করোনার থাবা সত্ত্বেও ২০.১% শতাংশ বৃদ্ধি, তবে এগোতে হবে অনেক পথ

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সত্ত্বেও যেভাবে প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে গত তিন মাসে বৃদ্ধি পরিলক্ষিত হয়েছে, তা ইতিবাচক বলেই দাবি করা হচ্ছে বিশেষজ্ঞদের পক্ষ থেকে।

করোনার থাবা সত্ত্বেও ২০.১% শতাংশ বৃদ্ধি, তবে এগোতে হবে অনেক পথ
প্রতীকি ছবি
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Sep 01, 2021 | 7:45 PM

কলকাতা: করোনার বিপর্যয় কাটিয়ে অবশেষে দেশের অর্থনীতিতে গতি ফিরছে। কার্যত নজিরবিহীনভাবে একটি ত্রৈমাসিকে দেশের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের (জিডিপি) বৃদ্ধি পেরিয়েছে ২০ শতাংশের গণ্ডি। মঙ্গলবার ২০২২ অর্থবর্ষের প্রথম ত্রৈমাসিকের (এপ্রিল-জুন) জিডিপির পরিমাণ রেকর্ড ২০.১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৩২.৩৮ লক্ষ কোটি টাকা, যা ২০২১ অর্থবর্ষের প্রথম ত্রৈমাসিকে ছিল প্রায় ২৭ লক্ষ কোটি টাকা।

এই তথ্য থেকেই অর্থনীতিবিদদের যুক্তি দেশের অর্থনীতি ফের ইতিবাচক দিকেই যে এগোচ্ছে, এই বৃদ্ধি তারই প্রমাণ। ফলে বলাই যায় করোনার প্রভাব কাটিয়ে ফের ছন্দে ফিরছে দেশের অর্থনীতি ও তার মূল ভিত্তি। সংখ্যা অনেক কিছু প্রকাশ করে। আবার গোপনও করতে পারে অনেক কিছু।

গত অর্থবর্ষের এই ত্রৈমাসিকের তুলনায় এই বৃদ্ধি নিয়ে বিশেষজ্ঞদের প্রশ্ন রয়েছে। গতবছর এই সময় দেশজোড়া লকডাউনের কারণে জিডিপি সংকুচিত হয়েছিল ২৪ শতাংশের সামান্য বেশি। সেই তুলনায় এবছরের এই বৃদ্ধি নিঃসন্দেহে উল্লেখযোগ্য বলেই মত ওয়াকিবহাল মহলের। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সত্ত্বেও যেভাবে প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে গত তিন মাসে বৃদ্ধি পরিলক্ষিত হয়েছে, তা ইতিবাচক বলেই দাবি করা হচ্ছে বিশেষজ্ঞদের পক্ষ থেকে।

কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকাশিত তথ্য বলছে, চলতি বছরের প্রথম ত্রৈমাসিকে কৃষি ক্ষেত্রে বৃদ্ধি হয়েছে ৪.৫ শতাংশ, ম্যানুফ্যাকচারিং বা উৎপাদন ক্ষেত্রে বৃদ্ধি হয়েছে ৪৯.৬ শতাংশ হারে, নির্মাণ ক্ষেত্রে বৃদ্ধির হয়েছে ৮৮.৩ শতাংশ হারে, খনিজ ক্ষেত্রের বৃদ্ধি হয়েছে ১৮.৬ শতাংশ হারে এবং বিদ্যুৎ বা শক্তি ক্ষেত্রের বৃদ্ধি হয়েছে ১৪.৩ শতাংশ হারে। যদিও বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রের বৃদ্ধি এই সময়কালে ঠিক ততটা হয়নি। যেমন পরিষেবা ক্ষেত্রে সামগ্রিক বৃদ্ধির হার ১১%-এর সামান্য বেশি।

বিশেষজ্ঞদের মতে, জিডিপির এই বৃদ্ধি ইতিবাচক, কিন্তু এখনও অনেকটা জায়গা রয়েছে, যার কারণে অর্থনীতিতে সামগ্রিক ভাবে চাহিদা বৃদ্ধি আগামীদিনে আরও তরাণ্বিত হতে পারে। ডিজিপি বৃদ্ধি হলেও সাধারণ মানুষের চাহিদা এখনও অর্থনীতির মূল চালকের আসনে বসতে পাড়েনি।

গত ত্রৈমাসিকে রফতানির পরিমাণ অত্যন্ত ইতিবাচক, তা প্রায় জিডিপির ২০ শতাংশ ছুঁয়েছে। পাশাপাশি, বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানিয়েছেন, অভ্যন্তরীণ চাহিদা খানিকটা কম হওয়ার কারণে রফতানির বৃদ্ধি এতটা চোখে পড়ছে। লকডাউনের কারণে দেশের অভ্যন্তরে সমগ্র পণ্যের চাহিদা খানিকটা কমেছে, সেই কারণেই রফতানির পরিমাণ এতটা বেড়েছে।

