‘গদ্দারদের জমিদারি ছিল’, পূর্ব মেদিনীপুরে তাঁকে ঢুকতে দেওয়া হত না বলে অভিযোগ মমতার
শুক্রবারের পর শনিবারও একই অভিযোগ। হলদিয়া, নন্দীগ্রামে (Nandigram) যেতে গেলে নাকি অধিকারীদের (Adhikari) অনুমতি নিতে হত তাঁকে।
হলদিয়া: নজির গড়ে এবার নন্দীগ্রাম (Nandigram) থেকে ভোটে লড়ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় (Mamata Banerjee)। প্রতিপক্ষ তাঁরই এক সময়ের সহযোদ্ধা শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari)। লড়াই এবার হাই-ভোল্টেজ। বিধানসভা ভোটের গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর তাই পূর্ব মেদিনীপুর জেলা। গত কয়েক বছরে এই জেলায় কত বার গিয়েছেন তিনি, তা নিয়ে যখন যখন বিরোধী শিবিরের হিসেব-নিকেশ চলছে, তখন সেই জেলায় বসে মমতার অভিযোগ তাঁকে আসতে দেওয়া হয়নি। অধিকারী পরিবারের অনুমতি নিয়ে আসতে হত বলে অভিযোগ জানিয়েছেন তিনি।
প্রথমে হলদিয়া ও পরে খেজুরিতে সভা ছিল তৃণমূল নেত্রীর। দুই সভা থেকেই নাম না করে শুভেন্দু অধিকারী তথা অধিকারী পরিবারকে নিশানা করেন তিনি। শুক্রবারের পর শনিবারও তাঁর দাবি এই জেলায় ঢুকতে গেলে অনুমতি নিতে হত তাঁকে। তিনি বলেন, ‘হলদিয়ায় আমাকে আসতে দেওয়া হত না। হলদিয়ায় ঢুকতে গেলে অনুমতি নিতে হত, নন্দীগ্রামে ঢুকতে গেলে অনুমতি নিতে হত।’ শুভেন্দু শিবির বদল করায় তিনি এবার যখন খুশি আসতে পারেন বলেও জানান তিনি। তাঁর কথায়, ‘বেঁচে গিয়েছি আপদ বিদায় হয়েছে, এখন আমি যখন খুশি আসতে পারি।’
খেজুরির সভাতেই একই তত্ত্ব দেন তিনি। শুভেন্দুকে ‘গদ্দার’, ‘মীরজাফর’ বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘খেজুরিতে যেতে চাইলে আমাকে বলা হত, না যেতে হবে না। কাঁথিতে যেতে চাইলেও আমাকে বলা হত, যেতে হবে না। ওখানে গদ্দারদের জমিদারি ছিল।’ তাই অবাধে যাওয়া-আসা করতেই তিনি নন্দীগ্রাম থেকে লড়ছেন বলে উল্লেখ করেন তৃণমূল সুপ্রিমো। তিনি আরও বলেন, ‘সব জেলায় তিনি যান, কেউ তাঁকে বাধা দেন না। শুক্রবারও তিনি বলেছিলেন, ‘মেদিনীপুর জেলার শাসন ছিল একটা নির্দিষ্ট মানুষের হাতে। এখানে আসতে গেলে একজনের অনুমতি লাগত। অন্য কেউ পাত্তা পেত না।’
কাঁথি ও সংলগ্ন এলাকাকে অধিকারী গড় বলে উল্লেখ করা হয় বহু দিন ধরেই। তাই বলে সেখানে খোদ মুখ্যমন্ত্রী প্রবেশের অনুমতি লাগত কেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে রাজনৈতিক মহলে। গেরুয়া শিবিরে যাওয়ার পর শুভেন্দু মমতার বিরুদ্ধে নন্দীগ্রামকে অবহেলা করার অভিযোগ তুলেছেন একাধিকবার। যে নন্দীগ্রাম মমতাকে মসনদে বসিয়েছে, সেখানে কেন মমতা বছরের পর বছর আসেননি তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। এবার মমতার পাল্টা দাবি, আসতেই দেওয়া হতো না তাঁকে। এ ব্যাপারে অধিকারীকে প্রশ্ন করা হলে তিনি কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে চাননি।
বিজেপিকে আক্রমণ করতে গিয়ে নাম না করে শুভেন্দুকে তোলাবাজ তকমাও দেন তিনি। বলেন, যাকে স্নেহ দিয়ে বড় করেছি সেই সব থেকে বড় তোলাবাজ। জেল থেকে বাঁচতে বিজেপিতে গিয়েছে। শুভেন্দু শিবির বদল করার পর বিভিন্ন মহল থেকে জানা যায় যে ২০১৪ থেকেই তাঁর সঙ্গে বিজেপির কথাবার্তা ছিল। সে কথাও এ দিন উল্লেখ করেন মমতা। বলেন, ভাবুন কত বড় বিশ্বাসঘাতক।
উল্লেখ্য কাঁথিতে নরেন্দ্র মোদীর সভায় তৃণমূল সাংসদ শিশির অধিকারীর হাজির থাকার কথা জানিয়েছেন শুভেন্দু নিজেই। শুভেন্দু অধিকারী বিধায়ক-পদ ও তৃণমূলের প্রাথমিক সদস্যপদ থেকে ইস্তফা দিলেও শিশিরবাবু এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে দল ছাড়েননি। তিনি এখনও কাঁথির তৃণমূল সাংসদই রয়েছেন। তবে সম্প্রতি তিনি মন্তব্য করেছেন “কে বলল আমি তৃণমূলে আছি!” তাই গেরুয়া শিবিরে সম্পূর্ণ অধিকারী পরিবারের প্রবেশ এখন সমযের অপেক্ষা বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।