প্রার্থী তালিকায় নাম না দেখেই ‘বেসুরো’, জেলায় জেলায় বাড়ছে বিক্ষুব্ধদের ভিড়

টিকিট না পেয়ে অসন্তোষ চেপে রাখছেন না তৃণমূলের বিদায়ী বিধায়ক থেকে পুরোন নেতা, ক্রমেই বাড়ছে নামের তালিকা

প্রার্থী তালিকায় নাম না দেখেই 'বেসুরো', জেলায় জেলায় বাড়ছে বিক্ষুব্ধদের ভিড়
তৃণমূলের প্রার্থী বদল।
Follow Us:
| Updated on: Mar 06, 2021 | 12:11 AM

পশ্চিমবঙ্গ: শুক্রবার তৃণমূলের প্রার্থী তালিকা (TMC Candidate List) প্রকাশের পর একের পর এক বিদায়ী বিধায়কের অভিমান ও অভিযোগের তালিকা অব্যাহত। কেউ ভেঙে পড়লেন কান্নায় তো কারোর ফেসবুক পোস্টে পাওয়া গেল বিলাপের সুর। মমতা-ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত সাতগাছিয়ার বিদায়ী বিধায়ক সোনালী গুহ (Sonali Guha) বলছেন, বিশ্বাসই করতে পারছেন না যে এবার তিনি প্রার্থী নন। বসিরহাটের বিদায়ী বিধায়ক দীপেন্দু বিশ্বাস (Dipendu Biswas)-এর প্রশ্ন, কেন তাঁকে সাইডলাইনে বসিয়ে দিলেন দিদি? এদিকে ভাঙড়ের আরাবুলের (Arabul Islam)অনুগামীরা শুরু করেছেন বিক্ষোক্ষ প্রদর্শন। শুক্রবার বেলা যত গড়াল এই বিক্ষুব্ধ ও অভিমানীদের তালিকা ততই লম্বা হল।

জটু লাহিড়ি: ৮০ বছরের ঊর্ধ্বে যাঁদের বয়স, এবারের নির্বাচনে তাঁদের প্রার্থী করেনি দল। এই কারণে হাওড়া শিবপুর কেন্দ্রের বর্তমান বিধায়ক জটু লাহিড়ির নাম তৃণমূলের প্রার্থী তালিকা থেকে বাদ পড়েছে। সেই জায়গায় টিকিট পেয়েছেন প্রাক্তন জাতীয় ক্রিকেটার মনোজ তিওয়ারি। কিন্তু এই ঘোষণার পরপরই হাওড়া শিবপুর বিধানসভা এলাকার বিভিন্ন জায়গায় তৃণমূল নেতা তথা হাওড়া পুরসভার প্রাক্তন মেয়র পারিষদ বিভাস হাজরার সমর্থনে পোস্টার চোখে পড়েছে। ওই পোস্টারে ওয়ার্ডের নাগরিকবৃন্দের থেকে লেখা হয়েছে, শিবপুর কেন্দ্রে কাজের মানুষ বিভাস হাজরাকে চাই। ইতিমধ্যেই তৃণমূলের দলীয় প্রার্থী ঘোষণার পর বিভাস হাজরার সমর্থনে এই পোস্টারে রাজনৈতিক মহলে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে কিছুদিন আগে নিজেই নিজেকে প্রার্থী ঘোষণা করে দেওয়া জটুবাবুর প্রতিক্রিয়া মেলেনি।

সুপ্রকাশ গিরি: পূর্ব মেদিনীপুর অধিকারী পরিবারের রাজনৈতিক অবস্থান যখন প্রশ্নের মুখে তখন তাঁরই বিরোধী গোষ্ঠী বলে সুবিদিত রামনগরের বিধায়ক অখিল গিরি ও তাঁর পুত্র সুপ্রকাশ গিরির ওজন বেড়ে যায় দলে। শোনা গিয়েছিল কাঁথির কোনও আসন থেকে অখিল-পুত্রের টিকিট পাওয়ার সম্ভাবনার কথা। কিন্তু শুক্রবার প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পর দেখা গেল তা হয়নি। যা নিয়ে ক্ষোভ চেপে রাখলেন না সুপ্রকাশ। ফেসবুক পোস্টে লিখলেন, পয়সা না থাকলে রাজনীতি করা যায় না। পারফরমেন্সের কোনও মূল্য নেই। যদিও এই পোস্টটি পরে ডিলিটও করে দেন তিনি।

