Uttar Pradesh Assembly Election 2022 : বিন্দুতে সিন্ধু দর্শন! পদ্ম-সাইকেল-হাতি; সব সমান সমান, ত্রিশঙ্কুর পথে উত্তর প্রদেশ!

UP Polls : উত্তর প্রদেশে কোন সমীকরণে ভোট হবে? কারা কাকে কী কারণে ভোট দিচ্ছে

Uttar Pradesh Assembly Election 2022 : বিন্দুতে সিন্ধু দর্শন! পদ্ম-সাইকেল-হাতি; সব সমান সমান, ত্রিশঙ্কুর পথে উত্তর প্রদেশ!
গ্রাফিক্স : অভীক দেবনাথ (টিভি৯ বাংলা)
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Mar 04, 2022 | 9:32 PM

লখনউ : আর মাত্র ৪৮ ঘণ্টা পরই প্রথম দফার বিধানসভা নির্বাচন উত্তর প্রদেশে (Uttar Pradesh Assembly Election 2022) । শেষ মুহূর্তের প্রচারে ঝড় তুলেছে শাসক ও বিরোধী দুই শিবিরই। ৪০৩ টি বিধানসভা আসন এবং ৮০ টি লোকসভা আসন সমন্বিত উত্তর প্রদেশের দিকে নজর গোটা দেশের। কারণ দেশের সর্বোচ্চ আসন সমন্বিত এই রাজ্যের রাজনৈতিক সমীকরণ বা ভোটের অঙ্কের উপর নির্ভর করে থাকে কেন্দ্রের মসনদে কে বসবে। কারণ দেশের ৫৪৩ টি লোকসভা আসনের ৮০ টি উত্তর প্রদেশে। সব রাজ্যের থেকে উত্তর প্রদেশ কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে অনেক বেশি গুরুত্ব বহন করে। ১৫ কোটিও বেশি জনসংখ্যার এই রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে সাত দফায়। আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি হবে প্রথম দফার নির্বাচন। ভোট হবে ৫৮ টি বিধানসভা আসনে। এর মধ্যে ৩৭ টি আসনই পশ্চিম উত্তর প্রদেশে। এইবারের নির্বাচনে বিজেপির নজর এই পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে। জাট অধ্যুষিত এই এলাকায় গত নির্বাচনে বিজেপির ভালো ভোটের হার ছিল। কিন্তু গত এক বছরব্যাপী কৃষক আন্দোলনে জাট কৃষকদের সমর্থন বিজেপি হারিয়েছে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। অন্যদিকে জাটদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় রাষ্ট্রীয় লোক দল নেতা জয়ন্ত চৌধুরি। তিনি এই নির্বাচনে বিজেপি বিরোধী দল সমাজবাদী পার্টির অখিলেশের সঙ্গে জোট বেধেছে। সব মিলিয়ে পশ্চিম উত্তর প্রদেশে নিজেদের জায়গা ধরে রাখতে বিজেপিকে বেশ বেগ পেতে হবে বলেই মনে করা হচ্ছে।

মোহন্দ নদী উত্তর প্রদেশ ও উত্তরাখণ্ডকে ভাগ করে বয়ে গিয়েছে। এই নদীর থেকে কিছু মিটার উত্তরে গণেশপুর গ্রাম পঞ্চায়েত। পশ্চিম উত্তর প্রদেশে সীমান্তে অবস্থিত এই গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে রয়েছে তিনটি গ্রাম- গণেশপুর, মোহন্দ এবং শ্যোদি নগর। এই তিনটি গ্রামই বেহাত বিধানসভার (Behat Assembly Constituency)মধ্যে পড়ে। এই গণেশপুর পঞ্চায়েতের রাজনৈতিক সমীকরণ এবং বৈচিত্র্যের জন্য একে একটি ছোট্ট উত্তর প্রদেশ বললে কোনও ভুল কিছু বলা হবে না। উত্তর প্রদেশের রাজনৈতিক অঙ্কটা একটু জটিল। তবে গণেশপুর গ্রাম পঞ্চায়েতেরে ভোটের সমীকরণের পর্যালোচনা করলেই গোটা উত্তর প্রদেশের একটি ছবি পাওয়া যায়। উত্তর প্রদেশে কীভাবে বিভিন্ন জাতের মানুষ ভোট দেয় এবং কেন দেয় তার বিবরণ তুলে ধরা হল এই প্রতিবেদনে।

