Arpita: গান, নাচ, অভিনয়ে অনবদ্য অর্পিতার ‘মাই নেম ইজ জান’
Bengali theatre: জয় হল অর্পিতার। জয় হল বাংলা নাটকের। করোনা আতঙ্কেও ভাল কাজ দেখতে থিয়েটারে যাচ্ছেন দর্শক। অর্পিতার কাছে ভবিষ্যতে আরও এমন পারফরম্যান্সের আবদার তৈরি হল দর্শকের।
বৃষ্টিমুখর কলকাতার সপ্তাহান্ত। সেই বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে গুটিগুটি ছাতার সারি সময়ের কিছুটা আগেই গত ১৮ এবং ১৯ সেপ্টেম্বর পৌঁছে গিয়েছে জিডি বিড়লা সভাঘরের বাইরে। করোনাবিধি মেনে ধীরে-ধীরে প্রবেশ অডিটোরিয়ামে। অনেক দিন পরে বাংলা থিয়েটারের দর্শক টানটান বসে থাকলেন প্রায় দু’ঘণ্টা—অর্পিতার গান, নাচ এবং অভিনয়, এই তিন শৈলির অনবদ্য মিলনের লাইভ পারফরম্যান্সে বিভোর হয়ে। সৌজন্যে ‘মাই নেম ইজ জান’।
গওহর জান। বাংলা মঞ্চ ইতিহাসের এক বর্ণময় অধ্যায়। এক রঙিন চরিত্রের নাম। সেই গওহরের জীবন এ বার মঞ্চে। প্রথম ভারতীয় সঙ্গীতশিল্পী তিনি। যাঁর গান গ্রামোফোন কোম্পানি রেকর্ড করে। শুধু গান নয়। অসম্ভব ভাল নাচতেন তিনি। গওহরের অভিজাত সৌন্দর্যে সে সময় মুগ্ধ হননি, এমন শিল্পের গুণগ্রাহী পাওয়া দুষ্কর। নাচে, গানে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের সমাজপতিদের আদর, কুর্নিশ আদায় করে নিয়েছিলেন গওহর। আবার একই সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিজীবনে ছিল না-পাওয়া। এই জীবনকেই মঞ্চে তুলে ধরলেন অর্পিতা। পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন থিয়েটার পরিচালক অবন্তী চক্রবর্তী।
দর্শকাসনে দু’দিন ছিল সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশিষ্ট অতিথিদের ভিড়। সকলেই মুগ্ধ অর্পিতার পারফরম্যান্সে। শুধু অভিনয় নয়, একই সঙ্গে নাচ এবং গান। একক পারফরম্যান্সে অনবদ্য অর্পিতা। একই সঙ্গে গান, নাচ এবং অভিনয় এই তিন শৈলি দর্শকের সামনে তুলে ধরলেন তিনি। তাঁর এবং গোটা টিমের গত দেড় বছরের দীর্ঘ পরিশ্রম সার্থক। TV9 বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অর্পিতা এর আগে বলেছিলেন, “আমি যে-যে পারফর্মিং আর্টগুলো শিখেছি, জানি, সেগুলো একসঙ্গে দর্শকের সামনে তুলে ধরার সুযোগ আজ পর্যন্ত কখনও পাইনি। গান, নাচ এবং অভিনয়। এই তিনটে শৈলি—যেগুলো বহু বছর ধরে শিখেছি, জানি—একসঙ্গে দেখানোর সুযোগ আগে কখনও আসেনি। আমার এটা দুর্লভ সুযোগ মনে হয়েছিল যেখানে এই তিনটে একসঙ্গে দর্শককে দেখাতে পারব। সে কারণেই সঙ্গে সঙ্গে আমি ‘হ্যাঁ’ বলি।”
