মাদার ম্যাজিক ১১১, টেরেসার ফোটো ক্রনিকলার সুনীল কে দত্তর স্মৃতিচারণা

এত কাছ থেকে মাদারকে দেখে প্রবীণ এই ফোটো জার্নালিস্ট আজও বিশ্বাস করেন, "জীবদ্দশায় মাদার যা করে গেছেন আর্ত মানুষদের জন্য, যেভাবে নিজের হাতে অসুস্থ ও দুঃখী মানুষের সেবা শুশ্রূষা করেছেন তা কোনও মানুষ পারে না।"

মাদার ম্যাজিক ১১১, টেরেসার ফোটো ক্রনিকলার সুনীল কে দত্তর স্মৃতিচারণা
এখন আশির কোঠায় ফটোগ্রাফার সুনীল কে দত্ত। জীবনের অনেকটা কাটিয়েছেন তিনি মাদারের সঙ্গে।
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Aug 26, 2021 | 7:07 PM

নন্দন পাল

ওই নীল পাড় সাদা শাড়ি মহিলার ম্যাজিকে বারেবারে মজেছেন মেসি থেকে মারাদোনা। দেশ কাল সীমান্ত ছাড়িয়ে যিনি জেগে থাকেন শতাব্দীর পর শতাব্দী। যিনি কলকাতার বড় কাছের ‘মা’। আর্তদের কষ্ট দেখলে যার বুকে জ্বলত আগুন, চোখে ঝরত অশ্রুবারি। তিনি মা টেরেসা। আজ মাদারের ১১১তম জন্মদিন। আলবেনিয় ভাষায় অ্যাগনেস গনজা বোজাঝিউ এর নামের অর্থ গোলাপের ছোট্ট কুঁড়ি। নিজের হৃদয় কুসুমকে বিকশিত করে মাদার টেরেসা সেই ফুলের সৌরভ ছড়িয়েছেন আজীবন।

এখন আশির কোঠায় ফটোগ্রাফার সুনীল কে দত্ত। জীবনের অনেকটা কাটিয়েছেন তিনি মাদারের সঙ্গে। তাঁকে মাদার টেরেসার ফোটো ক্রনিকলারও বলা হয়। ১৯৮৭তে ফটোগ্রাফি সোসাইটি অফ আমেরিকা থেকে বিশ্বের সেরা ফটোগ্রাফারের শিরোপা পেয়েছেন সুনীল কুমার দত্ত। মাদার টেরেসাকে দীর্ঘদিন লেন্সে ধরেছেন তিনি। মাদারের সঙ্গে কলকাতার রাজপথ থেকে সরু গলি ঘুরে বেরিয়েছে সুনীলের ক্যামেরা। তুলে এনেছে মণি মুক্তো সব। মাদার টেরেসার ওপর সুনীল কে দত্তের বই “ডাউন মেমরি লেন” মাদারের ওপর তৈরি একমাত্র বই যা প্রকাশ করেছেন স্বয়ং মাদার টেরেসা। সুনীলবাবু মাদারের অপার স্নেহ ধন্য। একটা সময়ে তাঁর রোজনামচায় ছিলেন টেরেসা। টেরেসার সিস্টারহুড থেকে তাঁকে ক্যামেরায় বন্দী করেছেন সুনীল কে দত্ত।

সুনীলবাবুর মতে সহজ, সুন্দর, সাবলীল এবং স্বতঃস্ফূর্ত ছিলেন ব্যাক্তি মাদার টেরেসা। একবার কলকাতার একটি বস্তি অঞ্চলে অসুস্থ অস্থিমজ্জাসার এক শিশুকে দেখে তাকে কোলে তুলে নেন মাদার টেরেসা। শিশুটির শারীরিক অবস্থা দেখে মাথা গরম হয়ে যায় মাদারের। ওই শিশুটির বাবা মাকে বকাঝকা করেন টেরেসা: কেন তারা শিশুটির যত্ন নেন নি। শিশুটিকে কোলে নিয়ে সেই সময়ে সুনীলের তোলা মাদারের ছবি জনপ্রিয় হয়েছিল সারা দুনিয়া জুড়ে। পরবর্তীকালে ভারত সরকার পোস্টেজ স্ট্যাম্প আকারেও বার করে ওই ছবিটির প্রতিরূপ। অথচ সেটি ছিল ক্যামেরার শেষ রিল। আজও এসব কথা মনে করে স্মৃতি মেদুর হন সুনীল কুমার দত্ত।

এত কাছ থেকে মাদারকে দেখে প্রবীণ এই ফোটো জার্নালিস্ট আজও বিশ্বাস করেন, “জীবদ্দশায় মাদার যা করে গেছেন আর্ত মানুষদের জন্য, যেভাবে নিজের হাতে অসুস্থ ও দুঃখী মানুষের সেবা শুশ্রূষা করেছেন তা কোনও মানুষ পারে না। তামাম পৃথিবীর সেরা সব স্বীকৃতি এসেছে মাদারের কাছে, এসেছে নোবেল পুরস্কারও। অথচ কোনও হেলদোল নেই ওই মানুষটার। এই নির্লিপ্তি কি সাধারন মানুষ পারে! এ তো সাধকের অভ্যাস। এ তো সন্তেরই স্বভাব“।

ক্যানোনাইজেশনর বহু আগেই তাই ভারত রত্ন মাদার সন্ত হয়ে গিয়েছিলেন তাঁর কাজের মাধ্যমে। তাঁর সেবামুলক পরিচয় তাই সম্ভ্রম আদায় করতে চায় না। ভালবেসে বুকে টেনে নেয়। মা যেমন করে সন্তানকে কোলে তুলে নেয়। আজ ১১১ বছরে কলকাতার মাদার। এই শহরকে বড় ভালবাসতেন মা টেরেসা। এই কলকাতায় আজও যেন ওই মায়ের কোল পাতা। বারেবারে তাই সারা দুনিয়া এসে ধরা দেয় ওই নীল পাড় সাদা শাড়ীর আঁচলে। মাদার ম্যাজিক তাই এ শহরের সংস্কৃতিরই সমার্থক হয়ে গেছে।

আরও পড়ুন- Mother Teresa Birth Anniversary: শান্তি আর ভালবাসায় সুন্দর হয় পৃথিবী! ভাল মনের মানুষ হতে মাদার টেরিজার এই ১০ বাণী মেনে চলুন