Inside Story: টলিউডে বড্ড লবিবাজি, দর্শককে বোকা বানিয়ে আর কতদিন? অকপট সঙ্গীত পরিচালক মিমো
Meemo: বলিউড দিয়ে শুরু করি, আমাদের এত ক্ষমতা, আমরা চাইলেই হলিউডের মত একটা ছবি বানাতে পারি—এই ভাবনাটাতেই সমস্যা।
জয়িতা চন্দ্র
টলিউড দিয়ে কাজ শুরু, মাত্র ১০ বছরে একাধিক অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছি। এখন কিছুদিন বলিউডেই কাজ করতে চান সঙ্গীত পরিচালক সৈকত রায় (মিমো)। সফর শুরুর সময়ই এমন কোন পরিস্থিতি চাক্ষুস করলেন মিমো, খোলামেলা জানালেন TV9 বাংলায়।
বলিউডে এখন একাধিক কাজ আপনার হাতে। শুরুটা টলিউডে—কীভাবে এল কাজের প্রথম সুযোগ?
টলিউড নিয়ে বলতে গেলে শুরু থেকে শুরু করতে হয়। টলিউডে কাজ শুরু ২০১১-য়। ছোট থেকেই গানটা শিখতাম, তাই মিউজিক নিয়ে চর্চা করার ইচ্ছে ছিল প্রথম থেকেই। এই সময়টায় আমি অনেক কিছু শিখেছি, একটা মিউজিক তৈরি করতে হলে ঠিক কী-কী করতে হয়, সবটা। বন্ধুদের সঙ্গে কাজ করা শুরু করি। ছোট-ছোট ছবিতে কাজ করি, বিজ্ঞাপনে কাজ করি, তথ্যচিত্র বানাই। তারপর শুরু হয় বড় কাজ। সেখান থেকেই ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে পরিচয় হওয়া। প্রথম ব্রেক পেয়েছিলাম ‘যকের ধন’ ছবিতে, ২০১৬ সালে।
‘যকের ধন’-এর পর পরিকল্পনাটা ঠিক কী ছিল?
ভাল কাজ করতেই চেয়েছিলাম। সে যে ক্ষেত্রেই হোক না কেন। ‘আলিনগরের গোলোকধাঁধা’ আমার করা, হইচই-এ ‘ব্যোমকেশ’ আমার করা। এছাড়াও বেশকিছু ছবি আছে যেগুলো মুক্তিই পায়নি, এটাই দুঃখ। কারণ সেই কাজগুলো আমি দেখাতে পারি না কাউকে।
লক্ষ্য বলিউড হয়ে উঠল কেন?
খুব সত্যি কথা যদি বলতে হয়, বলিউড তো খুব বড় একটা মার্কেট। সেখান থেকে দক্ষিণী ইন্ডাস্ট্রি, আমার সবক্ষেত্রেই কাজ করার ইচ্ছে রয়েছে। বলিউড মানেই যে বিশাল কিছু, তা নয়। বলিউডের ছবি মানেই বিশাল হিট হবে, তা-ও নয়। যেহেতু হিন্দি ভাষার পরিধি অনেক বড়, তা-ই সেখানে কাজ করলে অনেক মানুষের কাছে পৌঁছে যাওয়া যায়।
নতুন প্রজন্ম পরিধির কথা ভেবে বলিউডে চলে গেলে, বাংলা ছবির পাশে কারা দাঁড়াবে?
বাংলা ছবির পাশে দাঁড়াব না, তা বলছি না। আমি বাঙালি, বাংলা ছবির পাশেও দাঁড়াব, ছবি করবও। তবে যদি এগিয়ে যাওয়ার কথা বলেন, প্রসারের কথা বলেন, তবে বলব হ্যাঁ, এটার অভাব রয়েছে টলিউডে। টলিউডে সেই ব্যাপ্তিটা প্রায় নেই বলেই আমার মনে হয়। খুব ভেঙে বলতে হলে, এখানে প্রযোজক কম, ছবি কম, দর্শক কম, ফলে এটা একটা ছোট্ট সুন্দর পরিবার হতে পারত। সেখানে দাঁড়িয়েই এই সুন্দর সৌজন্য বিষয়টার অভাব বলে আমার মনে হয়। এখানে বড্ড বেশি লবিবাজি চলে। যাঁরা যাঁদের সঙ্গে কাজ করছেন, তাঁরা তাঁদের সঙ্গেই কাজ করবেন। তাঁরা ভেবেই দেখেন না, যে কে নতুন এল, সে ক’টা কাজ করল। এটা আমার একান্ত ব্যক্তিগত মতামত। এই জায়গায় দাঁড়িয়ে আমার মনে হয় যে ক্রিয়েটিভিটি নষ্ট হচ্ছে। দেখুন, সকলের সঙ্গে কাজ করতে হবে। এক-একজন এক এক জঁরের কাজ করে থাকে। তাঁদের কাজের সুযোগ দিলে, তবেই তো সম্ভাবনা বাড়বে।
বলিউডে কি এই সমস্যাটা নেই বলে আপনার মনে হয়?
