ভিডিয়ো কনটেন্ট তৈরির জন্য সন্তানকে শোষণ! বাবা-মা-এর বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে শিশুরা

সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলিতে অপ্রাপ্তবয়স্ক ইনফ্লুয়েন্সারদের 'শোষণ' বন্ধ করতে এক নয়া আইন প্রণয়ন করল আমেরিকর ইলিনয় প্রদেশ। তাদের ইচ্ছের বিরুদ্ধে যদি বাবা-মা বা অন্য কোনও আত্মীয় সোশ্যাল মিডিয়ায় তাদের ব্যবহার করে, সেই ক্ষেত্রে মামলা করা যাবে। তারা যাতে যথাযথ ক্ষতিপূরণ পায়, তা নিশ্চিত করতেই এই নয়া আইন প্রণয়ন করা হয়েছে।

ভিডিয়ো কনটেন্ট তৈরির জন্য সন্তানকে শোষণ! বাবা-মা-এর বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে শিশুরা
প্রতীকী ছবিImage Credit source: Pixabay
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Aug 18, 2023 | 2:48 PM

ওয়াশিংটন: সময়টা সোশ্যাল মিডিয়ার। প্রায় সকলেই সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার হতে চাইছে। আর বর্তমান সময়ের এই প্রবণতার শিকার হচ্ছে শিশুরা। সোশ্যাল মিডিয়ায় একটু জনপ্রিয়তা পাওয়ার লোভে কোলের সন্তানদের ব্যবহার করতেও ছাড়ছেন না বাবা-মায়েরা। জ্ঞান হওয়ার আগেই, সোশ্যাল মিডিয়ার লাইক-সাবস্ক্রিশনের চক্রে বাধা পড়ছে শৈশব। গোটা বিশ্বেই মনোবিদরা এই সামাজিক চাপ থেকে শিশুদের মুক্ত রাখার সুপারিশ করছেন। এই অবস্থায়, সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলিতে অপ্রাপ্তবয়স্ক ইনফ্লুয়েন্সারদের ‘শোষণ’ বন্ধ করতে এক নয়া আইন প্রণয়ন করল আমেরিকর ইলিনয় প্রদেশ। তাদের ইচ্ছের বিরুদ্ধে যদি বাবা-মা বা অন্য কোনও আত্মীয় সোশ্যাল মিডিয়ায় তাদের ব্যবহার করে, সেই ক্ষেত্রে মামলা করা যাবে। তারা যাতে যথাযথ ক্ষতিপূরণ পায়, তা নিশ্চিত করতেই এই নয়া আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। আর এই আইনের পিছনে বড় ভূমিকা রয়েছে এক ভারতীয় বংশোদ্ভূত কিশোরীর।

মার্কিন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে, ইলিনয়ের নরমাল এলাকার বাসিন্দা ১৬ বছরের শ্রেয়া নাল্লামোথুর। সোশ্যাল মিডিয়ার ভিডিয়োগুলিতে অপ্রাপ্তবয়স্কদের অপব্যবহার নিয়ে প্রথম মুখ খুলেছিল এই ভারতীয় বংশোদ্ভূত কিশোরী। কোভিড-১৯ মহামারির সময়ে, বাড়িতে বসে সোশ্যাল মিডিয়া ঘাঁটা ছাড়া কোনও কাজ ছিল না তার। আর সেই সময়ই শ্রেয়া লক্ষ্য করেছিল, পারিবারিক ভ্লগগুলিতে ক্রমে শিশুদের অংশগ্রহণের সংখ্যা বাড়ছে। পারিবারিক ভ্লগিংয়ের জেরে অত্যন্ত ব্যক্তিগত এবং অন্তরঙ্গ মুহূর্তগুলিও ফাঁস হয়ে যাচ্ছে ইন্টারনেটে। এই নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে, ইলিনয়ের সেনেটর তথা ডেমোক্র্যাট পার্টির নেতা ডেভ কোহলারকে একটি চিঠি লিখেছিল সে। সোশ্যাল মিডিয়ায় জনপ্রিয়তার জন্য শিশুদের শোষণ প্রতিরোধে একটি আইন প্রণয়নের দাবি জানিয়েছিল সে।

মূলতঃ, তার সেই চিঠির অনুপ্রেরণাতেই এই আইন জারি করা হল। ইলিনয়ের গভর্নর জেবি প্রিটজকার রাজ্যের শিশু শ্রম আইনে একটি সংশোধনী এনেছেন। এই সংশোধনীর ফলে বেশ কিছু পরিবর্তন হয়েছে আইনটিতে। সংশোধনী অনুযায়ী, ১৮ বছরের কম বয়সী কিশোর-কিশোরীদের ব্যবহার করে ভিডিয়ো বানিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে যদি তাদের বাবা-মা আয় করেন, সেই ক্ষেত্রে বাবা-মায়ের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে তারা। এই নতুন আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে বিবেচনা করা হয়েছে ১৯৩৬ সালের ‘জ্যাকি কুগানের আইন’-এর ধারাগুলিও। বাড়তি উপার্জনের জন্য শিশু অভিনেতাদের যাতে তাদের বাবা-মারা শোষণ করতে না পারেন, সেই লক্ষ্যেই এই আইন নকশা করা হয়েছিল।

নয়া আইন অনুসারে, ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে, ইলিনয় প্রদেশে ভিডিয়ো কনটেন্ট থেকে উপার্জনের ৫০ শতাংশ তাদের শিশুর জন্য তৈরি কোনও ট্রাস্ট ফান্ডে দিতে হবে অভিভাবকদের। তবে এই দেয় অর্থের পরিমাণ নির্ভর করবে, শিশুটিকে ভিডিয়োতে কত সময় ধরে দেখানো হচ্ছে, তার উপর। যদি ভিডিয়োটির ৫০ শতাংশ অংশে শিশুটি থাকে, তাহলে উপার্জনের ২৫ শতাংশ তাকে দিতে হবে। একইভাবে, ভিডিয়োটির ১০০ শতাংশেই শিশুটি থাকলে, উপার্জনের ৫০ শতাংশ তাকে দিতে হবে। এই বিষয়ে নাল্লামোথু বলেছে, “এই শিশুদের বোঝার মতো বয়সই হয়নি, অথবা তাদের কিছু বোঝার সুযোগ দেওয়া হয় না। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক।”