Agomoni Shoot: ‘জ্যান্ত’ দুর্গার ধুম ইনস্টাগ্রামে, মডেল, ফটোগ্রাফার, মেক-আপ আর্টিস্টরা কীভাবে করেন এই ঊমা-শুট?

Durga Puja 2022: প্রত্যেকেই জোরদার টিমওয়ার্ক করেন। এখানে ডিজাইনার, ফটোগ্রাফার, সেট-ডিজাইনার, মডেল সকলেই থাকেন। সবার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেই শুরু হয় কাজ

Agomoni Shoot: ‘জ্যান্ত’ দুর্গার ধুম ইনস্টাগ্রামে, মডেল, ফটোগ্রাফার, মেক-আপ আর্টিস্টরা কীভাবে করেন এই ঊমা-শুট?
গৌরী এল ঘরে
Follow Us:
| Updated on: Oct 04, 2022 | 9:41 AM

প্রতি বছর পুজো আসলেই ইনস্টাগ্রাম জুড়ে ধুম পড়ে যায় ‘জ্যান্ত’ দুর্গার। কাশবন, পদ্মপুকুর, কুমোরটুলি থেকে উঁকি দিচ্ছে ‘জ্যান্ত’ দুর্গারা। সঙ্গে কখনও-কখনও লক্ষ্মী, কার্তিক, গণেশ, সরস্বতীও থাকে। অধিকাংশ সময়ে দুর্গারই বিভিন্ন রূপ ধরা পড়ে সেসব ছবিতে। শেষ পাঁচ বছর ধরে এমন আগমণী ফটোশুটে ভাইরাল সোশ্যাল মিডিয়ায়। ফি বছর কুমোরটুলিতে ভিড় জমান দেশ-বিদেশ থেকে আসা ফটোগ্রাফারের দল। সেই তালিকায় এখন ভিড় বেড়েছে মডেলদেরও। কাঠামোর সঙ্গে ছবিতোলা শহরের নয়া ট্রেন্ড। এছাড়াও দুর্গার নানা রূপ, একচিলতে পুরাণ তুলে ধরতেও চেষ্টা করেন এখনকার মেকআপ আর্টিস্টরা। শহরের বড় পুজোর মধ্যে যেমন চলে থিমের লড়াই, তেমনই মেকআপ আর্টিস্টদের মধ্যে চলে ভাবনা নিয়ে ঠাণ্ডা লড়াই। কে, কার দুর্গাকে কতটা ভাল সাজাতে পারবেন, কত বেশি মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পারলেন, তা-ই নিয়ে চেষ্টার কোনও ত্রুটি থাকে না। আবার এই দুর্গারাই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হন।

অনেক ছবি নিয়ে বয়ে যায় খিল্লির বন্যা। তবুও এই দুর্গারা সকলেই ভাইরাল হতে চান। দুর্গা সেজে ভাইরাল হওয়ার সুযোগ তাঁরাও খুঁজে চলেন প্রতিনিয়ত। শুনে অবাক লাগছে? বাস্তব কিন্তু এমনই। ইনস্টাগ্রামে ভর্তি এমন ঊমাদের ছবিতে। কিন্তু কেন প্রতিবছর এমন ফটোশুটের দিকে চেয়ে থাকেন তাঁরা? এর সঙ্গে কি অর্থনীতির বিশেষ যোগ রয়েছে? নিছক কৌতূহলের বশেই TV9 বাংলার তরফে যোগাযোগ করা হয় এক মেকআপ আর্টিস্ট এবং এক মডেলের সঙ্গে—ঘটনাচক্রে যিনি দুর্গা সাজিয়েছেন এবং যিনি নিজে দুর্গা সেজেছেন।

মেকআপ আর্টিস্ট বন্ধন বিশ্বাসের কাজ এবার বেশ ভাইরাল সোশ্যাল মিডিয়ায়। পৃথিবীর প্রত্যেকটি মেয়েই মা দুর্গার রূপ এবং মেয়েরাই পারে নতুন জীবন দিতে—অভিমত বন্ধনের। তাঁর কথায়, “প্রত্যেকটি মেয়ের মধ্যেই আদি শক্তির রূপ বর্তমান। তা-ই আমরা জগৎ-জননী মায়ের মধ্যে একজন নারীকে তুলে ধরেছি। আমার কাছে একজন নারীই মা দুর্গার রূপ।” এই থিমেই বন্ধন তাঁর ঊমাকে সাজিয়েছেন। লাল-পাড় সাদা শাড়িতে ঊমা বসে রয়েছে একচালার কাঠামোর পাশে। চারিদিকে পদ্ম বিছানো। কথা প্রসঙ্গে বন্ধন জানালেন, শেষ পাঁচ বছর ধরে তিনি মেকআপ ইন্ডাস্ট্রিতে রয়েছেন। প্রতি বছরই ঊমার আগমনে তাঁর বিশেষ কিছু ভাবনা থাকে। এই যে আপনি এত সুন্দর-সুন্দর ছবি দেখেন, তার নেপথ্যে থাকে অনেকটা পরিশ্রম, খাটনি, ক্লান্তি। পুজোর ৪ মাস আগে থেকে শুরু হয় তাঁদের প্রস্তুতি।