আছে, আছে। সর্বত্রই কমবেশি আছে। আমার যদি গডফাদার না থাকে, তবে লবির শিকার আমিও হতে পারি। যদি কারও হাত ধরে উঠি, তবে এক রকমের ছবি, আর যদি কারও হাত না-পাই, তবে পথচলাটা কঠিন। তবে কি বলিউডে এত বেশি ছবি হয়, যে কাজের সম্ভাবনাটা বাড়ে। মানে, ওখানে কাজের সংখ্যাটাই এত বেশি যে, একটা কাজে ঢুকতে না পারলে, আরও দশটা কাজ অপেক্ষায় রয়েছে। আমি আরও একটা কথা বলতে চাই, সবাই যে কাজ পাচ্ছে এমনটা নয়। তবে নতুনদের কথা বলার একটা সুযোগ অন্তত দেওয়া হয়। একটা নতুন গান করলে অন্তত বলে, ঠিক আছে, কী করেছ শোনাও। প্রথমেই দরজাটা বন্ধ করে দেয় না। ওরা না, দিনের শেষে কাজটা বোঝে, ব্যবসাটা বোঝে।
বলিউডে কি মিমো কোনও গডফাদারের দেখা পেয়েছেন?
না, তবে খুব ভাল কিছু মানুষ পেয়েছি। যাঁরা দেখা হলে কথা বলেন। এতো তেমন কেউ নয়, বলে পাত্তাই দিল না—এমনটা হয় না।
এখন স্পেশালাইজ়েশনের যুগ। আপনি আলাদা করে কী ধরনের কাজের কথা ভাবছেন?
এখন কনটেন্টের যুগ। এখন দারুণ এক সুপারস্টারকে নিলেই যে ছবি হিট করবে, এমনটা নয়। বিশাল বাজেটের ছবি হলেই যে হিট করবে, এমনটা নয়। কাউকে না নিলে ছবি ফ্লপ, তেমনটাও নয়। কারণ এখন দর্শক ভীষণ শিক্ষিত। একটা সময় ছিল দর্শককে যা দেখাব, দর্শক সেটাই দেখবে। এখন ছবিটা পাল্টে গিয়েছে। এখন দর্শকদের বোকা বানানো যাবে না। এখন দর্শকেরা ওয়ার্ল্ড সিনেমার বিষয় সজাগ। হাতের মুঠোয় বিশ্ব, ফলে যা খুশি তা-ই বানিয়ে হিট তকমা পাওয়ার আশা এখন বৃথা। চলতি বছরের ছবিটাই দেখুন, সব ছবি কি বিশাল হিট হয়েছে বলিউডে? তা বলে কি বাজেট-স্টারের খামতি ছিল? নয়। এখন জনপ্রিয় নয়, ভাল শব্দটা প্রযোজ্য, ভাল গল্প, ভাল অভিনেতা, ভাল কাজ দর্শক ফেরাবে না। এটা আমার বিশ্বাস। আমিও তেমনটাই চেষ্টা করছি, একটু নতুন কিছু করার।
টলিউডের তাহলে খামতি কোথায়?
আমার মনে হয় দূরদর্শিতার অভাব ঘটছে। এটা বলিউডে নেই। আমি তো কাজ করতেই এসেছি, কাজ করতেই চাই। টলিউডে ভাল ছবি হোক, আমার কাজের সুযোগ আসুক। আমি চারটে ভাল কাজ চাই, এটাই তো চেয়েছিলাম আমি। আমি মাটিকে ভুলতে পারি কি? তবে এই প্রসঙ্গে কয়েকটা কথা বলি, আমরা খুব সহজে দর্শকদের দোষ দিয়ে থাকি।
দক্ষিণে কেরিয়ার তৈরির ছবিটা ঠিক কেমন?
বলিউড দিয়ে শুরু করি, আমাদের এত ক্ষমতা, আমরা চাইলেই হলিউডের মত একটা ছবি বানাতে পারি—এই ভাবনাটাতেই সমস্যা। মানে আমি নিজের মাটিকে ভুলে গেলাম। দক্ষিণ এটা করে না। তুমি ওদের যে কোনও বড় ছবি দেখ, তুমি তাতে গ্রামের স্বাদ পাবে পাবে। এটা বলিউড ধরে রাখতে পারছে না। বাংলার ‘আনন্দমঠ’ নিয়ে ওরা ভাবছে। নতুনদের কাজ দেওয়ার ক্ষেত্রে দক্ষিণ কতটা আলাদা, তার প্রমাণই তো ‘কেজিএফ ২’-র এডিটর। মাত্র ১৯ বছরের একজন ইউটিউবারকে দিয়ে এই কাজটা করানোর সাহস আমাদের ইন্ডাস্ট্রি দেখাবে বলে তোমার মনে হয়? অথচ ওরা পেরেছে।
এখন নতুনরা কেমন কাজ করছে মিউজ়িক জগতে?
এক কথায় ভাল, বেশ ভাল। এখন তো অনেকটা মিউজ়িকই রিমেকে ডুবে রয়েছে, তার মধ্যে থেকেই বেশ কিছু অরিজিল্যাল কাজ সকলের নজরে আসছে। প্রশংসিতও হচ্ছে। এভাবেই ভাল কাজ হোক, আরও কাজ হোক। তবেই না ইন্ডাস্ট্রিতে গতি থাকবে।