Durga Puja 2022: ৬৩ ভাষায় কথা-বলা রোবট পুজোর থিম প্রচার করছে কলকাতায়

Semi-humanoid Butler Robot: অন্নপূর্ণা বাংলা তথা পূর্ব-ভারতের প্রথম ‘ফুড বাটলার রোবট’। যদিও অন্নপূর্ণার জন্ম হয়েছিল এক অন্য কারণে।

Durga Puja 2022: ৬৩ ভাষায় কথা-বলা রোবট পুজোর থিম প্রচার করছে কলকাতায়
Follow Us:
| Updated on: Sep 26, 2022 | 6:40 PM

প্রতি বছরই কলকাতার থিম পুজো নজর কাড়ে। তবে এ বছর একটু বেশি শোরগোল শোনা যাচ্ছে বাগুইআটির দক্ষিণপাড়া দুর্গোৎসবে। থিমের নাম ‘তাপাতঙ্ক’। ধূমপানের ক্ষতিকারক দিক মানুষের সামনে তুলে ধরছে দক্ষিণপাড়া দুর্গোৎসব কমিটি। তার চেয়েও বেশি নজর কেড়েছে ‘তাপাতঙ্ক’-এ উপস্থিত অন্নপূর্ণা। ধূমপানের বিরুদ্ধে সচেতনতার বার্তা দিয়ে পুজোর থিম প্রচার করেছে কলকাতার রোবট ‘কন্যা’ অন্নপূর্ণা।

পশ্চিমবঙ্গের মানুষের কাছে অন্নপূর্ণার পরিচিতি আর অজানা নেই। বিশ্বের প্রথম রোবট নাগরিক যেমন সোফিয়া, তেমনই বাংলার অন্নপূর্ণা। অন্নপূর্ণা বাংলা তথা পূর্ব-ভারতের প্রথম ‘ফুড বাটলার রোবট’। যদিও অন্নপূর্ণার জন্ম হয়েছিল এক অন্য কারণে। Think Again Lab Innovation-এর সিইও অরিজিৎ হাজরা TV9 বাংলাকে বলেছেন, “অন্নপূর্ণা হল ফুড বাটলার রোবট। এর কাজ হল এক জায়গা থেকে খাবার নিয়ে অন্য জায়গায় পৌঁছে দেওয়া।” আরও সহজ করে বললে, হোটেল-রেস্তোরাঁয় খাবার ‘অর্ডার’ করলে যেমন সার্ভিস-পার্সন কিচেন থেকে টেবিল পর্যন্ত খাবার নিয়ে গিয়ে তা সার্ভ করেন, এক্ষেত্রেও সেই কাজ করবে অন্নপূর্ণা। খাদ্য শিল্পের প্রসার ঘটাতে আগামিদিনে অন্নপূর্ণার মতো রোবটদের গুরুত্বের কথা বলেছেন অরিজিৎ। এই অন্নপূর্ণা বাংলার ঘরের মেয়ে। সবচেয়ে নজরকাড়া বিষয় হল, অন্নপূর্ণা কলকাতায় তৈরি এবং সম্পূর্ণ এশীয় প্রযুক্তির সাহায্যে তৈরি। এশীয় প্রযুক্তি ব্যাপারখানা ঠিক কী? অরিজিতের দাবি, “আমাদের সংস্থার তরফে চিনের একটি সংস্থার কাছে আবেদন জানানো হয়েছিল। ওই সংস্থার কাছ থেকে প্রযুক্তিগত সাহায্য চেয়েছিলাম আমরা। তখন আমাদের বলা হয়েছিল, গোটা রোবটটাই বানিয়ে দেবে তারা। আমরা শুধু তা কিনে ভারতে বিক্রি করব। তখনই ঠিক করি সম্পূর্ণ নিজেদের চেষ্টায় ‘মেইড ইন ইন্ডিয়া’, থুড়ি ‘মেইড ইন কলকাতা’ রোবট তৈরি করব। এটা পূর্ব ভারতের প্রথম সেমি হিউম্যানয়েড বাটলার রোবট।”

