‘এভাবে গুলি নষ্ট করা চলবে না’, বন্ধ বিজয় জৌলুস, সরকার গঠনের আগেই হিসেবি তালিবান!

সরকার গঠনের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভের চেষ্টাও করছে তালিবান। নৃশংস ও হিংসাত্মক হিসাবে তাদের যে পরিচয় রয়েছে, তা ঝেড়ে ফেলে নতুন ভাবমূর্তি  গঠন করতে চাইছে তারা।

'এভাবে গুলি নষ্ট করা চলবে না', বন্ধ বিজয় জৌলুস, সরকার গঠনের আগেই হিসেবি তালিবান!
ফাইল চিত্র। PTI
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Sep 05, 2021 | 10:15 AM

কাবুল: পঞ্জশীরের নাকি দখল নিয়েছে তালিবান। এই খবর প্রচার হওয়ার পরই শূন্যে গুলি চালিয়ে বিজয় উৎসব শুরু করেছিল তালিবান। কিন্তু এলোপাথাড়ি গুলিতে কমপক্ষে ১৭ জন আফগানবাসীর মৃত্যুর পরই সতর্ক হল তালিবান। নির্দেশ দেওয়া হল এভাবে গুলি নষ্ট করা চলবে না।

শুক্রবারই সরকার গঠনের কথা ছিল তালিবানের, চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে প্রধানমন্ত্রী থেকে মন্ত্রিসভার ২৬ সদস্যের নামও। কিন্তু ক্ষমতা নিয়ে দলের অন্দরেই টানাটানি শুরু হওয়ায় পিছিয়ে গিয়েছে সরকার গঠন প্রক্রিয়া। তবে নতুন নতুন নিয়ম জারি করছে তালিবান। এবার সংগঠনের সদস্যদের জন্যও নিয়ম বেঁধে দিল তালিব শীর্ষনেতারা।

গোটা দেশ নিজেদের হাতের মুঠোয় চলে এলেও পঞ্জশীরের নিয়ন্ত্রণ এখনও সম্পূর্ণভাবে পায়নি তালিবান। তারা পঞ্জশীর দখলের দাবি করলেও প্রতিপক্ষ মাসুদ বাহিনীর দাবি, লড়াই এখনও জারি রয়েছে, পঞ্জশীর তাদের দখলেই রয়েছে।  তবে শুক্রবার রাতেই তালিবানের তরফে ঘোষণা করে দেওয়া হয়, অবশেষে তারা পঞ্জশীর দখল করে নিতে পেরেছে। এরপরই রাতভর শূন্য়ে গুলি চালিয়ে বিজয় উৎসব পালন করে তালিবান। সেই আনন্দেরই বলি হন একাধিক মানুষ। শিশু সহ কমপক্ষে ১৭ জনের গুলির আঘাতে মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।

আফগানিস্তানের স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম আসভাকার তরফে জানানো হয়, পঞ্জশীর দখলের আনন্দে তালিবানরা প্রায় গোটা রাত ধরেই এলোপাথাড়ি গুলি চালায়। ওই গুলি লেগেই কাবুলের একাধিক বাসিন্দা আহত হন। শিশুসহ কমপক্ষে ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে বলেও দাবি করা হয়।

এর আগে ৩১ অগস্ট যখন মার্কিন বাহিনী সেনা প্রত্যাহার শেষ করে আফগানিস্তানের মাটি ছাড়ে, তখনও তালিবানিদের গুলি চালিয়ে বিজয় উৎসব পালন করতে দেখা গিয়েছিল। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে কাবুলের আকাশজুড়ে শুধু গুলির শব্দ শোনা যায়। পরদিন সকালেই দেখা যায়, রাস্তা জুড়ে হাজার হাজার গুলির ফাকা খোল পড়ে আছে।

সরকার গঠনের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভের চেষ্টাও করছে তালিবান। নৃশংস ও হিংসাত্মক হিসাবে তাদের যে পরিচয় রয়েছে, তা ঝেড়ে ফেলে নতুন ভাবমূর্তি  গঠন করতে চাইছে তারা। সেই কারণেই কাবুল দখলের পরই তারা জানিয়েছিল, সকলকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে। কারোর দেশ ছেড়ে পালানোর প্রয়োজন নেই। কিন্তু বিভিন্ন সময়ে তালিবানি নৃশংসতার চিত্রও সামনে উঠে এসেছে। সামান্য কথার অমান্য হলেই মারধর, মহিলাদের বাড়ি থেকে বের হওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা জারির মতো ঘটনা প্রতিদিনই দেখা যাচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।

এরই মধ্যে মার্কিন বাহিনীর দেশছাড়া ও পঞ্জশীর দখলের আনন্দে তালিবানিদের বিজয় উৎসবে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হল। তালিবান মুখপাত্র জাবিদুল্লাহ মুজাহিদ টুইট করে তালিব বাহিনীকে অনুরোধ করেন, তারা যেন এরকম হিংসাত্মক পদ্ধতিতে জয়ের উৎসব পালন না করে। তিনি লেখেন, “শূন্যে গুলি না চালিয়ে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানাও। তোমাদের হাতে অস্ত্র-শস্ত্র রয়েছে ঠিকই, কিন্তু সেগুলি বিনা প্রয়োজনে নষ্ট করার অধিকার কাউকে দেওয়া হয়নি। শূন্যে গুলি চালানোয় সাধারণ মানুষ আহত হতে পারেন, সুতরাং বিনা প্রয়োজনে  গুলি চালানো বন্ধ করো।”

তালিবানের হাতে বর্তমানে যে অস্ত্রভাণ্ডার হয়েছে, তার মধ্যে অধিকাংশই মার্কিন বাহিনীর ফেলে যাওয়া। সেই অস্ত্রভাণ্ডারই বিনা প্রয়োজনে নষ্ট না করার নির্দেশ দেওয়া হল এ বার। আরও পড়ুন: বরাদরকে বাদ দিয়েই সরকার গঠন চায় পাকিস্তান? আচমকা কাবুলে হাজির আইএসআই প্রধান