তৈরি হচ্ছে ডিএনএ ভিত্তিক ভয়ঙ্কর জৈব অস্ত্র! হত্যা করা যাবে বেছে বেছে, ধরা পড়বে না হত্যাকারী

DNA based bio-weapons: তৈরি হচ্ছে এমন জৈব অস্ত্র যা ডিএনএ তথ্য ব্যবহার করে বেছে বেছে হত্যা করতে পারে। সতর্ক করলেন মার্কিন কংগ্রেসম্যান।

তৈরি হচ্ছে ডিএনএ ভিত্তিক ভয়ঙ্কর জৈব অস্ত্র! হত্যা করা যাবে বেছে বেছে, ধরা পড়বে না হত্যাকারী
প্রতীকী ছবি
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jul 25, 2022 | 9:10 AM

ওয়াশিংটন: একুশ শতাব্দীতে জৈব অস্ত্র আর কল্পনা নয়। তবে, কোনওদিন কি এমন কোনও জৈব অস্ত্রের কথা শুনেছে, যা ডিএনএ প্রোফাইল ব্যবহার করে শুধুমাত্র একজন নির্দিষ্ট ব্যক্তির উপর হামলা চালাতে পারে? শুনে কল্পবিজ্ঞানের কাহিনি মনে হতে পারে। তবে, এই ধরণের অস্ত্র এখন ঘোর বাস্তব। বিভিন্ন দেশই এই ধরণের জৈব অস্তর তৈরির কাজ চালাচ্ছে বলে সন্দেহ করা হয়। গত শুক্রবার মার্কিন ‘হাউস অব রিপ্রেজ়েন্টেটিভস’-এর গোয়েন্দা বিষয়ক কমিটির অন্যতম সদস্য তথা কলোরাডোর প্রতিনিধি জেসন ক্রো এই নতুন ধরনের অস্ত্রের বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। এই কারণেই যত্রতত্র তাদের ডিএনএ প্রোফাইল ভাগ করে নেওয়ার বিষয়ে সতর্ক করেছেন কলোরাডোর সেনেটর।

শুক্রবার অ্যাস্পেন সিকিউরিটি ফোরামে এই নতুন ধরণের জৈবি অস্ত্রের বিপদ সম্পর্কে একটি বক্তৃতা দেন জেসন ক্রো। সেখানে তিনি বলেন, “শুধুমাত্র নির্দিষ্ট কোনও ব্যক্তিকে হত্যা করার জন্য সেই ব্যক্তির ডিএনএ ব্যবহার করে জৈব অস্ত্র তৈরি করা হচ্ছে। এই নতুন ধরণের অস্ত্র আসতে খুব বেশি দেরি নেই। তাই বেসরকারি সংস্থাগুলির সঙ্গে ডিএনএ ভাগ করে নেওয়ার বিষয়ে অসতর্ক হওয়া চলবে না। নাহলে আপনি এমন একটি জৈবিক অস্ত্রের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হতে পারেন। যা আপনাকে হত্যা করবে অথবা যুদ্ধক্ষেত্র থেকে সরিয়ে দেবে অথবা অকার্যকর করে দেবে। কারোর ডিএনএ নেওয়া মানে তাঁর পুরো মেডিকেল প্রোফাইলই জেনে নেওয়া।”

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে ডিএনএ টেস্টিং পরিষেবার ব্যাপক প্রসার ঘটছে। গ্রাহকরা এই সকল বেসরকারি কেন্দ্রগুলিতে স্বেচ্ছায় নিজেদের জেনেটিক ম্যাপিং ভাগ করে নেন। তঁরা নিজেদের বংশ এবং স্বাস্থ্য সম্পর্কে আরও বেশি তথ্য জানতে চান। আর এই প্রবণতাকে কাজে লাগিয়েই এই জৈব অস্ত্রগুলি তৈরি করা হচ্ছে। অধিকাংশ বেসরকারি ডিএনএ পরীক্ষাকারী সংস্থাই দাবি করে, তারা গ্রাহকদের ব্যক্তিগত তথ্য বিক্রি করে না। কিন্তু, পুলিশ জিজ্ঞাসা করলে ডিএনএ পরীক্ষাকারী সংস্থাগুলি গ্রাহকদের তথ্য ভাগ করে থাকে। কাজেই তাদের কথার সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।

