Kedarnarth Temple: দেবভূমির ভোটে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু কেদারনাথ মন্দির, পিছনে লুকিয়ে অনেক কারণ

Kedarnath: স্বাভাবিক কারণেই এই আইন আনার ফলে মন্দিরে পুরোহিতরা অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন। তাদের প্রতিবাদের কারণে সেই সময়ের মুখ্যমন্ত্রী ত্রিবেন্দ্র সিং রাওয়াতকে মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে সরিয়ে তীরথ সিং রাওয়াতকে মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়।

Kedarnarth Temple: দেবভূমির ভোটে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু কেদারনাথ মন্দির, পিছনে লুকিয়ে অনেক কারণ
ছবি: ফাইল চিত্র
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Dec 02, 2021 | 4:36 PM

নয়া দিল্লি: ভারত ভৌগলিকভাবে সম্বৃদ্ধ স্পষ্টতই এই কথা জানিয়েছিলেন উইনস্টন চার্চিল। তিনি বলেছেন, নিজেদের শাসনকালে ব্রিটিশরা ধাপে ধাপে দেশের অনেক উন্নয়ন করে গিয়েছেন। সেখানে আদিগুরু শঙ্করাচার্যেরও উল্লেখ ছিল। তাঁর পরামর্শেই অনেক শতক আগেই চার ধাম যাত্রার প্রচলন ছিল। ভারতের চারদিকে ছড়িযে থাকা চারটি স্থানের নাম বলেছিলেন আদিগুরু। পুরী, বদ্রীনাথ, দ্বারকা এবং রামেশ্বরম এই চারটি স্থানের নাম উল্লেখ করেছিলেন তিনি। এর পরেই উত্তরাখণ্ডে তুলনামূলকভাবে ছোট চার ধামের ধারণা প্রচলন হয়। আধুনিক চার ধাম হিসেবে ‘দেবভূমির’ যমুনোত্রী, গঙ্গোত্রী, কেদারনাথ ও বদ্রীনাথই প্রচলিত।

ভৌগলিক এবং সাংস্কৃতিকভাবে সমন্বিত স্থানগুলিকে তীর্থযাত্রীদের ভ্রমণের জন্য পরামর্শ দিয়েছিলেন আদিগুরু শঙ্করাচার্য। শতকের পর শতক ধরে লক্ষ লক্ষ হিন্দুরা সেই স্থানগুলিতে তীর্থ যাত্রার জন্য গিয়েছেন। এবং সেই কারণেই দেশের বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে থাকা অঞ্চল গুলির মধ্যে এক অদ্ভূত বন্ধন তৈরি হয়েছে। শঙ্করাচার্যের নির্দেশ ছিল. পাহাড়ে কোলে বরফে ঢাকা কেদারনাথ মন্দিরের প্রধান পুরোহিত, দক্ষিণের কর্ণাটকের বীরশৈব সম্প্রদায়েরই হবেন। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১০ হাজার ফুট উচ্চতায় অবস্থিত বদ্রীনাথের প্রধান পুরোহিত ঐতিহ্যগতভাবে কেরালার নাম্বুদিরি সম্প্রদায় থেকেই নির্বাচিত হয়ে এসেছে। এই বিশেষ পুরোহিত নির্বাচনের পিছনে শঙ্করাচার্যের যুক্তি ব্রিটিশ শাসনেও সমানভাবে সম্মান দেওয়া হয়েছিল। সেই কারণেই ১৯৩৯ সালে শ্রীকেদারনাথ ও শ্রীবদ্রীনাথ আইন সেই প্রথাকে আরও জোরদার করেছিল। বহু বছর ধরে চলে আসা এই প্রথা ও আইনকে যখন উত্তরাখণ্ডের বিজেপি সরকার পরিবর্তন করে, তখন অবাক হতেই হয়।

২০১৯ সালে, চারধাম নিয়ে নতুন আইন নিয়ে আসে উত্তরাখণ্ড সরকার। চারধাম ছাড়াও রাজ্যে ছোট বড় মোট ৪৫ টি মন্দির ওই আইন মোতাবেক সরকারের আওতায় নিয়ে আসা হয়। বিগত ১০ বছর বা তার বেশি সময়ে এই তীর্থস্থান গুলিতে ভ্রমণে আসা দর্শকের সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে। আগে দিওয়ালিপর কেদারনাথ মন্দির বন্ধস হয়ে যাওয়ার আগে যখন হাতে গোনা কিছু যাত্রীই ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ পথ বেয়ে উঠে মন্দির দর্শন করত, এখন সেই তীর্থযাত্রীর সংখ্যা ব্যপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এবং সেই যাত্রীদের মধ্যে সব বয়সের প্রতিনিধিদের দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। যাত্রী সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার অর্থ হল আরও বেশি পরিমাণে মন্দিরে অধিষ্ঠিত দেবতার কাছে দান ধ্যান বৃ্দ্ধি পাওয়া। সেই কারণেই আইন তৈরি করে সরকার পরিস্থিতির ওপর নজর রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

