‘আমার কাছেও উঁচুমহল থেকে প্রস্তাব এসেছে’, রাজনীতিতে যোগ দিচ্ছেন সৌরভ ?
এ দিন সকালে সৌরভ তাঁর ফেসবুকে একটি পোস্টে লেখেন, " রাজনীতি বা সমাজে আপনার পছন্দের মানুষ কোনজন? একজন শিল্পী বা খেলোয়াড় নাকি রংবাজ মস্তান?" তাঁর পর থেকেই শুরু নানা জল্পনা। স্বভাবতই প্রশ্ন ওঠে, সাম্প্রতিককালে টলিপাড়ার দল বদলের খেলায় কি তবে পরোক্ষে অভিনেতাদের দিকে কটাক্ষ ছুড়লেন সৌরভ? নাকি শিল্পীদের বিপরীত প্রান্তে দাঁড় করানো আর এক প্রতিপক্ষ 'রংবাজ মস্তান'দের দিকেই তাঁর এই সোশ্যাল পোস্ট? যদি তাই হয় সৌরভের চোখে এই 'রংবাজ মস্তান' কারা?
এ দিন সকালে সৌরভ তাঁর ফেসবুকে একটি পোস্টে লেখেন, ” রাজনীতি বা সমাজে আপনার পছন্দের মানুষ কোনজন? একজন শিল্পী বা খেলোয়াড় নাকি রংবাজ মস্তান?” তাঁর পর থেকেই শুরু নানা জল্পনা। স্বভাবতই প্রশ্ন ওঠে, সাম্প্রতিককালে টলিপাড়ার দল বদলের খেলায় কি তবে পরোক্ষে অভিনেতাদের দিকে কটাক্ষ ছুড়লেন সৌরভ? নাকি শিল্পীদের বিপরীত প্রান্তে দাঁড় করানো আর এক প্রতিপক্ষ ‘রংবাজ মস্তান‘দের দিকেই তাঁর এই সোশ্যাল পোস্ট? যদি তাই হয় সৌরভের চোখে এই ‘রংবাজ মস্তান‘ কারা?
TV9 বাংলা যোগাযোগ করেছিল সৌরভের সঙ্গে। তাঁর কথায়, “একটা বিষয় প্রথমে বলা দরকার, কেন অভিনেতা/অভিনেত্রীদের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তাঁদের দলে টানছে? উত্তর হল, তাঁরা সেই অঞ্চলের বা সেই জায়গার পরিচিত মুখ। আজকে যদি তাঁরা জনসভা করেন তবে খুব সঙ্গত কারণেই এলাকার মানুষ এসে ভিড় জমাবেন। হ্যাঁ, আমার কাছেও খুব উঁচুমহল থেকে প্রস্তাব এসেছে। কিন্তু যেহেতু একটি রাজনৈতিক পরিবারে আমি বড় হয়েছি, তাই চাইলেই হঠাৎ করে একটা দলে যোগ দিয়ে মঞ্চে উঠে পতাকা ধরলাম এবং সেই দলের সমর্থক হয়ে গেলাম…দলগত ভাবে হয়তো সেই সমর্থন আমার পক্ষে সম্ভব নয়।”
অর্থাৎ রাজনীতিতে ‘না‘ সৌরভের? সৌরভের উত্তর, “আমি ছোটবেলা থেকেই রাজনৈতিক মনস্ক। আগেই বললাম দলগত ভাবে যে রাজনীতি করতে হবে এমনটা আমি মনে করি না। আমার বাবাকেও কিন্তু কোনও দলের সঙ্গে গিয়ে ভোটে জিততে হয়নি।” প্রসঙ্গত সৌরভের বাবা খড়দহ পুরসভার অন্যতম প্রবীণ কাউন্সিলার। বিগত প্রায় ২০ বছর ধরে তিনি নির্দল প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়ে জয়ী হয়েছেন।
সৌরভের করা প্রশ্নই যদি তাঁকে করা হয়, শিল্পী খেলোয়াড় নাকি ‘রংবাজ মস্তান‘– রাজনীতির মঞ্চে তাঁর পছন্দ কে? তাঁর উত্তর, “একজন শিল্পী যিনি নিজের চেষ্টায় সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন সেই মানুষটিকে আমার জননেতা হিসেবে বেশি কাম্য নাকি একজন মস্তান যিনি হয়তো দেখনদারির জন্য অনেক কিছু করেছেন, কিন্তু তাঁর মূল পেশা মস্তানি…সেটা করেই সে ক্ষমতার অলিন্দে থাকতে চেয়েছে, সে বেশি প্রয়োজনীয়?” তাঁর আরও সংযোজন, “রাজনীতি কি খারাপ নাকি? পরিবারেও রাজনীতি রয়েছে। কিন্তু বছরের পর বছর রাজনীতি কথাটাই বিভিন্ন কারণে গালাগালিতে পরিণত হয়েছে। মানুষ ধরেই নিচ্ছে ওটা তো গুন্ডা মস্তানদের জায়গা। আর সেই জায়গা থেকেই যখন কোনও শিল্পী রাজনীতিতে যোগ দিচ্ছেন মানুষ ধরে নিচ্ছে সে সমাজের নিকৃষ্টতম জীব হয়ে যাচ্ছে।”
