United Kingdom: স্ত্রীর ‘আবদার’, “আমাকে খুন কর”, স্বামী রাজি হয়েই ছুড়ি দিয়ে গলাটা চিড়ে দিলেন

তুমি তৈরি তো? স্বামীর প্রশ্নের উত্তরে স্ত্রী বলেছিলেন, 'হ্যাঁ। তারপরই স্ত্রীর গলা একটি ছুরি দিয়ে চিড়ে দিয়েছিলেন স্বামী। যুক্তরাজ্যের আদালত হত্যার দায় থেকে মুক্তি দিল তাঁকে। এ কাহিনি এক অদ্ভুত প্রেমের কাহিনি।

United Kingdom: স্ত্রীর 'আবদার', আমাকে খুন কর, স্বামী রাজি হয়েই ছুড়ি দিয়ে গলাটা চিড়ে দিলেন
স্ত্রীকে ভালবেসে হত্যা করেছেন, এ এক অদ্ভুত প্রেমের কাহিনি
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jul 24, 2022 | 1:27 PM

লন্ডন: বাগানে পাশাপাশি দুটি চেয়ারে বসেছিলেন তাঁরা। স্ত্রী নিয়েছিলেন এক গ্লাস রেড ওয়াইন। স্বামীর গ্লাসে ছিল হুইস্কি। বেশ ঠান্ডা পড়েছিল। তাই দুজনের পরনেই ছিল কোট। দুজনে পানীয় শেষ করার পরই স্বামী জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘তুমি তৈরি তো?’ স্ত্রী উত্তরে দিয়েছিলেন, ‘হ্যাঁ, আমি কোনও শব্দ করব না।’ তারপরে স্বামী উঠে গিয়েছিলেন স্ত্রীর পিছনে। তারপর একটি ছুরি দিয়ে চিড়ে দিয়েছিলেন স্ত্রীর গলা। স্বাভাবিকভাবেই ৭১ বছর বয়সী স্ত্রী ডায়ানের হত্যাকাণ্ডের জন্য অভিযুক্ত হয়েছিলেন ৭৩ বছরের গ্রাহাম ম্যানসফিল্ড। তবে, গত বৃহস্পতিবার যুক্তরাজ্যের আদালত, তাঁকে স্ত্রী হত্যার দায় থেকে মুক্তি দিয়েছে। আদালত জানিয়েছে, অসুস্থ স্ত্রীর সঙ্গে হত্যা-আত্মহত্যার চুক্তি হয়েছিল স্বামীর। এ কাহিনি কোনও অপরাধের কাহিনি নয়, এ এক অদ্ভুত প্রেমের কাহিনি।

ঘটনাটি ঘটেছিল গত বছরের মার্চে। স্ত্রীর গলা কেটে হত্যার পর নিজের জীবনও নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন গ্রাহাম ম্যানসফিল্ড। কিন্তু, ব্যর্থ হয়েছিলেন। হত্যা-আত্মহত্যার বিষয়টি তাঁরা ঠিক করেছিলেন অবশ্য আরও আগে। ২০২০ সালের অক্টোবরে, তাঁদের ৪০তম বিবাহ বার্ষিকী উদযাপনের কয়েক সপ্তাহ পরই জানা গিয়েছিল ডায়ান ফুসফুসের ক্যানসারে ভুগছেন। গ্রাহাম জানিয়েছেন, হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরেই তাঁর স্ত্রী প্রথমেই তাঁকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, পরিস্থিতি খুব খারাপ হলে তিনি তাঁকে হত্যা করতে পারবেন? ‘এক শর্তে’ রাজি হয়েছিলেন গ্রাহাম। স্ত্রীকে বলেছিলেন, তাঁকে হত্যার পর নিজেও আত্মঘাতী হবেন। দুজনেই সেই চুক্তিতে রাজি হয়েছিলেন। নিজেও স্ত্রীর সঙ্গেই পৃথিবী ছাড়বেন, এই ভাবনাই তাঁকে স্ত্রীর গলায় ছুরি চালানোর শক্তি দিয়েছিল বলে জানিয়েছেন গ্রাহাম।