তবে শুধু ক্রো একা নন, মার্কিন সেনেটেও এই ধরণের ডিএনএ ভিত্তিক জৈব অস্ত্রের কথা উঠেছে। আর্মড সার্ভিসেস কমিটির সদস্য তথা আইওয়ার সেনেটর জনি আর্নস্ট দাবি করেছেন, চিন-রাশিয়ার মতো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিপক্ষ শক্তিগুলি এই ধরনের ডিএনএ ভিত্তিক জৈব অস্ত্র তৈরি করছে। মার্কিনিদের খাদ্য সরবরাহে ব্যাপকভাবে হামলা করতে এই ধরনের অস্ত্র মোতায়েন করা হতে পারে। আর্নস্ট আরও বলেছিলেন, ধরা যাক কয়েকটি বিশেষ প্রাণীর মাংসের উপর মার্কিন অসামরিক জনতা থেকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা নির্ভরশীল। ওই নির্দিষ্ট প্রাণীগুলি জৈবিক অস্ত্রের লক্ষ্য হতে পারে। যার ফলে সেই দেশে খাদ্যাভাব দেখা যেতে পারে। ফলে জনসংখ্যা দুর্বল হয়ে পড়বে।

অর্থাৎ, হাউস অব রিপ্রেজ়েন্টেটিভস এবং সেনেট – মার্কিন সংসদের দুই কক্ষেই যখন এই ধরনের জৈব অস্ত্রের বিকাশ নিয়ে সতর্কতা এসেছে। কিন্তু, সত্যিই কি এই ধরণের অস্ত্রের বিকাশ বাস্তবে সম্ভব? নাকি এটা শুধুই তত্ত্বগত ধারণা? চলতি সপ্তাহের শুরুতে ‘ওয়াশিংটন এক্সামিনার’ পত্রিকায় একটি নিবন্ধে জেসন ক্রো-এর জৈব অস্ত্রের দাবি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। নিবন্ধে বলা হয়েছে, ব্যক্তিগত তথ্যাবলী ব্যবহার করে করে এই ধরনের অস্ত্র তৈরি করা অত্যন্ত সহজ হবে। বলা হয়েছে, নির্দিষ্ট কোনও ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবহার করার মতো জৈব অস্ত্রের বিকাশের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র যে ওই ব্যক্তির ডিএনএ ব্যবহার করতে হবে, তার কোনও মানে নেই। এমনকি, ওই ব্যক্তির নিকটাত্মীয়ের ডিএনএ ব্যবহার করেও ওই অস্ত্র তৈরি করা যেতে পারে।

ডিএনএ ব্যবহার করে একটা নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের পুরো জনগোষ্ঠীকেও নিশানা করা যেতে পারে। এই ধরনের প্রযুক্তি তৈরি হলে অত্যন্ত নিখুঁতভাবে কোনও নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে হত্যা করা যাবে। একই সময়ে হত্যাকারীদেরও খুঁজে পাওয়া আরও কঠিন হয়ে উঠবে। আবার ডিএনএ ভিত্তিক জৈব অস্ত্র তৈরি করে একটি নির্দিষ্ট ধরনের খামার পালিত প্রাণী বা খামার উৎপাদনকে নিশানাও করা যেতে পারে। কৃষিক্ষেত্রেও একই প্রযুক্তির ব্যবহার করা ব্যাপক ক্ষতিসাধন করা যেতে পারে। এর ফলে কোনও এলাকায় অনাহার সৃষ্টি হতে পারে। যা গোটা একটা দেশের পতনের কারণ হতে পারে।