বিজেপির গড় গণেশপুর

গণেশপুরকে ঠাকুর অধ্যুষিত গ্রাম বলা যেতে পারে। উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথও এই ঠাকুর সম্প্রদায়েরই। এই গ্রামে ২২০০ জন ভোটারের বসবাস। তার মধ্যে ৫০ শতাংশ এই ঠাকুর সম্প্রদায়ের। এইখানকার জমি চাষের জন্য খুব উর্বর। নিউজ নাইনের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই গ্রামের ষাটোর্ধ্ব বাসিন্দা ধরমপাল রানা বলছেন, “২০ ফুট গভীরতাতেই জল পাওয়া যায় এইখানে। যেকোনও ফলের নাম বলুন- আম, স্ট্রবেরি, পেয়ারা, যেকোনও সবকিছু এইখানে ফলন হয়।” তিনি আরও বলেন, “আমাদের মধ্যে বেশিরভাগজনই আমরা ছোটো কৃষক। আমাদের আয় সামান্য। এখানো কোনও কর্মসংস্থান নেই। জীবন এখানে অনেক কঠিন। ” তাঁর সঙ্গে থাকা তাঁর বন্ধুরাও তাঁর কথায় সম্মতি জানিয়েছেন। যেটুকু ফসল ফলান তা নিয়েও তাঁরা অনিশ্চিত থাকেন। রাতের অন্ধকারে মোহন্দ নদীর ধারে হাতিরা ঘুরে বেড়ায়। তারা দল বেঁধে ক্ষেতে ঢুকে পড়ে। ওই গ্রামেরি বাসিন্দা ৫৮ বছর বয়সী ধরমবীর রানা বলছেন, “রাতের বেলা কোনও রক্ষী না থাকলে হাতিরা ফসল নষ্ট করে দেয়। যদি ভুল করেও ক্ষেতে ঘুমিয়ে পড়েন হাতিরা পিষে চলে যাবে।” তাঁরা জানিয়েছেন প্রতি রাতে ৪-৫ জন হাতি, নীল গাইয়ের পাল ক্ষেতে ঢোকে এবং ফসল নষ্ট করে দেয়। তিনি বলেন, “জীবন খুব কঠোর। আমাদের সারা রাত জেগে পাহাড়া দিতে হয়।” মোটের উপর এখানে কোনও টাকা নেই, নেই কোনও কর্মসংস্থান এবং সর্বোপরি গণেশপুরের মানুষের জীবনে একদিনের জন্য শান্তিও নেই।

এই পরিস্থিতিতে তারা যোগী সরকারকেই ভোট দেবে। এর পিছনে কারণ কী? রানা বলছেন, “আমরা ঠাকুর। এটা আমাদের দল। যোগী আমাদের মুখ্য়মন্ত্রী।” তাঁদের মধ্যে একজন একটি স্থানীয় সংবাদপত্র মেলে ধরে বলেন, “আগে সংবাদপত্রের প্রতিটি পাতা চুরি, ধর্ষণ, খুনের মতো অপরাধমূলক খবরেই ভরে যেত। এখন এইখানে অন্য খবরও স্থান পায়।” এই কথাটি যে উত্তর প্রদেশে অখিলেশের শাসনকালকে উদ্দেশ্য করেই বলা হয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তাছাড়াও দৈনন্দিন জীবনের কষ্ট ভুলেও তাঁরা শুধুমাত্র জাতের ভিত্তিতে এক হয়ে যাচ্ছেন। এবং দৈনন্দিন জীবনের মানোন্নয়ন না হলেও যোগীকে ভোট দেবেন বলে স্থির করেন তাঁরা। কারণ যোগী তাঁদের সম্প্রদায়ের- ঠাকুর। ধরমবীর রানা বলছেন, “এখন আমরা নিরাপদ অনুভব করি। আমাদের বোন-মেয়েরা এখন চিন্তামুক্ত হয়ে ঘুরে বেড়াতে পারে। আমাদের গবাদি পশু আর চুরি যায় না।”

বিজেপিকে ভোট দেওয়ার আরেকটি কারণও রয়েছে। তার মধ্যে একটি কারণ পেনশন। ধরমপাল রানা বলেছেন, “আমরা প্রতি মাসে অ্যাকাউন্টে ২০০০ টাকা করে পাই। সরকার আমাদের বিনামূল্যে রেশনও দেয়। বিনামূল্যে কোভিড টিকার কথাও ভুলে যাওয়া যায় না। এগুলো যথেষ্ট ভালো।”

সপার গড় মোহন্দ

বিজেপির সম্বন্ধে যে গুণগান শোনা গিয়েছিল গণেশপুর থেকে আর কিছুটা দূরে গেলে তার ঠিক উল্টো সুর শোনা যায়। তার অন্যতম কারণ মোহন্দ মুসলিম অধ্যুষিত এলাকা। কিন্তু এর মধ্য়ে একটি রহস্যও রয়েছে। রহস্য়টি হল এর মধ্যে অনেক মুসলিম আগে রাজপুত ছিলেন। অনেক আগে তাঁদের বংশের লোকেরা ইসলামে ধর্মান্তরিত হয়েছিলেন। যদিও তাঁরা এখনও এই অঞ্চলের হিন্দু রাজপুতদের সঙ্গে সামাজিক-সাংস্কৃতিক যোগাযোগ রেখে চলে। হিন্দু রাজপুত বাড়িতে এখনও দেখা যায়, পাশাপাশি গ্রামের মুসলিম রাজপুত বাড়ি থেকে ভাত (মামাবাড়ি থেকে বিয়ের উপহার) না এলে বউ বিয়ে করে না। কিন্তু কোনও জনপ্রতিনিধি – স্থানীয় বিধায়ককে নির্বাচন করার সময়, তাঁদের রীতিনীতি এবং অভ্যাস সব ভিন্ন। রাও রাঙ্গার্স নামে পরিচিত বেহাতের রাজপুত মুসলিমরা সপা প্রার্থীদের পছন্দ করে।