অর্পিতার পারফরম্যান্স দেখার পর TV9 নিউজ নেটওয়ার্কের সিইও বরুণ দাস বলেন, “আমার মনে হয় অর্পিতা স্টেজে যা করেছে, তা কল্পনাতীত। একজন অভিনেত্রী মঞ্চে এক ঘণ্টা ৪৫ মিনিট ধরে নাচ, গান পরিবেশন করলেন… একটা গান নয়, আট ন’টা গান। একটা ভাষা নয়, একটা ঘরানা নয়, খেয়াল, কীর্তন, রবীন্দ্রসঙ্গীত, ক্লাসিক্যাল, মারাঠি, পাঞ্জাবি…। একটা এক্সট্রিম ইমোশন থেকে আর একটা এক্সট্রিম ইমোশনে যাওয়া, সত্যিই কল্পনাতীত।” ‘মাই নেম ইজ জান’-এর ক্রিয়েটিভ প্রোডিউসারের দায়িত্ব সামলেছেন বরুণ দাস।
অভিনেতা, অভিনেত্রীদের দিয়ে অভিনয় করিয়ে নেওয়া যাঁর কাজ অর্থাৎ পরিচালক গৌতম ঘোষ ছিলেন দর্শকাসনে। তাঁর কথায়, “অর্পিতা অসাধারণ একটা কাজ করেছে। অত্যন্ত কঠিন কাজ। এ ভাবে গান গাওয়া, নৃত্য এবং অভিনয় অত্যন্ত কঠিন কাজ।” সঙ্গীতশিল্পী অজয় চক্রবর্তীও মুগ্ধ। তাঁর কথায়, “একলা একলা এতটা অভিনয়, গান সামলে নিয়ে, খুব পরিশ্রম করেছে। পুরো টিমই খুব সুন্দর। আমার মনে হয় এটা আরও বড় জায়গায় পৌঁছবে।”
গওহরের টুকরো গল্প মঞ্চে অভিনয় দিয়ে সাজিয়ে নিয়েছিলেন অর্পিতা। তাঁর এই গওহর ‘হয়ে ওঠা’র এই জার্নিটা চলছে দেড় বছর ধরে। TV9 বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তাঁর নিজেরই কথায়, “যখন আমার কাছে প্রথম অবন্তী প্রোপোজ় করে ওর ড্রিম প্রজেক্ট আছে, সেটা নিয়ে কাজ করতে চায়, তখন আমি জানলাম। নামটা ফ্যামিলিয়ার ছিল। গওহর জানের জীবন, তাঁর সম্পর্কে তেমন ধারণাও আমার ছিল না। তখন থেকে শুরু করে যা-যা প্রসেস চলল, দেড় বছর ধরে রিসার্চ, স্ক্রিপ্ট, প্র্যাকটিস, রেওয়াজ, কম্পোজ়িশন সব মিলিয়ে এখন তো মঞ্চস্থ হওয়ার দিন এগিয়েই এসেছে। এই দেড় বছরের জার্নিতেই আমি গওহর জানকে চিনলাম।”
গত শনিবার দর্শকাসনে উপস্থিত ছিলেন সস্ত্রীক রাজ্যপাল জগদীশ ধনখড়। “দেশে এবং দেশের বাইরে অনেক অনুষ্ঠান দেখেছি। এটা শীর্ষে থাকবে। অসাধারণ। প্রত্যেকে প্রতিটি মুহূর্ত এনজয় করবেন”, বললেন তিনি। বর্ষীয়ান তৃণমূল সাংসদ তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সৌগত রায় শেয়ার করলেন, “একা একটা পুরো নাটক ক্যারি করা এবং তার সঙ্গে এত ভাল গান গাওয়া, আমি অনেকদিন পরে কোনও শিল্পীকে পারফর্ম করতে দেখলাম।” শুধু পরিচিত অতিথিরা নন, সাধারণ দর্শকও আপ্লুত এই পারফরম্যান্সে।
অর্থাৎ জয় হল অর্পিতার। জয় হল বাংলা নাটকের। করোনা আতঙ্কেও ভাল কাজ দেখতে থিয়েটারে যাচ্ছেন দর্শক। অর্পিতার কাছে ভবিষ্যতে আরও এমন পারফরম্যান্সের আবদার তৈরি হল দর্শকের। আক্ষরিক অর্থেই এক অসাধ্য সাধন করে দেখালেন অর্পিতা।
আরও পড়ুন, Udit Narayan Kumar Sanu: শানুর জীবনে বান্ধবীদের আনাগোন নিয়ে গোপন তথ্য দিলেন উদিত?