‘আগে ভাতিজার সঙ্গে লড়, পরে দিদির সঙ্গে লড়বি’, শাহকে চ্যালেঞ্জ মমতার
অভিষেককে কেন রাজনীতিতে এনেছিলেন, পৈলানে কর্মিসভায় সেই অজানা সত্য ফাঁস করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
দক্ষিণ ২৪ পরগনা: বঙ্গ সফররত অমিত শাহকে বেনজির আক্রমণ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। যে ‘ভাইপো’কে কথায় কথায় আক্রমণ করে শাহ-সহ বিজেপি নেতৃত্ব, এবার তাঁকেই লড়াইয়ের ময়দানে এগিয়ে দিয়ে অমিত শাহর রাজনৈতিক উচ্চতা নিয়ে স্বকীয় ভঙ্গিতে চরম কটাক্ষ করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতা বলেন, শাহরা আগে অভিষেকের সঙ্গে লড়ুক, তারপর না তাঁর সঙ্গে লড়তে আসবেন। অর্থাৎ, শাহ ব্রিগেডের সঙ্গে লড়াই করার জন্য যে অভিষেকই যথেষ্ট, মমতার নিজের লড়ার প্রয়োজন নেই পরোক্ষে সেই বার্তাই দিতে চেয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো, এমনটাই বিশ্লেষণ ওয়াকিবহাল মহলের। বৃহস্পতিবার পৈলানের সভায় মমতার বক্তৃতার মূল দিকগুলি এক নজরে-
বুথ আগলাবেন আপনারাই
অনেক জায়গায় টাকা বিলি হচ্ছে। টাকা দিলে নিয়ে নিন। এবারের লড়াই বাংলাকে রক্ষা করার লড়াই। আমি তো সামনে থেকে লড়ে নেব। কিন্তু ময়দানে নেমে লড়তে হবে আপনাদেরই। বুথ আগলাতে হবে আপনাদেরই।
অভিষেক বিশেষ গুরুত্ব পায় না আমার কাছে
অভিষেককে কেন রাজনীতিতে নামিয়েছিলাম জানেন? আমার ওপর যখন হাজরায় আক্রমণ হয়েছিল, ও তখন ছোট্ট, বছর দুয়েক বয়স। আমার মাথায় ব্যান্ডেজ বাঁধা ছিল। আমার ওপর বর্বরোচিত আক্রমণ হয়েছিল। ও তখন একটা কংগ্রেসের পতাকা নিয়ে বলত, ‘দিদিকে কেন মারলে জবাব দাও?’ তার জন্য ওকে রাজনীতিতে এনেছিলাম। অভিষেক বিশেষ গুরুত্ব পায় না আমার কাছে। অভিষেককে দুর্ঘটনা ঘটিয়ে মেরে ফেলার চেষ্টা হয়নি? আজও একটা চোখে দেখতে পায় না। আমার পরিবার এমন কোনও কাজ করবে না, যাতে বাংলার মানুষের ক্ষতি হবে।
অমিত শাহ তোমার ছেলেকেও রাজনীতিতে নামাও…
অভিষেককে উপ-মুখ্যমন্ত্রীও করিনি, দলের সভাপতিও করিনি। সাংসদ হতেও বারণ করেছিলাম। রাজ্যসভায় পাঠানো তো হাতের মুঠোয় ছিল। কিন্তু অভিষেক নিজে মানুষের দ্বারা নির্বাচিত হয়ে কাজ করতে চেয়েছিল। তোমাদের ছেলেমেয়েরা তো বাইরে চলে গেছে। অমিত শাহ তোমাকে বলছি, তোমার ছেলেকে রাজনীতিতে নামাও।
চ্যালেঞ্জের বিষয়: সরস্বতী পুজোর মন্ত্র
সরস্বতী পুজোর মন্ত্র বলে দেখান শাহ। অমিত শাহ আমাকে কি হিন্দু ধর্ম শেখাবে? আমরা যে কাউকে কান ধরে হিন্দু ধর্ম শেখাতে পারি। আমাদের হিন্দু ধর্ম শেখাতে এসেছে! বলছে, জিতেগা। কলা খাও জিতেগা। অমিত শাহর ছেলেও ছাড় পাবে না। তোমার ছেলে তো আমার ভাইপো।
আগে কৃষক সামলাও, পরে মমতাকে হারাবে
প্রতিদিন বলছে, এনআরসি হবে। আমি বলছি, কিচ্ছু হবে না। এনআরসি করে দেখো না। প্রতিদিন মিথ্যা কথা বলছে। ঘৃণ্য রাজনৈতিক দল বিজেপি। কৃষক সামলানোর ক্ষমতা নেই, মমতাকে হারাবে। আগে দিল্লি সামলাও। গরিব মানুষদের অপমান করছে। বাইরের খাবার এনে গরিবের বাড়িতে বসে খাচ্ছে। বিজেপি স্বৈরাচারী রাজনৈতিক দল।
জাকিরকে খুনের চেষ্টা হয়েছে, রেল দায় এড়াতে পারে না
আমার মনে হয়, ওরা নির্বাচনটা মুর্শিদাবাদ, কলকাতা থেকেই শুরু করতে চাইছে। জাকিরকে খুন করে সরিয়ে দেওয়াই ছিল ওদের টার্গেট। কেন রেল স্টেশনে লাইট ছিল না? জাকির ট্রেনে যাবে, তা সত্ত্বেও কোনও নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়নি। এটা রেল পুলিশেরই কর্তব্য, রাজ্য পুলিশের না। রেল পুলিশ দায় এড়াতে পারে না। বিজেপির একটা চক্রান্ত চলছে। জাকির মামলায় সম্পূর্ণ তদন্ত হওয়া উচিত।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার ওপর ওদের লোভ
দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিধায়ক, জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষরা, বুথ লেভেলের কর্মীরা মনে রাখবেন, দক্ষিণ ২৪ পরগনার ওপর ওদের লোভ আছে। যখন সুন্দরবনে কুমির বেরোয়, রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার বেরোয়, ওদের টনক নড়ে না। বিজেপির এক নেতা, তিনি নামেই নেতা। মানে জগাই মাধাই গদাইয়ের একজন নেতা। নাম করব না। তিনি গঙ্গাসাগরে গিয়ে বলেছিলেন, ‘গঙ্গাসাগর ক্যায় হ্যায়?’ আমি বলি, ‘ক্যায় কর দেগা, ছাই কর দেগা…’।
‘আগে ভাতিজার সঙ্গে লড়ে নিন, পরে দিদির সঙ্গে লড়বেন’
খালি দিদি আর ভাতিজা নিয়ে বলে, আরে আমি বলছি, আগে ভাতিজার সঙ্গে লড়, পরে দিদির সঙ্গে লড়বি। একুশের নির্বাচনে আগে ভাতিজার সঙ্গে লড়ে দেখা, আমি চ্যালেঞ্জ ছুড়ছি।
২৫০র নীচে নামবে না তৃণমূল
আগের নিজের বাড়ির লোক সামলা, পরে সামলা বাংলা। স্বাস্থ্য সাথী কার্ড দিলীপ ঘোষের বাড়ির লোকই করছে। ২৫০-র নীচে নামবে না তৃণমূল। ২০২১ এ ফের মমতা। বহিরাগতরা বাংলা দখল করতে আসছে। টাকা দিয়ে ভোট কেনার চেষ্টা করছে। আমরা রিপোর্ট কার্ড নিয়ে বাংলার মানুষের ঘরে ঘরে যাচ্ছি। মানুষ বুঝতে পারছেন, কত কাজ হয়েছে।