বন্ধনের কাজ…

প্রত্যেকেই জোরদার টিমওয়ার্ক করেন। এখানে ডিজাইনার, ফটোগ্রাফার, সেট-ডিজাইনার, মডেল সকলেই থাকেন। সবার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেই শুরু হয় কাজ। ভাবনা যাঁর, পুরো শুটের খরচও তাঁরই থাকে। টিমের সকল সদস্যকে তাঁদের কাজের সাম্মানিক হিসেবে কিছু টাকা হাতে তুলে দেওয়া হয়। এই শুট নিয়ে রাতের পর রাত জাগা, তর্ক এসব চলতেই থাকে। তবে সকলেই অপেক্ষা করে থাকেন ফাইনাল ছবি দেখার জন্য। শুটের জন্য পোশাক বানানো, গয়না, সেট তৈরি করা… সব মিলিয়ে যথেষ্ট পরিশ্রমের একটা কাজ। যে পরিমাণ অর্থ তাঁদের খরচ হয়, তার কিছুই কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়া থেকে উঠে আসে না। এই যে সকল মানুষের ভালবাসা, প্রশংসা পান—এটাই তাঁদের কাছে সব। তবে এইসব ফটোশুট দেখে সকলেই কাজ পান। মেকআপ আর্টিস্টরা যেমন ‘ব্রাইডাল’-এর ডাক পান, তেমনই মডেল, সেট-ডিজাইনারও ডাক পান সিনেমা-সিরিয়াল থেকে।

দুর্গার বেশে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ছবি ভাইরাল হয়েছে মডেল নন্দিনী মুখোপাধ্যায়ের। আসানসোলের বাসিন্দা নন্দিনী মাইক্রোবায়োলজি নিয়ে পড়াশোনা করছেন। শখ মডেলিং। আর সেই কাজের সূত্রেই এবার তাঁর দুর্গা সাজা। কথা প্রসঙ্গে নন্দিনী জানালেন, তিনি নিজেই জানতেন দুর্গা সাজতে। ভাল কোনও পৌরাণিক চরিত্র হয়ে উঠতে। সেখান থেকেই এ বছর মেকআপ শিল্পী রিয়া হালদারের ভাবনায় ও রূপটানে তাঁর দুর্গা হয়ে ওঠা। সোশ্যাল মিডিয়া মারফত তাঁর ছবি যে অনেকের কাছে পৌঁছে গিয়েছে, এতেই তিনি খুশি। ইনস্টাগ্রামে এই ছবি পোস্ট করার পর তাঁর ফলোয়ার বেড়েছে। তবে এই লাইক, কমেন্টস নিয়ে ভাবিত নন নন্দিনী। পরবর্তীতে নন্দিনী নিজেকে বড়পর্দায় দেখতে চান। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি অডিশনও দিয়েছেন।

Durga

প্রচণ্ডা রূপে নন্দিনী

তবে এই যে এত পরিশ্রম করে ফটোশুট করলেন, তাতে আর্থিক দিক থেকে কতটা লাভবান হলেন তিনি? উত্তরে জানান, কাজের একটা পারিশ্রমিক তিনি পেয়েছেন। তবে সারাদিন যে কষ্ট, পরিশ্রম আর ভালবাসা দিয়ে তাঁরা সবাই মিলে কাজটা করেন, তা টাকার অঙ্কে বিচার করা যায় না। দীর্ঘ কয়েক মাসের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল এই একটা ছবি। একটা গোটা দিন চলে যায় প্রস্তুতিতে। এরপর তাঁদের অপেক্ষা থাকে ফাইনাল ছবি দেখার জন্য। সেই ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দিতে চেষ্টার কোনও ত্রুটি রাখেন না তাঁরা। মানুষের ভালবাসা, প্রশংসা নিয়েই পথ চলতে চান তাঁরা। সঙ্গে আরও এগিয়ে যাওয়ার এবং ভাল কাজ করার খিদে। যার সঙ্গে অর্থনীতির প্রত্যক্ষ যোগ না থাকলেও পরোক্ষ যোগ তো আছেই।