Bhuvan Badyakar: ‘বাদামকাকু’ ভুবন বাদ্যকার এবার যাত্রার মঞ্চে, আদৌ কতটা আত্মবিশ্বাসী যাত্রাপাড়া?

Bhuvan Badyakar: গ্রামে যাত্রা দেখেছেন ঠিকই। কিন্তু কোনওদিনও যাত্রায় অভিনয় করেননি। নতুন জগতের জন্য নিজেকে পুরোপুরি তৈরি করছেন ভুবন বাদ্যকর।

Bhuvan Badyakar: ‘বাদামকাকু’ ভুবন বাদ্যকার এবার যাত্রার মঞ্চে, আদৌ কতটা আত্মবিশ্বাসী যাত্রাপাড়া?
ভুবন বাদ্যকর। (গ্র্যাফিক্স: অভিজিৎ বিশ্বাস।)
Follow Us:
| Updated on: Jun 28, 2022 | 6:59 PM

স্নেহা সেনগুপ্ত

বীরভূমের বাসিন্দা। শ্রীকৃষ্ণের ভক্ত। গলায় কণ্ঠি। মাথায় বৈষ্ণব কায়দায় চন্দন টিকা আঁকা। আর একটা গান: ‘কাঁচা বাদাম’। যে গান গেয়ে ভুবনভরা খ্যাতি হয়েছে ভুবন বাদ্যকারের। তিনি মাঝবয়সি ‘ইন্টারনেট সেনসেশন’। একদিন কাঁচা বাদাম বেচতে-বেচতে গান গাইছিলেন ভুবন। জনৈক ব্যক্তি এসে সেই সময় একটি ভিডিয়ো রেকর্ড করে নেট মাধ্যমে পোস্ট করে দেন। মুহূর্তের মধ্যে ভাইরাল হয়ে যায় সেই ভিডিয়ো। সেই সঙ্গে ভাইরাল হয়ে যান গানের নির্মাতা ভুবনও। গানের তালে নাচও ভাইরাল হয়। গোটা পৃথিবী নেচেছে ভুবনের গাওয়া গানের সঙ্গে। কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী, আমেরিকা থেকে অস্ট্রেলিয়া… গান ভাইরাল হয়েছে। গানের সঙ্গে গায়কও। ‘দিন আনি দিন খাই’ ভুবন বাদ্যকারের জীবন হঠাৎই পাল্টে গিয়েছে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র খাদ্য কাঁচা বাদামের জন্য। সেলিব্রিটির তকমা পেয়ে গিয়েছেন মানুষটি। গানটি রাতারাতি বিখ্যাত করে দিয়েছে ভুবন বাদ্যকারকে। সুপারস্টার জিৎ সঞ্চালিত শো ‘ইস্মার্ট জোড়ি’তে গিয়েছিলেন ভুবন। তাঁকে ঘিরে থাকে মিডিয়া। পাকা বাড়ি তৈরি করেছেন। মনের মতো সাজিয়েছেন বাসভবনটি। ঈশ্বরে বিশ্বাসী মানুষটা বলেন ‘‘সবই ঈশ্বরের বিশ্বাসে ও আপনাদের কৃপায় হয়েছে…’’। তাঁকে নিয়ে ট্রোলিং কম হয়নি। রাতারাতি ‘ফেমাস’ হয়ে যাওয়া ভুবনের অনেক শত্রু।

এবার ভুবনবাবুকে দেখা যাবে যাত্রার মঞ্চেও। ১ জুলাই রথযাত্রা। এ সময়টা যাত্রা জগতের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অনেক নতুন কাজ হাতে আসে। যাত্রার পোস্টার বের হয়। রথের আগেই যাত্রায় যুক্ত হওয়ার অফার পেয়েছেন ভুবন। যাত্রাপালার নাম ‘খোকাবাবুর খোলাঘর’। ‘শ্রী দুর্গা অপেরা’র যাত্রাপালা। জমিয়ে রিহার্সাল করছেন তিনি। গ্রামে যাত্রা দেখেছেন ঠিকই। কিন্তু কোনওদিনও যাত্রায় অভিনয় করেননি। নতুন জগতের জন্য নিজেকে পুরোপুরি তৈরি করছেন ভুবন বাদ্যকর।

