সত্যি! শহর থেকে গ্রাম বিদ্যুৎ ছুটছে তার ছাড়াই
এই প্রযুক্তির মাধ্যমে মাইক্রোওয়েভের (Microwave) খুব পাতলা বিম দিয়ে বিদ্যুৎ বাণিজ্যিক স্তরে সরবরাহ করা যাবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
জ্যোতির্ময় রায়: হাজার হাজার কিলোমিটার জুড়ে রাস্তায় ঝুলে থাকে এক্সটেনশেন তার। কখনও ঝড়-ঝঞ্ঝায় বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে পড়লে প্রাণঘাতী পরিস্থিতি হতে পারে। আমফানেই দেখা গিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গে বৈদ্যুতিক তার ছিঁড়ে মৃত্যু হয়েছে কয়েকজনের। তাই যদি এমনটা হয় তার ছাড়াই এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় পৌঁছে যায় বিদ্যুৎ! সেই লক্ষ্যেই কাজ করছে একাধিক প্রতিষ্ঠান।
শীঘ্রই তার ছাড়া বিদ্যুৎ সরব্রাহের ট্রায়াল করতে চলেছে এমরড, শক্তি বিতরণ সংস্থা পাওয়ারকো এবং টেসলা সংস্থা। অকল্যান্ডের উত্তর দ্বীপে অবস্থিত একটি সৌর খামার থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে অবস্থিত অঞ্চলে বিম শক্তির মাধ্যমে বিদ্যুৎ পাঠানোর পরীক্ষা করতে চলেছে এই ৩ কোম্পানি।
তার ছাড়া বিদ্যুৎ পাঠানোর প্রক্রিয়া অত্যন্ত অভিনব। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে মাইক্রোওয়েভের খুব পাতলা বিম দিয়ে বিদ্যুৎ বাণিজ্যিক স্তরে সরবরাহ করা যাবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। পাওয়ার বিমিংয়ের এই প্রক্রিয়াটি একেবারে নতুন নয়, আগেও ব্যবহৃত হয়েছিল, তবে এটি সামরিক কাজ এবং মহাকাশ পরীক্ষায় সীমাবদ্ধ ছিল। কখনও বাণিজ্যিক স্তরে এই প্রক্রিয়ার ব্যবহার হয়নি। ১৯৭৫ সালে মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসা ১.৬ কিমি দূরত্বে মাইক্রোওয়েভের মাধ্যমে ৩৪.৬ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ পাঠানোর রেকর্ড স্থাপন করেছিল
প্রাথমিকভাবে স্বল্প দূরত্বের জন্য বিদ্যুৎ প্রেরণ করা হবে
এমরড কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা গ্রেগ কুশনির বলেছিলেন, “আমরা প্রাথমিকভাবে কয়েক কিলোওয়াট বিদ্যুৎ ১.৮ কিমি দূরে পাঠানোর চেষ্টা করব। পরে ধীরে ধীরে দূরত্ব এবং শক্তি বৃদ্ধি করা হবে। তিনি জানান, এটি প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিদ্যুৎ প্রেরণের জন্য ওয়্যারিংয়ের বিশাল ব্যয় কম করতে সাহায্য করবে।
কুশনির জানান, তাঁর সংস্থা তার ছাড়া বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে আরও দুটি প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে। এর মধ্যে একটি রিলে, এটি প্যাসিভ ডিভাইস। এটি লেন্সের মতো কাজ করে এবং মাইক্রো বিমকে পুনরায় ফোকাস করে ন্যূনতম হ্রাসের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। অন্যটা মেটামেটেরিয়ালস। যা ইতিমধ্যে ক্লোনিং ডিভাইসে ইনস্টল করা হয়ে থাকে। এটা যুদ্ধজাহাজ এবং যুদ্ধবিমানকে রাডার থেকে বাঁচতে সাহায্য করে। শুধু তাই নয়, একই সঙ্গে তারা বৈদ্যুতিক চৌম্বক তরঙ্গকে বিদ্যুতে রূপান্তর করতেও সক্ষম।
সিঙ্গাপুরের ট্রান্সফারফাই আম্রোড ছাড়াও আমেরিকার পাওয়ারলাইট টেকনোলজিও বাতাস থেকে শক্তি প্রেরণের পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে। জাপানের মিতসুবিশি মহাকাশে সৌর প্যানেলযুক্ত উপগ্রহ থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহের সম্ভাবনাও অনুসন্ধান করছে।
মানুষের যেন এতে ক্ষতি না হয়, তাই সাবধানতার জন্য লেজার বিমগুলিকে সুরক্ষা কবচে ঢেকে দেওয়া হবে। বাতাসে বিদ্যুৎ সরবরাহের ঝুঁকি নিয়ে কুশনির বলেছেন, “এই বিমের ঘনত্ব খুব কম। তাই এটি মানুষ এবং প্রাণীর উপর খুব বেশি প্রভাব ফেলবে না। তবুও সতর্কতা হিসাবে এই বিমগুলি একটি লেজার পর্দায় ঢেকে দেওয়া হবে। লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজের এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, মানুষ বা অন্যান্য যন্ত্রের উপর এর কোনও রূপ কুপ্রভাব পড়েনি।”
আরও পড়ুন: ভরসা নেই চিনা ভ্যাকসিনে! শ্রীলঙ্কা থেকে টিকার বরাত ভারতে