এই গুন্ডা মস্তান কারা? রাজনীতিতে তাঁদের ভূমিকাই বা কী? সৌরভের কথায়, “বর্তমানে যাঁদের দিয়ে কোনও দল পরিচালনা করা হয়, সবার কথা বলছি না, তবে বেশিরভাগের ‘ফেস‘ এতটাই ক্রিমিনাল ব্যাকগ্রাউন্ডের এবং তাঁদের সঙ্গী সাথীদের মধ্যেও সমাজবিরোধী কাজকর্ম এত বেশি, সে কারণে তাঁদের ভোটে দাঁড় করালে তাঁদের নিজেদের দলই তাঁদের জেতাবে না। মানুষ তো ছেড়েই দিন। আর সে কারণেই শিল্পী, খেলোয়াড় বা অন্য জগতের মানুষের সক্রিয় রাজনীতিতে যোগদানের প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে। এখন রাজনীতি এমন হয়েছে সেই সব ‘মস্তান‘দের ৩০টি ছেলে থাকবে। যারা সকাল থেকে বসে মদ্যপান করবে। ডাকলে ৩০টি ছেলেই এসে দাঁড়াবে। প্রয়োজনে মস্তানি করবে। তাঁদের তো অন্য অনুভূতি নেই।”
কী অনুভূতি? “সমাজকে ভাল রাখার। রাজনৈতিক পড়াশোনাও নেই। শুধু গরম গরম ভাষণ দেওয়া মানেই তো রাজনীতি নয়। আমার মতে রাজনীতি করতে গেলে এমন লোকেরই দরকার যারা রাজনীতিকে নিয়ে বড় হয়েছে, রাজনীতির খুঁটিনাটিতে অবাধ বিচরণ রয়েছে। পারিপার্শ্বিক বিষয় সম্পর্কে যারা ওয়াকিবহাল, সর্বোপরি রাজনৈতিক পড়াশোনা রয়েছে“, বক্তব্য পর্দার রামকৃষ্ণের।
কিন্তু বর্তমানে টলিপাড়ার রঙ বদলের রাজনীতিতে প্রত্যেক কলাকুশলীরই কি রাজনৈতিক পড়াশোনা রয়েছে অবাধ? যে রাজনৈতিক সচেতনতার কথা সৌরভ বললেন, যে কূটনৈতিক বুদ্ধি, সর্বোপরি প্রশাসনিক দক্ষতা আয়ত্তে তাঁদের? “একটা কথাই বলতে চাই রাজনীতি শুধু ফেসবুক ভাষণে, আর মাঠে ময়দানের গরম গরম বক্তৃতার মধ্যে সীমাবদ্ধ করে রাখার জন্য নয়। রাজনীতিটা পঞ্চায়েতে রয়েছে, বিধানসভায় রয়েছে…সমাজের বিভিন্ন জায়গায় রয়েছে। সেই বিষয়গুলো অতি অবশ্যই আগে ভালভাবে জানা দরকার। শুধু তেলের দাম বাড়ল কেন, গ্যাসের দাম বাড়ল কেন তা নিয়ে প্রতিবাদের পাশাপাশি তা কীভাবে সমাধান করা যায় সে বিষয়েও কিন্তু দৃষ্টিপাত করা উচিত। নেতাদেরও, সাধারণ মানুষেরও, “তাঁর সাফ বক্তব্য।
নিজে যদি কখনও দলগত রাজনীতিতে সক্রিয় যোগদানের সিদ্ধান্ত নেন সে ক্ষেত্রে তার প্রস্তুতি কেমন হবে? সৌরভের উত্তর গ্রাসরুট থেকেই কাজ শুরু করবেন তিনি। বাড়াবেন রাজনৈতিক জ্ঞানও। অদূর ভবিষ্যতে কি সেই সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে? “ওই যে শুরুতেই বললাম, এই মুহূর্তে দলগত রাজনীতিতে না থেকে নিজের মতো করে কাজ করছি। করবও। যদি ভবিষ্যতে মনে হয় একা একা বা অল্প কয়েকজনকে নিয়ে সেই সব কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না, বা দেখা যায় যে কোনও একটি দলের সঙ্গে আমার মতাদর্শগত খানিক মিল হল, সে ক্ষেত্রে ভাবা যেতে পারে“, বললেন অভিনেতা সৌরভ সাহা।