Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

ব্রিটিশ সম্রাটের জয়ধ্বনি নয়, যুগযুগান্তরের মানবভাগ্যরথ চালকের জয়গান গেয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ

AzadiKaAmritMahotsav: যে গানে গায়ের রক্ত গরম হয়ে ওঠে, যে গান চোখে আনে জল, সেই গানের স্রষ্টা কবিগুরুকেও গান ও গানের কথা নিয়ে পড়তে হয়েছিল সমালোচনার মুখে। ব্রিটিশ সরকারের পৃষ্ঠপোষকতার জন্যই এই গান লিখেছিলেন তিনি--উঠেছিল এ হেন নির্মম অভিযোগও।

ব্রিটিশ সম্রাটের জয়ধ্বনি নয়, যুগযুগান্তরের মানবভাগ্যরথ চালকের জয়গান গেয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ
গ্রাফিক- অভীক দেবনাথ
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Aug 10, 2021 | 9:00 PM

অলিম্পিকের মঞ্চে জ্যাভলিনে সোনা জিতে তেরঙ্গা আঁকড়ে ধরেছিলেন সোনার ছেলে নীরজ চোপড়া। চোখ ফেটে বেরিয়ে আসছিল আনন্দাশ্রু। সুদূর টোকিওতে তখন বেজে চলেছে ‘জন-গন-মন…’ আর বছর ২৩-এর যুবক কিছুতেই কাছছাড়া করতে চাইছেন না ওই গেরুয়া-সাদা-সবুজের একরাশ আবেগকে। বহু বছর পর বিদেশের মাটিতে জাতীয় সঙ্গীত শুনে তখন গর্বে বুক ফুলে উঠেছিল হাজার-হাজার কিলোমিটার দূরে টিভি স্ক্রিনে চোখ রাখা ভারতবাসীর।

যে গানে গায়ের রক্ত গরম হয়ে ওঠে, যে গান চোখে আনে জল, সেই গানের স্রষ্টা কবিগুরুকেও গান ও গানের কথা নিয়ে পড়তে হয়েছিল সমালোচনার মুখে। ব্রিটিশ সরকারের পৃষ্ঠপোষকতার জন্যই এই গান লিখেছিলেন তিনি–উঠেছিল এ হেন নির্মম অভিযোগও। বহু বছর পরে এই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিলেন রবি ঠাকুর। উত্তর দিয়েছিলেন সে সময়ে ওঠা যাবতীয় বিতর্কের। ১৯১১ সালের কোনও এক ডিসেম্বর। কলকাতায় কংগ্রেসের ২৬তম অধিবেশন চলছে। সেই অধিবেশনের দ্বিতীয় দিনের শুরুটা হয়েছিল সমবেত কন্ঠে ‘জন-গণ-মন-অধিনায়ক’ গানটি গেয়ে।

ওই বছরই সপ্তম এডওয়ার্ডের মৃত্যুর পর গ্রেট ব্রিটেনের সিংহাসনে সম্রাট পঞ্চম জর্জ ক্ষমতায় আসেন। কাকতালীয়ভাবে সে বারই ডিসেম্বরে সস্ত্রীক ভারত সফরে এসেছিলেন জর্জ। কংগ্রেস অধিবেশনের দ্বিতীয় দিন অর্থাৎ যে দিন গানটি গাওয়া হয়েছিল, সেই দিন সমাবেশের পর কংগ্রেস নেতারা পঞ্চম জর্জ ও তাঁর স্ত্রীকে সৌজন্যমূলক অভিবাদন জানিয়েছিলেন। আর সমস্যার সূত্রপাত সেখানেই। পরের দিন দুই নামী পত্রিকায় প্রকাশিত দুই প্রতিবেদন পড়ে জনসাধারণ মনে করেন কবির গান বুঝি সম্রাটের জয়ধ্বনি। সে সময় স্বাধীনতার স্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে পড়েছে দেশের প্রতিটি কোণায়। শুরু হয় অপপ্রচার…।

এর বহু বছর পর ১৯৩৭-এ কবিকে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করে এক চিঠি লেখেন পুলিনবিহারী সেন নামে জনৈক এক যুবক। সেই চিঠির উত্তর দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। লিখেছিলেন, “শ্রীযুক্ত পুলিনবিহারী সেন—

জনগণমনঅধিনায়ক গানটি কোনও উপলক্ষ্য-নিরপেক্ষ ভাবে আমি লিখেছি কিনা তুমি জিজ্ঞাসা করেছ। বুঝতে পারছি এই গানটি নিয়ে দেশের কোনও কোনও মহলে যে দুর্বাক্যের উদ্ভব হয়েছে তারই প্রসঙ্গে প্রশ্নটি তোমার মনে জেগে উঠল।” জানিয়েছিলেন, রাজসরকারে অবস্থানকারী তাঁর এক বন্ধু সম্রাটের জয়গান রচনার জন্য তাঁকে বিশেষ ভাবে অনুরোধ জানিয়েছিলেন। কবি সেই চিঠিতে লেখেন, ‘‘তারই প্রবল প্রতিক্রিয়ার ধাক্কায় আমি জনগণমন অধিনায়ক গানে সেই ভারতভাগ্যবিধাতার জয় ঘোষণা করেছি, পতন অভ্যুদয় বন্ধুর পন্থায় যুগ যুগ ধাবিত যাত্রীদের যিনি চিরসারথি, যিনি জনগণের অন্তর্যামী পথপরিচায়ক, সেই যুগযুগান্তরের মানবভাগ্যরথচালক যে পঞ্চম বা ষষ্ঠ কোনো জর্জই কোনক্রমেই হতে পারেন না সে কথা রাজভক্ত বন্ধুও অনুভব করেছিলেন।”

তবে তাঁর লেখনি নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় অবাক হয়েছিলেন রবিঠাকুর। চিঠিতে লিখেছিলেন, “শুনে বিস্মিত হয়েছিলুম, সেই বিস্ময়ের সঙ্গে মনে উত্তাপেরও সঞ্চার হয়েছিল।” তাঁর একটি চিঠির জবাবেই সেদিনের সেই বিতর্ক স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল নিমেষে। ভারতবাসীর রক্তে মিশে গিয়েছিল ৫২ সেকেণ্ডের ওই গান…।

ভারতের ৭৫তম স্বাধীনতা দিবসের রাখার আগে ‘রাষ্ট্রগান’ পোর্টাল চালু করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। TV9 News Network কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রকের এই উদ্য়োগ #AzadiKaAmritMahotsav | Rashtragaan-এর সঙ্গে যুক্ত হতে পেরে গর্বিত। আসুন, নিজের গলায় জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে www.rashtragaan.in-এ আপলোড করে এই মহতী উদ্য়োগকে সফল করে তুলুন।