দীপেন্দু বিশ্বাস: তৃণমূলের প্রার্থী তালিকায় এবার তারকার মেলা। কিন্তু সেখানে জায়গা হল না বসিরহাট দক্ষিণ কেন্দ্রের বিধায়ক তথা তারকা ফুটবলার দীপেন্দু বিশ্বাসের। যা নিয়ে প্রাক্তন ফুটবলার তথা বিদায়ী বিধায়কের ক্ষোভ, তাঁকে সাইডলাইন করে দিলেন দিদি। ফেসবুক পোস্টে তিনি লেখেন, “দীর্ঘ সাড়ে ছয় বছরের রাজনৈতিক লড়াইয়ে একবার বাদে প্রতিবার ভোটের লড়াইয়ে দলকে জিতিয়েছি। মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি সর্বক্ষণ। আমার ব্যবহারে কেউ দুঃখ পেলে ক্ষমা করে দেবেন।”

আব্বাস উদ্দিন খান: উলুবেরিয়া মিউনিসিপালিটির ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তথা উলুবেড়িয়া পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান আব্বাস উদ্দিন খান এবার টিকিট পাওয়ার আশা করেছিলেন। কিন্তু উলুবেরিয়া পূর্ব কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে প্রাক্তন ফুটবলার বিদেশ বসুর নাম ঘোষণার পর তাঁকে বহিরাগত তকমা লাগিয়ে পথ অবরোধ করেন আব্বাস সমর্থকরা। রাস্তা অবরোধ করে টায়ার পোড়ান হয়।

কৃষ্ণ দাস: জলপাইগুড়ি জেলার রাজগঞ্জ আসনে এই নিয়ে টানা ছ’বার তৃণমূলের টিকিট পেলেন খগেশ্বর রায়। প্রথম দুবার হারার পরেও ২০০৯ সালের উপ-নির্বাচনের সময় থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত টানা ৩ বার নির্বাচিত হয়েছে। এবারেও তিনি টিকিট পেয়েছেন। তিনিই উত্তরবঙ্গের প্রথম তৃণমূল বিধায়ক। অন্যদিকে জলপাইগুড়ি জেলার এসসি, এসটি ওবিসি সেলের চেয়ারম্যান কৃষ্ণ দাস রাজগঞ্জ বিধানসভা আসনে তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে অন্যতম দাবিদার ছিলেন। তা না হওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েন তিনি। এরপর তাঁর বাড়ির সামনে ভিড় করা কয়েক হাজার অনুগামীর সামনে এসে কৃষ্ণবাবুর মাইকে ঘোষণা করেন যে তিনি নির্দল প্রার্থী হিসেবে রাজগঞ্জ বিধানসভা আসনে লড়বেন।

অমিয়কান্তি ভট্টাচার্য: টিকিট না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন পূর্ব মেদিনীপুরের চণ্ডীপুরের প্রাক্তন বিধায়ক অমিয়কান্তি ভট্টাচার্য। ওই কেন্দ্রে অভিনেতা সোহম চক্রবর্তীকে প্রার্থী করার পর তাঁর ঘোষণা, দলে আমি ছিলাম আছি ও থাকব। কিন্তু মানুষ ভোট দেবে কিনা আমি বলতে পারব না।

অশোক রুদ্র: আসানসোলের নেতা অশোক রুদ্রও টিকিট না পেয়ে ফেসবুকে লিখলেন, “বছরের পর বছর রাজ্যজুড়ে সাধ্যমতো কাজ করার চেষ্টা করি। তাই হয়তো অযোগ্য। ”