১৯৮০ সালে বিবাহ করেছিলেন গ্রাহাম ও ডায়ান। তারও ৬ বছর আগে থেকে ছিল তাঁদের প্রেমের সম্পর্ক। বিবাহের ৪০ বছর পরও তাঁদের সেই প্রেম এতটুকু কমেনি। কিন্তু গত বছরের মার্চে, ক্যানসারের যন্ত্রণা অসহ্য হয়ে উঠেছিল ডায়ানের জন্য। স্বামীর কাছ থেকে বিদায় চেয়েছিলেন তিনি। দুজনে মিলে ঠিক করেন ২০২১ সালের ২২ মার্চই হবে তাঁদের জীবনের শেষদিন। কাজটা করার জায়গা হিসেবে বেছে নিয়েছিলে তাঁদের গ্রেটার ম্যানচেস্টারের বাড়ির বাগান।

গ্রাহাম জানিয়েছেন, দিন কয়েক আগে থেকেই তাঁরা পৃথিবীকে বিদায় জানানোর প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছিলেন। কাগজওয়ালা, দুধওয়ালা, উইন্ডো ক্লিনারকে আসতে বারণ করে দিয়েছিলেন। ফ্রিজের সব খাবার-দাবার শেষ করেছিলেন। ঘরদোর পরিষ্কার করেছিলেন। ২১ মার্চ রাতটা কাটিয়েছিলেন একে অপরকে জড়িয়ে ধরে। ঘুমোতে পারেননি কেউই। রাত কেটেছিল কান্নায়, আর একে অপরকে লক্ষবার ‘আই লাভ ইউ’ বলে।

৪০ বছরের বিবাহিত জীবন ছিল ভালবাসায় মাখা

পরের দিন বিকেলের ঘটনা আগেই বলা হয়েছে। স্ত্রীর গলা কাটার পর গ্রাহাম দৌড়ে চেয়ারের সামনে গিয়ে স্ত্রীর হাতটা ধরেছিলেন। তারপর তিনি নিজেও আত্মঘাতী হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু, মৃত্যুর বদলে সংজ্ঞা হারান তিনি। পরদিন সকালে রান্নাঘরে জ্ঞান ফেরার পর নিজেই পুলিশ ও প্যারামেডিকদের খবর দিয়েছিলেন। স্ত্রীকে হত্যার দায়ে গ্রেফতার করা হয়েছিল গ্রাহামকে। তাঁর ঘাড় এবং দুই হাতের কব্জিতেই ক্ষত ছিল। পুলিশকে উদ্দেশ্য করে ডায়ান একটি নোটে লিখে গিয়েছিলেন। তাতে লেখা ছিল, ‘আমরা নিজেরই নিজেদের প্রাণ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

আদালতে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত গ্রাহাম স্ত্রীকে হত্যার অভিযোগ অস্বীকার করেন। শেষ পর্যন্ত আদালত জানিয়েছে, স্ত্রীর প্রতি ‘ভালোবাসা’ এবং ‘সমবেদনা’ থেকেই গ্রাহাম এই কাজ করেছেন। তাঁকে মাত্র দুই বছরের স্থগিত কারাদণ্ডের সাজা দেওয়া হয়। তবে, গ্রাহাম তারপরও দাবি করেছেন, মামলাটি আদালতে ওঠাই উচিত হয়নি। তিনি যুক্তরাজ্যে স্বেচ্ছামৃত্যু বৈধ করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি আরও জানিয়েছেন, কোভিড লকডাউনের কারণে আন্তর্জাতিক ভ্রমণ বন্ধ না থাকলে তাঁরা এই কাজ করার জন্য সুইজারল্যান্ডে যেতেন। সেখানে স্বেচ্ছামৃত্যু বৈধ। গ্রাহাম ম্যান্সফিল্ড বলেছেন, ‘আমরা কিছু ভুল করিনি। আমাদের অন্য কারোর থেকে অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন ছিল না। এটা আমাদের নিজেদের সিদ্ধান্ত ছিল। আমি তাকে ভালোবেসে হত্যা করেছি।’