আরও পড়ুন Lok Sabha and Rajya Sabha Update: ১২ সাংসদের নিলম্বন ঘিরে উত্তাল সংসদ! ১২ টা পর্যন্ত মুলতুবি হল অধিবেশন

স্বাভাবিক কারণেই এই আইন আনার ফলে মন্দিরে পুরোহিতরা অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন। তাদের প্রতিবাদের কারণে সেই সময়ের মুখ্যমন্ত্রী ত্রিবেন্দ্র সিং রাওয়াতকে মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে সরিয়ে তীরথ সিং রাওয়াতকে মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়। মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়ে তীরথ সিংও পুরোহিতদের কথা বিশেষ কর্ণপাত করেননি। তাই কিছু দিন পর তাঁকে বদলে পুষ্কর সিং ধামিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। কৃষি আইন নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, পুষ্কর সিং ধামির কাছে নির্বাচনের তিন মাস আগে সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া ছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না। তাই তিনি বাধ্য হয়ে এই আইন বাতিল করার কথা ঘোষণা করেছিলেন। একাধিক কর্মসূচি নিয়ে দিওয়ালির পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যখন কেদারনাথ সফরে গিয়েছিলেন, তার আগেই পুরোহিতদের শান্ত করতে কেদারনাথ মন্দিরে ছুটে গিয়েছিলেন ধামি। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ৩০ নভেম্বরের মধ্যেই যাবতীয় সমস্যার নিষ্পত্তি করবেন। তার যেন এই বিষয়টিকে আর না বাড়ান। নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে কংগ্রেস ও আম আদমি পার্টি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে তারা সরকারে এলে বিতর্কিত আইনটি বাতিল করে দেওয়া হবে। তাই প্রবল চাপের মুখে গত ৩০ নভেম্বর ধামি এই আইন প্রত্যাহারের কথা ঘোষণা করেন।

তীর্থযাত্রীরা দেবতার কাছে যা নিবেদন করেন তা গ্রহণ করতেই কী মন্দিরের দায়িত্বে থাকা পুরোহিতরা কি ঐশ্বরিকভাবে নির্ধারিত? এই প্রশ্ন যখন ওঠে তখন হ্যাঁ বলা ছাড়া কোনও উপায় থাকে না। ভক্তদের থেকে পাওয়া লক্ষ লক্ষ টাকা দক্ষিণার ভিত্তিতেই চলে কেদারনাথ মন্দির। মন্দিরের রক্ষণাবেক্ষণ ও হাতে গোণা কয়েকজন কর্মচারী বেতন ছাড়া ওই বিপুল অঙ্কের টাকা কোথায় ব্যবহার করা হয়, তাই নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়েছে। সেই বিষয়ে সরকারে জড়িত হয়ে পড়লে জনগণের কাছে জবাবদীহি করার দায়বদ্ধতা সরকারের থেকেই যায়, কারণ সরকার জনগণের দ্বারা নির্বাচিত। তাই সরকার আইনের মাধ্যমে সেখানে জড়িত হলে অনেক অসাধু ব্যক্তির সমস্যা থাকবে বলা বাহুল্য।

আশ্চর্যদজনকভাবে, উত্তরাখণ্ডের চার তীর্থক্ষেত্রের পুরোহিতরা যখন বিজেপির বিরুদ্ধে ঐতিহ্যবাদী প্রথা কেড়ে নেওয়ার দাবিতে সরব, সেই বিজেপিই একই দাবিতে কেরালাতে সরব। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ চলতি বছরের শুরুতেই জানিয়েছিলেন, মন্দির গুলিতে সরকারের কোনও হস্তক্ষেপ থাকবেনা, পুরোহিত ও ভক্তরা মিলে মন্দির নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। এখন উত্তরাখণ্ড নিয়ে ভোটের হাওয়া কোন দিকে যায় সেদিকেই নজর থাকবে সকলের।

আরও পড়ুন Kerala High Court: অতিমারি কোনও কারণ নয়, কেন জিএসটির আওতায় এল না পেট্রোপণ্য? কেন্দ্রের থেকে ‘উপযুক্ত’ জবাব চাইল হাই কোর্ট