রুটিরুজির ‘সহজ কথা’ বলতে আজ সিঙ্গুরে সৃজন

সিঙ্গুরে সৃজনের বিপরীতে রয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের হেভিওয়েট নেতা বেচারাম মান্না। অন্যদিকে, ‘অভিমানে’ দলত্যাগ করে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন সিঙ্গুরের মাস্টারমশাই জয়ী বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। বিজেপির তরফে এখনও সব কেন্দ্রের প্রার্থী ঘোষিত হয়নি।

রুটিরুজির ‘সহজ কথা’ বলতে আজ সিঙ্গুরে সৃজন
ছবি সূত্র: ফেসবুক
Follow Us:
| Updated on: Mar 13, 2021 | 3:28 PM

হুগলি: আর মাত্র দু’সপ্তাহ। এরপরেই বাংলায় নির্বাচনের (West Bengal Assembly Election 2021) শুরু। ভোট আবহে ইতিমধ্যেই প্রচারে নেমে গিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলি। গত বুধবার, বাম-কংগ্রেস-আইএসএপ সংযুক্ত মোর্চার তরফে বামেরা তাদের প্রার্থী ঘোষণা করেছিল। একুশের বিধানসভা নির্বাচনে (West Bengal Assembly Election 2021) আন্দোলনের অগ্নিভূমি সিঙ্গুরে তরুণ নেতা সৃজন ভট্টাচার্যকে প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত করে সিপিএম। শনিবার, সকাল থেকেই সিঙ্গুরের পথে প্রচারে নেমে পড়েছেন তরুণ বাম নেতা।

এদিন, বেগমপুর স্টেশন এলাকা থেকে শুরু করে বিভিন্ন গ্রামগুলিতে প্রচার করেন সৃজন। তিনি জানান, শিল্পের দাবিতেই এবার সিঙ্গুরে নেমেছে সংযুক্ত মোর্চা। উল্লেখ্য, ২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনে বাম নেতা রবীন দেবের বিপরীতে প্রায় দুহাজার ভোটে এগিয়ে জয়ী হন তৃণমূল প্রার্থী রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য।

শনিবার সিঙ্গুরের (Singur) প্রচারে এসে সৃজন জানান, ‘সহজ কথা’ সহজ ভাবে বলতেই তাঁর সিঙ্গুরে আসা। তরুণ প্রজন্মের জন্য কাজ, রুটিরুজির ব্যবস্থার পাশাপাশি কারখানা ও শিল্প সংস্থানের দাবিও তোলেন তিনি। কৃষিজীবী মানুষের সমস্যা সমাধান করা ও সাধারণের উন্নতিকল্পেই কাজ করতে চান সৃজন।

একদা, ‘ব্যাটেল গ্রাউন্ড’ নামে পরিচিত সিঙ্গুর বরাবরই শাসক ও বিরোধী দলের ‘প্রেস্টিজ ইস্যু’। ২০০৬-এ তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকারের একটি সিদ্ধান্তে আগুন জ্বলেছিল শান্ত সিঙ্গুরে। রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য টাটা সংস্থার ন্যানো গাড়ি প্রকল্পের জন্য (অনুসারী শিল্প) হাজার একর জমি অধিগ্রহণ করেন। সংখ্যায় কম হলেও জমি না দিতে চেয়ে প্রতিবাদে মুখর হন ‘অনিচচ্ছুক কৃষকরা’। কৃষকদের এই আন্দোলনের পাশে এসে দাঁড়ান তৎকালীন বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। আন্দোলনের তীব্রতার মুখে সিঙ্গুর থেকে পাততাড়ি গোটাতে বাধ্য হয় টাটা গোষ্ঠী। ন্যানোর প্রকল্প চলে যায় গুজরাটে সানন্দে। এরপর, পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রামে জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় সাধারণ মানুষ। সিঙ্গুরের জমিতে হল না ন্যানো কারখানা।

রাজনৈাতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্ষমতার শৃঙ্গারোহণের পেছনে সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সাড়ে তিন দশকের নিরবিচ্ছিন্ন বাম শাসনের কোমর ভেঙে দেয় এই জমি আন্দোলন। তবে, সিঙ্গুর নিয়ে রাজনীতি হলেও, সিঙ্গুরের জমি অধিগ্রহণ আদালতের রায়ে ‘বেআইনি’ হিসেবে স্বীকৃত হলেও সে জমিকে আজ অবধি চাষযোগ্য করে তোলা যায়নি। অনেকেই এই বৃহৎ প্রকল্পকে একটি স্বপ্নের অপমৃত্যু হিসেবে দেখেন। ২০০৭-এর পর থেকে নাগাড়ে সিঙ্গুরের সব নির্বাচনে জয়ী হয়েছে তৃণমূল।

আরও পড়ুন: প্রচারে নেই জেলা নেতৃত্ব, ‘বহিরাগত’ কৌশানীর সাফাই, ‘এক পরিবারে পাঁচটা বাসন থাকলে আওয়াজ তো হবেই’

ইতিহাসের এই সব সরণি বেয়ে সিঙ্গুর ফের আরেকটি নির্বাচনের (West Bengal Assembly Election 2021) সম্মুখীন। চারবারের তৃণমূল বিধায়ক এলাকায় মাস্টারমশাই হিসেবে পরিচিত রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যকে এবার টিকিট দেয়নি জোড়াফুল  শিবির (TMC)। ক্ষুব্ধ মাস্টারমশাই তাই সপুত্র নাম লিখিয়েছেন পদ্ম শিবিরে। সিঙ্গুর থেকে এবার তৃণমূলের টিকিটে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করবেন প্রাক্তন মন্ত্রী বেচারাম মান্না। অন্যদিকে, লাল ঝাণ্ডা নিয়ে প্রচারে নেমেছেন, তরুণ তুর্কি সৃজন।

শাসক শিবিরের (TMC) এমন হেভিওয়েট নেতার বিরুদ্ধে লড়তে হবে জেনেও অকুতোভয় সৃজন (Srijan Bhattacharya)। শনিবার তিনি স্পষ্টই বলেন, ‘একদল কাটমানি খাচ্ছে আর দলবদল করছে। অন্যদল দাঙ্গা লাগাচ্ছে। এই অবস্থাই মানুষই বুঝে নেবে তাঁদের কী চাহিদা।’ ফের সিঙ্গুরে লাল ঝাণ্ডা উড়বে, আশাবাদী সৃজন।