৪৫ বছরের মোহাম্মদ মুস্তাকিল বলেছেন যে, বিজেপি সরকার হিন্দু ও মুসলিমদের মধ্যে বিভেদ তৈরি করা ছাড়া আর কিছু করেনি। তিনি বলেন, “এখানে কোনও কর্মসংস্থান নেই। একটা জিনিসই এখানে ঊর্ধ্বমুখী, তা হল জিনিসপত্রের দাম।” গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, এখানে সবাই কোনও কাজ না করে অলসভাবে বসে থাকে। স্কুল বন্ধ থাকার কারণে বাচ্চারা এখানে সারাদিন গিল্লি-ডান্ডা খেলে। আর অনলাইন ক্লাসে খরচ চালানোর মতো তাদের বাবা-মায়ের টাকা পয়সা নেই। এই গ্রামের এক বাসিন্দা বলেছেন, “বিজেপি চায় না আমরা এখানে মর্যাদা সহকারে বাঁচি। এরা আমাদেরকে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকে পরিণত করতে চায়। আমরা আমাদের সম্মান ও মর্যাদা রক্ষার জন্য সপাকে ভোট দেব।”

তাঁরা কি রেশন এবং পেনশন পান? ওই বাসিন্দা জানিয়েছেন, “সরকার আমাদের চিনাবাদাম দেয় এবং আশা করে যে আমরা ভুলে যাই যে বিপথগামী গবাদি পশুর দ্বারা আমাদের ফসল নষ্ট হচ্ছে, কর্মসংস্থানের সুযোগ অদৃশ্য হয়ে যাওয়ায় আমাদের শিশুরা অলস বসে আছে। আপনি কি সত্যিই আশা করেন যে হ্যান্ডআউটের মূল্য আমরা দেব?”

মায়াবতীর আশা শ্যোদি নগর

গণেশপুর পঞ্চায়েতের তিন নম্বর গ্রাম হল শ্যোদি নগর। এই গ্রামে তফসিলি জাতিদের, প্রধানত জাটভ এবং বানজারাদের আধিপত্য বেশি। ২৪ বছর বয়সী এক জাটভ সচিন কুমার জানিয়েছেন পূর্ববর্তী দুটি নির্বাচনে তিনি মায়াবতীর বহুজন সমাজ পার্টিকে ভোট দিয়েছেন। এই বছরও তিনি তাই করবেন বলে ভেবেছেন। যদিও প্রাক নির্বাচনী সমীক্ষায় উঠে এসেছে বিএসপি এইবার লড়াইয়ের ময়দানের বাইরেই থাকছে। কেন তিনি বিএসপিকে ভোট দেবেন প্রশ্নে তিনি বলেছেন, “আমাদের হাতে আর কোনও বিকল্প নেই। আমরা অন্য কোনও দলকে ভোট দিলেও জনগণ ভাববে আমরা বিএসপিকেই ভোট দিয়েছি। হামারি গিনতি ঔর কাহি নেহি হোতি (আমাদের অন্য কোনও দলে ভোটার হিসেবে ধরা হয় না।)।” ৬৫ বছরের ঋষিপালও বিএসপিকেই ভোট দেবেন। তবে তিনি কারণ দেখিয়েছেন অন্য। তিনি বলেছেন, “যদি তিনি ১০ টি আসনও জেতেন উনাকে ছাড়া কোনও সরকার গঠন হবে না। বিজেপি এবং সপার ওঁর  সমর্থন লাগবেই। আমরা ওঁর হাত শক্ত করতে চাই।” তিনি আশা দেখছেন হয়ত মায়াবতী আবার উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হবেন।

প্রসঙ্গত, উত্তর প্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনে বেহাত থেকে বিজেপি প্রার্থী নরেশ সাইনি। কংগ্রেস ছেড়ে তিনি বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। তিনি ২০১৭ সালে বিধানসভা নির্বাচনে জয়লাভ করেছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে রয়েছে সপার মুসলিম প্রার্থী উমর আলি। বিএসপির প্রার্থী রইস আলি। বেহাতে প্রায় ৫১ শতাংশ মুসলিম রয়েছে। হিন্দুদের মধ্য়ে তফসিলি জাতি রয়েছে ৩০ শতাংশ এরপরেই রয়েছে রাজপুত এবং সাইনি।

বাংলা টেলিভিশনে প্রথমবার, দেখুন TV9 বাঙালিয়ানা 

বাংলা টেলিভিশনে প্রথমবার, দেখুন TV9 বাঙালিয়ানা