনের মৃত্য়ু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। একই অবস্থা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমভাগেও। সেখানেও গত সপ্তাহ থেকে শুরু হয়েছে তাপপ্রবাহ। আচমকা আবহাওয়ার এই বিশাল পরিবর্তনের পিছনে কারণ খুঁজতেই ব্যস্ত বিজ্ঞানী-গবেষকরা।

কানাডা প্রশাসন সূত্রের খবর, গত শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া এই তাপপ্রবাহে মঙ্গলবার অবধিই কমপক্ষে ২৩০ জনের মৃত্য়ু হয়েছে। এদের মধ্যে ৬৯ জন আবার ভ্যাঙ্কুভারের বাসিন্দা। আচমকা তাপমাত্রা অতিরিক্ত পরিমাণে দাবানল লেগেছে ব্রিটিশ কলোম্বিয়ার একাধিক জায়গায়। বিনা পূর্বাভাসেই সৃষ্টি হওয়া এই তাপপ্রবাহ কতদিন চলবে, সে বিষয়ে নিশ্চিতভাবে কিছু জানা যাচ্ছে না। সেই কারণেই সতর্কতা বশে স্কুলগুলি বন্ধ রাখা হয়েছে। যেই অংশগুলিতে তাপপ্রবাহ চলছে, সেখানে করোনা টিকাকরণও বন্ধ রাখা হয়েছে।

অন্যদিকে, ওয়াশিংটন, ওরেগনের মতো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শহরগুলিও তাপপ্রবাহে ফুটন্ত কড়াইয়ে পরিণত হয়েছে। সেখানেও রেকর্ড ভাঙা তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে একাধিক বাসিন্দার মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার যেখানে কানাডায় সর্বকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড গড়েছে, সেখানেই ওরেগনের তাপমাত্রা লাস ভেগাসের নাভাডা মরুভূমি (Navada Desert)-র মধ্যস্থলের তুলনাও বেশি ছিল। ইউসিএলএ(UCLA)-র আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ ড্যানিয়েল সোয়েইন বলেন, “তাপমাত্রার রেকর্ড সাধারণত ভাঙে এক-দুই ডিগ্রির বৃদ্ধিতে। কিন্তু কানাডা ও আমেরিকার কয়েকটি অংশে যে তাপপ্রবাহ দেখা যাচ্ছে, তা বিগত বহু বছরের মধ্যে অন্যতম ভয়ঙ্কর তাপপ্রবাহ বলা যেতে পারে।”

হঠাৎ কেন দেখা দিল এই তাপপ্রবাহ?

বিশেষজ্ঞদের মতে, যে হারে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং তা যেরকম ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে, তাতে নিঃসন্দেহে জলবায়ু পরিবর্তন (Climate Change)-কে দায়ী করা যেতে পারে। তবে এটি কেবল আবহাওয়া বা  জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই নয়, “হিট ডোম” (Heat Dome) সৃষ্টির কারণেও হয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

যখন গরম বাতাস উচ্চ তাপমাত্রায় আটকে পড়ে , তখন তা হিট ডোমে পরিণত হয়। যখন এই বাতাস ধীরে ধীরে নেমে আসে, তখন তাপমাত্রা আরও বাড়তে থাকে। এটি অনেকটি সাইকেলের চাকায় হাওয়া ভরার মতো, যেখানে টায়ারের ভিতরে হাওয়া পাম্প করলে তা গরম হয়ে ওঠে।

এই হিট ডোম তৈরি হলে আকাশে মেঘও সৃষ্টি হতে পারে না, ফলে সূর্যালোক সরাসরি ভূপৃষ্ঠে পড়ে। সাধারণত এভাবেই তাপপ্রবাহ সৃষ্টি হলেও এক্ষেত্রে তার মাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় অনেকটাই বেশি।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব:

তাপপ্রবাহ আবহাওয়ারই একটি অংশ হলেও এর পিছনে জলবায়ু পরিবর্তনের হাতও রয়েছে। বিগত কয়েক দশক ধরে দূষণের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যপকভাবে আবহাওয়ার পরিবর্তনও হয়েছে। যার জেরে আমরা বিশ্ব উষ্ণায়ন বা গ্লোবাল ওয়ার্মিং শব্দটির সঙ্গে আমরা পরিচিত হয়েছি। তবে জলবায়ুর পরিবর্তন আবহাওয়ার ক্ষেত্রে অনেকটা স্টেরয়েডের মতো কাজ করে। অর্থাৎ যে হারে তাপমাত্রা বৃদ্ধি অনুমান করা গিয়েছিল, তা জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে কয়েক গুণ বেড়ে গিয়েছে।

কানাডা ও আমেরিকার কিছু অংশের ক্ষেত্রে, বিগত কয়েক সপ্তাহ ধরেই তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে জলাশয়গুলির জল বাষ্পে পরিণত হতে শুরু হয়েছিল। হিট ডোম সৃষ্টির ফলে সেখানে জলীয় বাষ্পও তৈরি হচ্ছে না এবং সূর্যালোকও তা শোষণ করতে পাকরছে না। তার ফলে গোটা অঞ্চলেরই তাপমাত্রা আরও বাড়ছে।