Gautam Adani Dharavi: ‘স্লামডগ মিলিয়নেয়ার’ হবেন গৌতম আদানি? কেন ধারাভির পুনর্নির্মাণে এত উৎসাহ তাঁর?
Gautam Adani Dharavi redevelopment project: আদানি রিয়েলটির একজন মুখপাত্র বলেছেন, আর্থিক ক্ষতি সত্ত্বেও তাদের সংস্থা এই প্রকল্পের উন্নয়নে দারুণ আগ্রহী। কিন্তু, কেন ধারাভি বস্তির পুনর্নির্মাণে উৎসাহী আদানি গোষ্ঠী?
মুম্বই: চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত বিশ্বের তৃতীয় ধনী ব্যক্তি ছিলেন গৌতম আদানি। তবে, তারপরই হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের স্টক ম্যানিপুলেশন এবং অ্যাকাউন্ট জালিয়াতির অভিযোগের ধাক্কায়, ১৫ ট্রিলিয়ন টাকা হারিয়েছেন, ধনীদের তালিকায় নেমে এসেছেন ৩০তম স্থানে। তবে, তারপরও এশিয়ার বৃহত্তম বস্তি ধারাভির পুনর্নির্মাণের প্রকল্প পাচ্ছেন তিনিই। ২১ মার্চ, মহারাষ্ট্রের উপ-মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়ণবীস জানিয়েছেন, ধারাভি পুনর্নির্মাণ প্রকল্প শীঘ্রই শুরু হবে। ৫,০৬৯ কোটি টাকায় এই প্রকল্পের বরাত পেয়েছে ‘আদানি রিয়েলটি’। আগামী সাত বছরের মধ্যে ধারাভির বাসিন্দাদের পুনর্বাসন দিতে হবে এবং তার পরের ১০ বছরের মধ্যে সমস্ত বাণিজ্যিক ও আবাসিক ভবন নির্মাণ করতে হবে। আদানি রিয়েলটির একজন মুখপাত্র বলেছেন, আর্থিক ক্ষতি সত্ত্বেও তাদের সংস্থা এই প্রকল্পের উন্নয়নে দারুণ আগ্রহী। কিন্তু, কেন ধারাভি বস্তির পুনর্নির্মাণে উৎসাহী আদানি গোষ্ঠী?
ধারাভি পুনর্নির্মাণের জন্য আগামী কয়েক বছরে আদানি রিয়েলটিকে ২৫,০০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে হবে। এলাকা এবং খরচ – দুই দিক থেকেই এটিই হল আদানি গোষ্ঠীর সবথেকে বড় রিয়েল এস্টেট উদ্যোগ। রিয়েল এস্টেট বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ১৭ বছর পর এই প্রকল্প থেকে আদানি গোষ্ঠী যে লাভ করবে, তার সামনে লগ্নির এই অর্থের পরিমাণ অত্যন্ত কম। প্রকল্পটির নির্মাণ শেষ হলে ধারাভি থেকে ৬ লক্ষ কোটি টাকা উপার্জন করবে আদানি রিয়েলটি, এমনটাই আশা করা হচ্ছে। নাইট ফ্রাঙ্কের কার্যনির্বাহী পরিচালক গোলাম জিয়া বলেছেন, “এই প্রকল্পের সামাজিক গুরুত্ব ও বাণিজ্যিক গুরুত্বকে উপেক্ষা করা যায় না। তাই, আদানির মতো কেউ এই প্রকল্প গ্রহণ করতে আগ্রহী হবে।”
গত শতাব্দীর আশির দশকের শেষ দিকে মুম্বইয়ের বস্তির পুনঃউন্নয়নের কাজ শুরু হয়েছিল। নয়ের দশকের শেষের এই কাজে গতি বেড়েছিল। ৩১৫ হেক্টর জুড়ে বিস্তৃত ধারাভি হল এশিয়ার বৃহত্তম বস্তি তথা মুম্বইয়ের সবথেকে বড় জমি যার উন্নয়ন হয়নি। ১৫০ বছরেরও বেশি পুরনো এই বস্তিতে প্রায় দেড় লক্ষ ঝুপড়ি বাড়ি এবং ১৫,০০০ কুটির শিল্প রয়েছে। সম্পূর্ণ এলাকার জমির সর্বমোট মূল্য ১.৭০ লক্ষ কোটি টাকা! তার উপর এই বস্তি একেবারে মুম্বই শহরের কেন্দ্রস্থলে, সায়ন এবং মাহিম মেট্রোস্টেশনের মধ্যে অবস্থিত। মুম্বইয়ের সবথেকে বড় বাণিজ্যিক কেন্দ্র, বান্দ্রা-কুরলা কমপ্লেক্স এই বস্তি থেকে মাত্র দুই কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। আদানি গোষ্ঠীর পরিচালিত ছত্রপতি শিবাজি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরও এখান থেকে মাত্র ১২ কিলোমিটার দূরে। কাজেই ধারাভি বস্তির উপর নিয়ন্ত্রণ কায়েম করার ফলে, আদানি গোষ্ঠী মুম্বইয়ের সবথেকে বড় বাণিজ্যিক জমির মালিকে পরিণত হবে।
ধারাভি রিডেভেলপমেন্ট অথরিটির চেয়ারম্যান, শ্রীনিবাস বলেছেন, “আমার মতে, ১৭ বছরের মধ্যে ধারাভির চেহারা বাকি মুম্বইয়ের মতোই হয়ে যাবে। কিন্তু তার নিজস্ব পরিচয় অক্ষত থাকবে।” তবে, মহারাষ্ট্র রিয়েল এস্টেট রেগুলেটরি অথরিটির প্রাক্তন চেয়ারম্যান গৌতম চট্টোপাধ্য়ায় এতটা আশাবাদী নন। তিনি বলেছেন, “বিনামূল্যে আবাসিক-বাণিজ্যিক প্রকল্পের বিক্রি ধারাভির আদর্শ সামাজিক পরিবেশ নষ্ট করবে। আবাসিক এলাকাগুলি বিক্রি হবে প্রতি বর্গফুট ৫০,০০০ থেকে ৬০,০০০ টাকায়। অথবা বাণিজ্যিক এলাকাগুলি বিক্রি হবে প্রতি বর্গফুট এক লক্ষ টাকায়। এর ফলে শুধুমাত্র বহিরাগতরাই এখানে জায়গা পাবে।” তিনি আরও বলেছেন, “যে সমস্ত লোক এই অভিজাত অ্যাপার্টমেন্টগুলিতে থাকার জন্য বর্গফুট প্রতি ৫০,০০০ টাকা দেবে, তারা ধারাভিতে কাজ নাও করতে পারে। অন্যদিকে, যারা এই বাণিজ্যিক কমপ্লেক্সগুলিতে কাজ করবে, তাদের অন্য কোথাও থাকতে হবে।”