তাঁদের মতে, করোনার তৃতীয় ঢেউ এবং অর্থনীতিতে তার প্রভাব, চাহিদা বৃদ্ধি এবং অন্য অনেক ক্ষেত্রের নির্ভর করছে চলতি অর্থবর্ষের বাকি তিনটি ত্রৈমাসিকের বৃদ্ধির হার, যা সমগ্র অর্থবর্ষের অর্থনীতির বৃদ্ধির নির্ধারক হয়ে উঠতে পারে। এই বৃদ্ধির সবচেয়ে উজ্জ্বলতম ক্ষেত্রটি হল প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর আদায়ের পরিমাণ। এপ্রিল-জুলাই চার মাসে এই আদায়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫.২৯ লক্ষ কোটি টাকা। যা ২০১৯-২০ অর্থবর্ষের তুলনায় প্রায় ২ লক্ষ কোটি টাকা বেশি। ২০২০ অর্থবর্ষের প্রথম চার মাসে কর আদায়ের পরিমাণ ছিল ৩.৩৯ লক্ষ কোটি টাকা।

বিশেষজ্ঞ মহলের একাংশের মতে, চলতি অর্থবর্ষের প্রথম ত্রৈমাসিকে জিডিপির এই বৃদ্ধি আশাপ্রদ হলেও তা বিরাট কিছু নয়। কারণ নিয়ম অনুসারে, জিডিপির এই বৃদ্ধি গত অর্থবর্ষের প্রথম ত্রৈমাসিকের সঙ্গে তুলনীয়। গত অর্থবর্ষে ডিজিপির বৃদ্ধি নয়, বরং সংকুচিত হয়েছিল ২৪ শতাংশ হারে। ফলে এই ‘লো বেস’-এর কারণেই এই রেকর্ড বৃদ্ধি, যা দেশের অর্থনীতির সঠিক চিত্র নয়।

তাঁদের মতে, যদি উপভোক্তাদের অবস্থানের পরিবর্তন হয়, এবং সামগ্রিক চাহিদা বৃদ্ধি পায়, তবে পরবর্তী ত্রৈমাসিকগুলিতে অর্থনীতির বৃদ্ধির গতি একইভাবে অব্যাহত থাকতে পারে। তবে যাই হোক, নীতিনির্ধারকদের অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে আর্থিক বৃদ্ধি যতটা সম্ভব হওয়া উচিত তা যেন হয় এবং দেশে যুবকদের জন্য আরও বেশি করে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা উচিত, এই দুটিই বর্তমান সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হওয়া উচিত। আর তা হলেই বাকি সময়ে দেশের বৃদ্ধির পরিমাণ সঠিক পথেই এগোবে।

কর্মসংস্থান বৃদ্ধি ত্বরান্নিত করার লক্ষ্যে সরকারের উচিৎ বিনিয়োগ বাড়ানো। বিপুল রাজস্ব বৃদ্ধির ফলে এখন সরকারের হাত খুলে লগ্নি করা উচিৎ। মনে রাখতে হবে, বর্তমান আর্থিক বছরের প্রথম চার মাসে প্রায় ২ লক্ষ কোটি টাকা রাজস্ব সংগ্রহ বাড়লেও সরকারের মোট ব্যয় বেড়েছে তাঁর মাত্র ২৫%।

উল্লেখ্য, ৯০-এর দশক অৰ্থাৎ যখন থেকে এই জিডিপি প্রকাশের পদ্ধতি নেওয়া হয়েছে, সেই সময় থেকে এই প্রথম দেশের ডিজিপির বৃদ্ধি একটি ত্রৈমাসিকে এতটা বাড়ল বলেই জানিয়েছে কেন্দ্র। দেশের মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা কৃষ্ণমূর্তি সুব্রমনিয়াম জানিয়েছেন, ভারত পরিকাঠামোগত সংস্কার, পরিকাঠামো ক্ষেত্রে বরাদ্দ বৃদ্ধি এবং দ্রুত টিকাদানের কারণেই এই বৃদ্ধি মাত্রা অর্জন করা গেছে।

এছাড়াও, তিনি জানিয়েছেন, চলতি অর্থবর্ষের প্রথম ত্রৈমাসিকের তিন মাসেই জিএসটি আদায়ের পরিমাণ এক লক্ষ কোটি টাকা পেরিয়েছে, এই কর আদায়ও জিডিপির পরিমাণ বাড়াতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছে।

তবে এই আর্থিক বৃদ্ধি থেকে যে মূল শিক্ষা পাওয়া গেছে তা এই রকম – প্রথম ত্রৈমাসিকে করোনার ফলে বেশি প্রাণহানি ঘটলেও রাজ্যভিত্তিক লকডাউন ঘোষণার ফলে আর্থিক বৃদ্ধি খুব বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়নি। গত বছর দেশজুড়ে লকডাউনের ফলে ক্ষতি অনেক বেশি হয়েছিল। আরও পড়ুন: হেঁসেলে আগুন, আরও ২৫ টাকা বাড়ল রান্নার গ্যাসের দাম! সিলিন্ডার পিছু গুনতে হবে কত টাকা?