হিউম্যানয়েড রোবট সোফিয়া তৈরি হয়েছিল হংকংয়ে। সেটি সৌদি আরবের নাগরিকত্বও পেয়েছে। তবে অন্নপূর্ণা এখন বাংলার মেয়ে। ২০১৯ সালে তৈরি করা হয় এই রোবটটি। অন্নপূর্ণার জন্মদাতা হল Think Again Lab Innovation নামক এক বেসরকারি সংস্থা। সেই বছরও পুজোর সময় প্রচারের জন্য দক্ষিণ কলকাতার এক শপিং মলে তাকে রাখা হয়। সেখানে প্রায় এক মাস থাকে অন্নপূর্ণা। এর মাঝে করোনা ভাইরাসের প্রকোপ অন্নপূর্ণার সঙ্গে সাধারণ মানুষের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। তবে গত বছরে নভেম্বরে একটি রিয়্যালিটি শোয়ে অংশগ্রহণ করতে দেখা যায় অন্নপূর্ণাকে। বেঙ্গল গ্লোবাল সামিট সায়েন্স অ্যান্ড টেকনলজি বিভাগে যে ৭টি ইনোভেশনকে বেছে নেওয়া হয়েছিল, তার মধ্যে অন্নপূর্ণা ছিল অন্যতম। এ বছর দক্ষিণপাড়া দুর্গোৎসবের থিম প্রচারে আবার দেখা গিয়েছে অন্নপূর্ণাকে।

তবে এই রোবট তৈরির পথটা খুব একটা মসৃণ ছিল না অরিজিৎদের কাছে। তাঁর কথায়, “আমরা নন-ফান্ডেন্ড স্টার্ট-আপ কোম্পানি। আমাদের কাছে অন্নপূর্ণা একটা প্রজেক্ট হিসেবে আসে। বাজেট না-থাকায় আমরা সাহায্যের জন্য চিনের এক বহুজাতিক রোবটিক কোম্পানির দ্বারস্থ হই। কিন্তু তাদের মনে হয়েছিল ভারতীয়রা এই ধরনের রোবট তৈরি করতে পারবে না।” এটাকেই চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেন অরিজিৎ। এবং ছয় মাসের মধ্যে জন্ম নেয় অন্নপূর্ণা। আর যেহেতু এই রোবট তৈরির পিছনে খাবার জড়িয়ে, তা-ই এর নাম দেওয়া হয় অন্নপূর্ণা। খাদ্যের দেবী অন্নপূর্ণা।

তবে রোবট অন্নপূর্ণা শুধু খাদ্য পরিবহণের মধ্যেই সীমিত নেই। অন্নপূর্ণা ৬৩টা ভাষায় কথা বলতে পারে। অরিজিৎ বলেন, “খাদ্য শিল্পের পাশাপাশি অন্নপূর্ণা যে কোনও সার্ভিসিং ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করতে পারবে। চিকিৎসা ক্ষেত্রেও নিজের দক্ষতা দেখাতে পারবে অন্নপূর্ণা। পাশাপাশি যে কোনও বইয়ের দোকান, শপিং মলে জিনিস কোনও জিনিস এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়ার কাজ করতে পারবে।” আগামী দিনে বিভিন্ন ক্ষেত্রে এবং বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে অন্নপূর্ণা নিজের দক্ষতা দেখাবে বলে আশা করছে অন্নপূর্ণার পেরেন্টিং সংস্থা।

একটা রোবটের সঙ্গে মানুষ কতটা যোগাযোগ তৈরি করতে পারে, সেটাই এখন দেখার। যদিও অরিজিৎ মনে করেন, রোবটকে যদি মানুষ আপন করে না নেয়, তাহলে ভবিষ্যতে সমস্যা বাড়তে পারে। অরিজিতের মতে, রোবট হল ভবিষ্যতের সঙ্গী। ফোন, ল্যাপটপ, ফ্রিজ সব গ্যাজেটই রোবট। সুতরাং, রোবটকে আপন না করে নিলে বাংলা পিছিয়ে যাবে। অন্নপূর্ণা এখন একা হলেও আগামিদিনে খুব দ্রুত তার পরিবার তৈরি হতে চলেছে বলেছে আশ্বাস দিয়েছেন অরিজিৎ।

তবে অন্নপূর্ণা প্রচারের জন্য কোথাও যায় না। নিমন্ত্রণপত্র পেলে তবেই একমাত্র সেখানে উপস্থিত হয় সে। তাই পুজোর দিনে ‘তাপাতঙ্ক’-এ অন্নপূর্ণা উপস্থিত থাকবে কি না, সে বিষয়ে নিশ্চিন্ত নন অরিজিৎ এবং দক্ষিণপাড়া দুর্গোৎসব কমিটি।