TV9 বাংলাকে ভুবন বাদ্যকর বলেছেন, ‘‘যাত্রা পালায় আমি পিতাজির (পড়ুন বাবা) চরিত্রে অভিনয় করছি।’’ এরপর অত্যন্ত সরল ভঙ্গিতে ভুবন প্রতিবেদককে জিজ্ঞেস করেন, ‘‘যাত্রায় অভিনয় করতে কি কোনও বাধা আছে?’’ বলেন, ‘‘আমি কোনওদিনও কোনও যাত্রাপালায় অভিনয় করিনি। ওঁদের ভাল লাগছে আমার অভিনয়। আমি মনে করি, মানুষ হয়ে জন্মেছি যখন, আমাকে সব কিছু শিখতে হবে। মানবজন্মের উদ্দেশ্যই হল সব কর্ম করো। কোনও কাজকেই ছোট কিংবা বড় ভাবি না। আপনাদের, বাবা-মায়ের ও ঈশ্বরের আশীর্বাদ থাকলে সবকিছুই আমি করতে পারব।’’

যাত্রার লোকেরা কী ভুবন বাদ্য়করকে সহযোগিতা করছেন? তিনি কেমন ব্যবহার পাচ্ছেন যাত্রাপাড়ায়? উত্তরে ভুবন বলেছেন, ‘‘সকলেই শুনে খুশি হচ্ছেন যে, আমি অভিনয় করছি যাত্রায়। কোদাল পাড়া থেকে মাটির চাষ, ঘর তৈরি করা থেকে ব্যবসা করা… সবই তো করেছি এই একটা জীবনে। যাত্রায় অভিনয় করলে কী কোনও ক্ষতি হবে আমার?’’

গোটা পৃথিবীতে ভুবন বাদ্যকর বিখ্যাত। তিনি বিদেশ দেখতে চান। সিনেমায়ও অভিনয় করতে চান। জমিয়ে যাত্রার রিহার্সাল করছেন ভুবন বাদ্যকর। একদিকে যখন কোমর বেঁধে মহড়ায় ব্যস্ত রয়েছেন ভুবন বাদ্যকর, তখন এই ধরনের আচমকা ‘ভাইরাল’ হয়ে যাওয়া সেলিব্রিটির প্রসঙ্গে যাত্রা জগতের ‘সুচিত্রা সেন’ কাকলি চৌধুরীর মৃদু কটাক্ষ, ‘‘শিল্পীর কোনও জাত-ধর্ম হয় না। শিল্পী শিল্পীই হন। তবে একটা গান হিট করেছে বলে তাঁকে দিয়ে যাত্রায় অভিনয় করানোটা কতটা গ্রহণযোগ্যতা পাবে, সেটা তো সময় বলবে। তিনি পল্লব মুখোপাধ্যায়ের দলে যাত্রা করছেন। তিনি নিশ্চয়ই কিছু একটা ভাল দেখতে পেয়েছেন। আমার একটা কথাই মনে হয় যাত্রা বুঝে করা উচিত।’’

অন্যদিকে, যাত্রা জগতের ‘উত্তম কুমার’ অনল চক্রবর্তীর সাফ প্রতিক্রিয়া, ‘‘আমি খুবই হতাশ যে যাত্রাটা এতটা সহজ হয়ে গেল।’’ ‘বাদামকাকু’র যাত্রায় অভিনয়-করাকে শ্লেষে বিদ্ধ করে তাঁর সংযোজন, ‘‘সবাই করতে পারে যাত্রা। ৩৮ বছরের যাত্রা জীবনে একবারও বুঝিনি যাত্রা এত সোজা বিষয়।’’

যাত্রার অভিনেতা, তথা নায়ক কুমার অনুভবও ‘কাঁচা বাদাম’-এর স্রষ্টার যাত্রাভিনয় নিয়ে যথেষ্ট সন্দিহান। তিনি বলেছেন, ‘‘ভুবন বাদ্যকরকে গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করতে হবে। দর্শক যদি পছন্দ করেন, তো ভাল। না হলে কিছুই করার থাকবে না আর। কারণ এর আগেও আমরা দেখেছি বড় বড় মুম্বইয়ের তারকারা মঞ্চে দাঁড়িয়ে পারফর্ম করতে পারেননি বলে তাঁদের দর্শক আর নেননি।’’

এখন প্রশ্ন: সোশ্যাল মিডিয়ার সৌজন্যে রাতারাতি ‘ভাইরাল’ হয়ে-ওঠা ‘বাদামকাকু’ যাত্রার ‘ভুবন’-এ কতটা দীর্ঘস্থায়ী সাফল্য অর্জন করতে পারেন? নইলে যাত্রার ‘বাদ্যকার’-রা তাঁকে নিয়ে আগামিদিনে মাতামাতি করবেন তো? যাত্রার মঞ্চের গান কতটা ‘ভাইরাল’ হবে, তা স্রেফ সময়ই বলবে।