আধাসেনাকে ‘ঘেরাও’ দাওয়াই মমতার, তুঙ্গে বিতর্ক, তীব্র সমালোচনা বিরোধীদের

প্রথম তিন দফা ভোটের আগে নানাভাবে মমতাকে তোপ দাগতে শোনা গিয়েছিল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক অধীনস্থ বাহিনীর বিরুদ্ধে। এ বার একধাপ উপরে উঠে আরও বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন তৃণমূল সুপ্রিমো।

আধাসেনাকে 'ঘেরাও' দাওয়াই মমতার, তুঙ্গে বিতর্ক, তীব্র সমালোচনা বিরোধীদের
অলংকরণ- অভীক দেবনাথ
Follow Us:
| Updated on: Apr 07, 2021 | 6:58 PM

কোচবিহার: বিরোধী নেত্রী থাকার সময় ভোট পরিচালনার জন্য তিনিই কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাবি জানাতেন। একুশের বিধানসভা নির্বাচনে সেই কেন্দ্রীয় আধাসেনা বাহিনীই ‘চক্ষুশূল’ হয়ে উঠেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। প্রথম তিন দফা ভোটের আগে নানাভাবে মমতাকে তোপ দাগতে শোনা গিয়েছিল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক অধীনস্থ বাহিনীর বিরুদ্ধে। এ বার একধাপ উপরে উঠে আরও বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন তৃণমূল সুপ্রিমো। মহিলাদের উদ্দেশে তিনি নিদান দিলেন, সিআরপিএফ জওয়ানদের যেন ‘ঘেরাও’ করে রাখা হয়। তাঁর এই মন্তব্য নিয়ে রাজনৈতিক চাপান-উতোর উঠেছে তুঙ্গে। ‘দেশবিরোধী’ মন্তব্যের দাবি তুলে কমিশনের দ্বারস্থ হয়ে তৃণমূলের স্বীকৃতি বাতিল করার দাবি জানিয়েছে বিজেপি।

সিআরপিএফ-র বিরুদ্ধে প্রথম দফা থেকে সুর চড়িয়েছিলেন মমতা। কখনও কেন্দ্রীয় আধাসেনা বাহিনীর বিরুদ্ধে ভোট দিতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন। কখনও আবার দাবি করেছেন, জওয়ানরা একটি বিশেষ দলের প্রতীকে ভোট দেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে। তৃতীয় দফার ভোটের দিন সকালে টুইট করে সরাসরি এই অভিযোগও তুলেছিলেন নেত্রী। তবে মমতার বুধবারের মন্তব্য কার্যত অতীতের তাঁর সমস্ত অভিযোগকে ছাপিয়ে গিয়েছে।

মমতা এ দিন বলেন, “সিআরপিএফ যদি গণ্ডগোল করে, মেয়েদের বলে দিচ্ছি, একদল ওদের ঘেরাও করে রাখবেন, আরেকদল ভোট দিতে যাবেন। ভোট নষ্ট করবেন না। আপনি যদি শুধু ঘেরাও করে রাখেন তাহলে (ওরা) ভাববে ভালই তো, ভোটটা তো পড়ল না। ওদের এটাই কিন্তু চাল। ঘেরাও ওইভাবেও করতে হবে না। কথা বলবেন মানেই ঘেরাও। দেখে নেবেন পরিস্থিতি অনুযায়ী।” মমতার এই মন্তব্য নিয়ে একদিকে যেমন রাজনৈতিক জলঘোলা শুরু হয়েছে, অন্যদিকে রিপোর্ট তলব করেছে কমিশনও।

আরও পড়ুন: ‘আধাসেনা নিয়ে দেশবিরোধী মন্তব্য করেছেন মমতা, এটা মাওবাদীরাই পারে’ কমিশনে বিজেপি

তৃণমূল নেত্রীর এই মন্তব্যকে কেন্দ্র করে কার্যত তুলকালাম বেঁধে গিয়েছে। বিজেপি সরাসরি এই মন্তব্য ‘দেশবিরোধী’ বলে আখ্যা দিয়ে কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছে। কমিশন যাতে স্বতঃপ্রণোদিতভাবে পদক্ষেপ করে সেই আবেদন জানানো হয়েছে বিজেপির পক্ষ থেকে। জয়প্রকাশ মজুমদার বলেন, “কোনও রাজনৈতিক দল কোনও সামরিক বাহিনী বা আধা সামরিক বাহিনী নিয়ে বিরোধিতা করে, মন্তব্য করে, তাহলে তা সংবিধান বিরোধী। রাষ্ট্রবিরোধী কাজ বলে মনে করি। এই মন্তব্যের কি রাজনৈতিক স্বীকৃতি রয়েছে, সেই প্রশ্নই কমিশনের কাছে রাখছি।” অন্যদিকে বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, “উনি বড্ড বেশি আবোল-তাবোল কথা বলছেন। এতে প্ররোচনা দেওয়া হয়। এগুলো রাজনীতির ভাষা নয়। বিপজ্জনক ভাষা।”

আরও পড়ুন: ‘হতাশায় ভুগছেন মমতা’, প্রথম তিন দফার ভোটে ক’টি আসন পদ্মে? জানালেন শাহ

যদিও এই পালটা তৃণমূলের তরফে দাবি করা হয়েছে, মমতা আধাসেনাকে নিয়ে তুচ্ছ রাজনীতি করেন না। তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ সুখেন্দু শেখর রায় বলেন, “অমিত শাহ ছত্তিসগঢ়ের ঘটনায় হাসপাতালে গিয়েছিলেন। তিনি সেখানে গিয়ে হাসিমুখে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে আসেন। যেন আনন্দদায়ক বলে মনে হচ্ছে। দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কীভাবে এত অমানবিক এত অসংবেদনশীল হতে পারেন! মানুষের প্রাণ আগে না কি ভোট আগে। আমরা অবাক হইনি, কারণ বিজেপির এই ধরনের চেহারা আগেই দেখেছি। মমতা এই ধরনের তুচ্ছ রাজনীতি করেন না।”

আরও পড়ুন: Exclusive: ‘সিঙ্গুরে শিল্প হবে’, রবীন্দ্রনাথকে পাশে নিয়ে বললেন অমিত শাহ